শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কম্বোডিয়ায় নির্বাচন নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দুই মাস পর তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:৫১ পূর্বাহ্ন, ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

কম্বোডিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের (ডানে) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যাল্ডের বৈঠক। ছবি : সংগৃহীত

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি- এমন সুর তুলে দুই মাস আগে কম্বোডিয়ার কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্থগিত করে কম্বোডিয়াকে দেয়া সহায়তা কর্মসূচিও। এখন আবার কম্বোডিয়ার সেই একই সরকার যুক্তরাষ্ট্রের চোখে হয়ে গেছে ‘শুদ্ধ’। তাই নিষেধাজ্ঞা দুই মাস পর তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র। সেইসঙ্গে কম্বোডিয়াকে অর্থ সহায়তাও দিচ্ছে ।

কম্বোডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ এবং কিছুদিন যেতে না যেতেই তা আবার প্রত্যাহার করে নেয়ার বিষয়ে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়েন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।   

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি যেটি তাদের পক্ষে যায় সেটিই শুদ্ধ? মানবতা ও গণতন্ত্রের কোন সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করছে দেশটি?

গত ২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনে কম্বোডিয়ার ক্ষমতাসীন দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সেখানকার কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

দেশটি তখন দাবি করে, কম্বোডিয়ায় গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যারা গণতন্ত্রের মর্যাদা নষ্ট করার মতো পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িত, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বিবৃতি দিয়ে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কম্বোডিয়ার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সিপিপি দলের কোনো শক্ত বিরোধী দল নির্বাচনে ছিল না।

বিরোধীদল ছাড়া নির্বাচনের অজুহাত তুলে গত জুলাইয়ে কম্বোডিয়ার কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। স্থগিত করা হয় কিছু সহায়তা কর্মসূচি। কারণ হিসেবে সেসময় দেশটি জানায়, কম্বোডিয়ার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের দল সিপিপি’র বিরুদ্ধে মাঠে শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল ছিল না। 

হুন মানেত কম্বোডিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক শাসক হুন সেনের ছেলে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। অধিবেশনের সাইডলাইনে তার সঙ্গে বৈঠক হয় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যাল্ডের। এরপরই আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। কম্বোডিয়াকে ১৮ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেয় দেশটি। ইউএসএইড-এর মাধ্যমে এ সহায়তে দেয়া হবে। এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করে কম্বোডিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কাছে। জবাবে মিলার বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জানাবেন। অথচ এই ম্যাথিউ মিলারই কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও অর্থ সহায়তা বন্ধের বিষয়টি বিবৃতি দিয়ে গোটা বিশ্বকে জানিয়েছিলেন।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে জুলাইয়ে যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ মনে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের, দুই মাস যেতে না যেতেই কোন জাদুমন্ত্রে সেটি তাদের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ হয়ে গেলো?  তবে কি যা তাদের মনমতো সেটিই শুদ্ধ, আর মর্জি মতো না হলে সেখানেই জুড়ে দেবে অবৈধ কিংবা পক্ষপাতের তকমা?

বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরেও চলছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খেলা। যেকোনো দেশের নাগরিকদের ভিসা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইনটি থ্রি সি নামে পরিচিত। গেলো ২৪ মে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে কেউ বাঁধা সৃষ্টি করলে তাকে পড়তে হবে ভিসা নীতির আওতায়। তালিকায় রাখার কথা বলা হয়, সরকারীদল ও বিরোধীদলের রাজনৈতিক নেতা, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। এর চার মাসের মাথায় গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে সেটি কার্যকরের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এর দুদিনের মাথায় ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, গণমাধ্যম ও এর কর্মীরাও পড়তে পারেন ভিসা নীতির আওতায়।

পরদিনই আবার অন্য কথা বলেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তিনি জানান, গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা নেই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র হরণের জন্য ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি পুঁজি করে সাম্প্রতিক গণতন্ত্রের সবক দেয়ার চেষ্টাকে পর্যবেক্ষকদের অনেকেই তুলনা করছেন রূপকথার শেয়ালের রুটি ভাগের সঙ্গে।

সূত্র : রেডিও ফ্রি এশিয়া

এসকে/

যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা কম্বোডিয়া প্রত্যাহার

খবরটি শেয়ার করুন