সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উড়াল সড়ক : স্মার্ট যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:৪৩ অপরাহ্ন, ৩রা সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে উড়াল সড়কের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি টোল পরিশোধ করে সড়ক ব্যবহার করেছেন। দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় তৈরি হলো নতুন মাইলফলক। ২ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বিকেল সাড়ে তিনটায় বিমানবন্দর এলাকার কাওলায় ফলক উন্মোচন করে তিনি সড়কে উঠে ফার্মগেট প্রান্তে এসে নামেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক, বৃত্তাকার সড়কসহ একগুচ্ছ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে। এই সব প্রকল্প দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। উড়ালসড়ক সেই পরিকল্পনারই একটি অংশ।

ঢাকা পৃথিবীর মেগা শহরের মধ্যে অন্যতম। যানজটে নাকাল শহরবাসী। নগরবাসিকে স্বস্তি দিতে তৈরি করা হয়েছে উড়াল সড়ক। যানজট এড়িয়ে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের যানবাহনের যাতায়াত নিশ্চিত করতে চালু করা হয়েছে দ্রুত গতির প্রথম উড়াল সড়ক (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে)। উন্নত দেশের মতো টোল পরিশোধ করে চার লেনের এই সড়ক ব্যবহার করা যাবে। টোল প্লাজা ছাড়া কোথাও যানবাহন থামানোর সুযোগ না থাকায় উড়াল সড়কে যানজটমুক্ত যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালি পর্যন্ত দ্রুতগতির উড়াল সড়কের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। র‌্যাম্পসহ দৈর্ঘ্য ৪৭ কিলোমিটার। পুরো উড়াল সড়কে ৩১টি স্থান দিয়ে যানবাহন উঠানামা করার (র‌্যাম্প) ব্যবস্থা থাকছে। এর মধ্যে ১৫টি ওঠার জন্য এবং নামার জন্য ১৬টি র‌্যাম্প। ঢাকা বিমানবন্দর, কুড়িল, আর্মি স্টেডিয়াম, সৈনিক ক্লাব, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এভিনিউ, বিজয় সরণি, সোনারগাঁও মোড়, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, শনির আখড়া ও পলাশী মোড় থেকে উঠবে যানবাহন। 

অপরদিকে বিমানবন্দর, কুড়িল, সেনানিবাস, আর্মি স্টেডিয়াম, সৈনিক ক্লাব, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এভিনিউ, সোনারগাঁও মোড়, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, শনির আখড়া, পলাশী মোড় ও ফার্মগেট দিয়ে যানবাহন বের হবে। যানবাহনের টোল পরিশোধের জন্য টোল প্লাজা রয়েছে ১১টি। পুরো পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। বর্তমানে চালু হওয়া কাওলা থেকে তেঁজগাও অংশ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ১২ মিনিট। আগামী বছরের জুন মাসে পুরো অংশ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে। উড়াল সড়কে বাস, মিনিবাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, জিপ, পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ চলাচল করতে পারবে। কোনো প্রকার দুই কিংবা তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। পথচারীদের পায়ে হাঁটারও কোনো ব্যবস্থা নেই। এক্সপ্রেসওয়েতে সব ধরনের যানবাহন চলবে না, শুধু দ্রুতগতির গাড়িই চলবে। এবং প্রতিটি যানবাহন নির্দিষ্ট গতিতে চলবে। যানবাহন এক্সপ্রেসওয়েতে থামানোর কোনো সুযোগ নেই। থামাতে হলে নির্দিষ্ট লেন বা র‌্যাম্প ব্যবহার করতে হবে।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের (পিপিপি) ভিত্তিতে দ্রুত গতির উড়ালসড়ক বাস্তবায়ন করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগ। সরকারের পক্ষে সেতু বিভাগ জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও পরামর্শক নিয়োগের কাজ করেছে। মোট ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ ব্যয় করেছে থাইল্যান্ড ও চীনের তিনটি প্রতিষ্ঠান। থাইল্যান্ড ভিত্তিক ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (৫১ শতাংশ), চায়না ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (৩৪ শতাংশ) ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড (১৫ শতাংশ) যৌথভাবে প্রকল্পটি নির্মাণ করে।

বাকি ২৭ ভাগ ব্যয় করেছে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুসারে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টোল থেকে আয়কৃত মুনাফা ও পুঁজি তুলে নিবে। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে মোট ২৫ বছরের চুক্তি ছিল। নির্মাণকাজের সাড়ে তিন বছর বাদ দিয়ে সাড়ে ২১ বছর টোল আদায় করবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। তারপর উড়ালসড়কটি সম্পূর্ণ রূপে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানায় হস্তান্তরিত হবে।

উড়াল সড়কের কারণে বদলে যাবে ঢাকার দৃশ্যপট। রাজধানীর যানজট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন  করবে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হলে দিনে অন্ততপক্ষে ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। কোনো প্রকার সিগন্যাল না থাকার কারণে দ্রুতগতিতে নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে পারবে যানবাহন। এতে করে মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। পরিবহন খরচও কমে আসবে। ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলার সাথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পণ্য পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো এবং পদ্মাসেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের যানবাহন সরাসরি ঢাকা প্রবেশ না করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। রপ্তানি পণ্য দ্রুত চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পৌঁছাতে পারবে। যার কারণে এই উড়ালসড়ক দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে মহাসড়কে একটানা নিরবিচ্ছিন্নভাবে যান চলাচল সম্ভব নয়। সড়কে রয়েছে অসংখ্য হাটবাজার ও মোড়। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোকে এক্সপ্রেসওয়ে করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের প্রথমটি মহাসড়ক ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। এটি মাটির উপর দিয়ে তৈরি। আর দেশের প্রথম উড়াল সড়ক হলো বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালি এক্সপ্রেসওয়ে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরো উড়াল সড়কের নির্মাণ চলমান রয়েছে।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে  উড়াল সড়কটি নতুন দিগন্ত খুলে দিবে। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিবে।

তাপস হালদার : সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ 

ইমেইল : haldertapas80@gmail

আই. কে. জে/


তাপস হালদার উড়াল সড়ক

খবরটি শেয়ার করুন