শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৈনট ঘাট

কক্সবাজারের ছোঁয়া যেখানে

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৪:০০ অপরাহ্ন, ৮ই জুলাই ২০২৩

#

মৈনট ঘাটের দর্শনার্থীর - ছবি: সংগৃহীত

বেশ কয়েক বছর ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার পদ্মা পাড়ের ‘মৈনট ঘাট’ খ্যাতি পেয়েছে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে। প্রতিদিন বিকেলে তাই এখানে ভ্রমণ পিপাসুদের ভীড় জমে ওঠে। রাজধানী ঢাকা আর আশেপাশের দূরদূরান্ত থেকে ঘুরতে আসেন পদ্মাপাড়ের এই দীর্ঘ চর এলাকায়।

অনেকেই মতেই এখানে এলে সমুদ্রসৈকতের ছোঁয়া মেলে। ভ্রমণ পিয়াসীরা এখানে এসে ঘুরাঘুরি, জলকেলি, সেলফিতোলা আর মচমচে ইলিশ ভাজি খাওয়ার আনন্দে মেতে উঠেন। এককথায় প্রকৃতির এক অন্যরকম অপরুপতার স্পর্শ আছে এখানে।

বিকেল হলেই মৈনট ঘাট কোলাহলময় হয়ে ওঠে। মানুষে মানুষে ছেয়ে যায়। পদ্মার উত্তাল ঢেউ, দিগন্ত ছুঁয়ে থাকা রাশি রাশি জল, দূরে ছুটে চলা ইঞ্জিনচালিত নৌকা, স্পীড বোট-এর ঝাপাঝাপি—এসব নাগরিক মনে কিছুটা হলেও আনন্দ আনে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য দোহারের মৈনট ঘাট তাই এখন বাড়তি আনন্দই বটে। প্রতিদিনই অজানা-অচেনা অনেক লোক এখানে বেড়াতে আসে। অনেকেই পানিতে নেমে আনন্দে মত্ত হন। দীর্ঘ চরভূমিতে অনেকেই হাঁটাহাঁটি করে, ছবি তুলে নাগরিক জীবনের একগেয়েমির মাঝে বৈচিত্র্যময় জীবনের সন্ধান করেন।

মৈনট ঘাট কিছুই নয়। এককালে এখানে কেবলই মানুষ পারাপারের ঘাট ছিল। ঢাকা আর ফরিদুপরের মানুষের যোগাযোগের পুরনো সেতুবন্ধন এই ঘাট। এই ঘাট দিয়ে পদ্মার জলরাশি পাড়ি দিয়ে ঢাকা আর ফরিদপুরের মানুষ এপার ওপার করত। ঢাকা জেলার মানুষেরা এই ঘাট দিয়ে ফরিদপুরে যেত। আর ওপারের ফরিদপুর জেলার মানুষেরা এপারে আসত। ওপারে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা। ঐ দূরে চোখ মেললে জলরাশি পেরিয়ে চরভদ্রাসনের চিহ্ন দেখা যায়।


কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ি

কালের বিবর্তন আর তটিনী পদ্মার ভাঙাগড়ার খেলায় সেই পুরনো মৈনট ঘাটের কোল ঘেষে জেগে উঠেছে বিরাট এক চর। এই চরকে এখন সমুদ্রের বেলাভূমির মত লাগে। এখানেই যত সৌন্দর্য, এখানেই যত আনন্দ। চরটা বেশ লম্বা। নেটিজেনরাই এই চরের সন্ধান জানিয়েছে মানুষকে। জনপ্রিয় করেছে। আজ থেকে ৭-৮ বছর আগে এখানে ভ্রমণ পিয়াসীরা আসতে শুরু করে। এরাই প্রথমে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়াতে এই ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ প্রকাশ করতে থাকে। এভাবেই মৈনট ঘাট মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে উঠে।

ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আসলেই মৈনট ঘাট এখন মিনি কক্সবাজার। বিশেষ করে রাজধানীর ভ্রমণপিপাসু তরুণ-তরুণীরা এখানে এসে মিনি কক্সবাজারের স্পর্শ নিতে ভুল করেন না। মানুষের ব্যাপক আনাগোনার কারণে এখানে অনেক ব্যবসাপাতিও জমে উঠেছে। ছোট ছোট খাবার হোটেল, চায়ের দোকান, ফুচকা-চটপটির দোকানের অভাব নেই। আর ঐ যে পড়ন্ত বিকেলে মনোরম পরিবেশে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। আবার ছাউনি দেওয়া নৌকাতে চড়ে ভ্রমণপিপাসু নদী দেখার লোভ সামলাতে পারেন না। অনেকেই স্পিডবোট নিয়ে নদীবক্ষে ঘুরেন। এদিকে নদীর সৌন্দর্য আর একান্ত আপনে পদ্মার ফেউ উপভোগ করার জন্য কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের মত চেয়ারও ভাড়া পাওয়া যায়। পা এলিয়ে আপন মনে পদ্মার জলরাশির ঢেউ উপভোগ করতে পারবেন। অনেকেই জানিয়েছেন কেবলই একটু বাতাসের দোলা খেতে, পদ্মার শোভা দেখতে এখানে ছুটে আসেন।

মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণেই মৈনট ঘাট বড় বেশি পরিচিতি পেয়েছে। তবে মৈনট ঘাটের অনেক দুঃসংবাদও আছে। এর আগে বেশ কয়েকজন বেড়াতে এলে এখানে মারা যান। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ সাঁতারে দক্ষ না হয়েই পদ্মায় নেমে পড়েন। ফলে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গতবছর বুয়েটের শিক্ষার্থীও এখানে পানিতে পড়ে মারা যান।


হাসনাবাদ জপমালা রানির গির্জা

মৈনট ঘাটে বেড়াতে গেলে পানিতে না নামা সবচেয়ে উত্তম। কেননা পদ্মাতে সবসময়ই তীব্র স্রোত থাকে। এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। যারা সাঁতার জানেন না, তাদের কোনোভাবেই পানিতে নামা উচিত নয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা এখানে যাবেন তাদেরকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

আরো পড়ুন: ঢাকার ভেতরেই এক টুকরো গ্রাম, ঘুরে আসতে পারেন শান্তি গ্রামে

রাজধানী ঢাকা থেকে গুলিস্তান এবং মোহাম্মদপুর দিয়ে সহজেই মৈনট ঘাটে যাওয়া যায়। মোহাম্মদপুর থেকে বসিলা ব্রিজ দিয়ে আটি বাজার হয়ে রামেরকান্দি, রোহিতপুর, নবাবগঞ্জ, কার্তিকপুর, জয়পাড়া, বাঁশতলা হয়ে দ্রুত মৈনট ঘাটে চলে যাওয়া যায়। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে মোহাম্মদুপুর হয়ে দেড়ঘন্টার মধ্যে মৈনট ঘাটে এ পৌঁছানো সম্ভব। ওখানে ঘুরাঘুরি করে কার্তিকপুর বাজার থেকে ঐতিহ্যবাহী দই-মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরতে পারবেন। আবার হাতে বেশি সময় থাকলে নওয়াবগঞ্জের জমিদার বাড়িও দেখতে পারবেন। যাওয়া-আসার পথে বান্দুরাতে তুলশিখালি-মরিচাতে মহাকবি কায়কোবাদ সেতুও আপনার দেখা হবে। আবার তুলশিখালি পার হওয়ার পর বিশাল আড়িয়াল বিলে ফুটে থাকা মনোমুগ্ধকর শাপলা আপনার হ্নদয়ে অন্যরকম আলোড়ন তুলবে।

এম এইচ ডি/

দোহার উপজেলা মৈনট ঘাট ভ্রমণ মিনি কক্সবাজার ইলিশ ভাজি রাজধানী ঢাকা

খবরটি শেয়ার করুন