শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যারেন জ্যাকবসন ।। দ্য জিপিএস গার্ল

ডেস্ক নিউজ

🕒 প্রকাশ: ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন, ১৫ই এপ্রিল ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

ক্যারেন জ্যাকবসন; নামটা অপরিচিত মনে হলেও মানুষটার কণ্ঠস্বর মোটেও আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। গুগল ম্যাপে যে নারীর কণ্ঠের নির্দেশনা পেয়েই আমরা শপিং মল থেকে শুরু করে শহরের অলিগলির রাস্তা খুঁজে পাই, তিনিই এই ক্যারেন। এই জিপিএস গার্ল বিষয়ে আজ আমরা জানব:

চেয়েছিলেন শিল্পী হবেন-

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ম্যাকে বেড়ে ওঠা ক্যারেনের বিখ্যাত হওয়ার গল্পের শুরুটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ব্রিটিশ-অস্ট্রেলিয়ান কণ্ঠশিল্পী অলিভিয়া নিউটন-জনের মতো হবেন। সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে হলিউডে পাড়ি দিয়ে নিউটন গান এবং অভিনয়—দুটিতেই বেশ নাম কামিয়েছিলেন। ক্যারেনের বয়স যখন সবে সাত তখন টেলিভিশনে অলিভিয়া নিউটনকে প্রথম দেখেই মনস্থির করেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন এবং গান গেয়ে অলিভিয়ার মতো সবাইকে মাত করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার আগে ক্যারেন নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করে দেন। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড কনজারভেটরিয়াম গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কণ্ঠস্বর অনুশীলন এবং পিয়ানো বাজানোয় নেন স্নাতক ডিগ্রি। পিয়ানোতে জ্যাজ বাজানো নিয়ে বিস্তর পড়াশোনাও করেন। কণ্ঠ ছিল বরাবরই আকর্ষণীয়, তবে পেশাদার সংগীতে কোনোভাবেই জায়গা পাচ্ছিলেন না ক্যারেন। তত দিনে অস্ট্রেলিয়ার একটি টেলিভিশনে ‘গুড মর্নিং অস্ট্রেলিয়া’ বা ‘আই ডু আই ডু’র মতো প্রগ্রামে পারফর্মও করে ফেলেন। কয়েক শ বিজ্ঞাপনেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন অল্প সময়ে। পেশাদার সংগীতে নিজেকে যুক্ত করতে একটা সময় নিজের শহর ছেড়ে সিডনিতে বসবাস শুরু করেন ক্যারেন। মিউজিক্যাল থিয়েটার ‘বাডি—দ্য বাডি হোলি স্টোরি’তেও মাঝেমধ্যে দেখা মিলত তাঁর।

৫০ ঘণ্টার রেকর্ডিং-

অস্ট্রেলিয়ার পাট চুকিয়ে ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বসবাস শুরু করেন ক্যারেন, কাজ খুঁজতে থাকেন শোবিজজগতে। কাজের পাশাপাশি শখের বশে গানের রেকর্ডিংও করতেন। এভাবে চলে গেল প্রায় দুই বছর। ২০০২ সালে এসে একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। কাজটা ছিল ভয়েসওভার আর্টিস্টের। নিজের কণ্ঠের ওপর ভরসা রেখেই আবেদন করেন ক্যারেন। কিছুদিনের মধ্যে ডাকও পেয়ে যান। আর ইন্টারভিউ হিসেবে প্রায় ৫০ ঘণ্টা ধরে একটি স্টুডিওতে ক্যারেনের কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং করা হয়। টেক্সট-টু-স্পিচ ভয়েস সিস্টেমের সামনে বসে ক্যারেন অনর্গল কথা বলতে শুরু করেন। তবে তাঁর সব কথা ঠিক কী কারণে রেকর্ড করা হচ্ছে তা একবারও জানানো হলো না তাঁকে। ক্যারেন অবাক হলেও খুব বেশি কৌতূহল দেখালেন না। ইন্টারভিউ শেষ করে এসে ক্যারেন তাঁর পুরনো কাজেই মন দিতে শুরু করেন। এভাবে অতিবাহিত হয়ে যায় অনেক দিন। ওই বছরই জিপিএস প্রযুক্তিচালিত বিভিন্ন যন্ত্রে ক্যারেনের কণ্ঠস্বরকে বেছে নিতে শুরু করে বেশ কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান। ক্যারেন তত দিন তাঁর ইন্টারভিউয়ের কথা একপ্রকার ভুলতেই বসেছেন। হঠাৎ একদিন এক বন্ধু জানান, জিপিএস ডিভাইসে তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। তখনই ক্যারেন বুঝতে পারেন ৫০ ঘণ্টা কণ্ঠ রেকর্ডিংয়ের আসল কাহিনি। তত দিনে সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে ক্যারনের নাম হয়ে যায় ‘ড্যাশবোর্ড ডিভা’ বা ‘গ্যাজেট গার্ল’।

দ্য জিপিএস গার্ল-

গ্যাজেট গার্ল হয়েই থেমে থাকেননি ক্যারেন। নোরা জোনস, সিন্ডি লপার, ডেবরা কক্সের মতো বিখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে কাজ শুরু করে দেন তিনি। ‘ডসন’স ক্রিক’-এর মতো জনপ্রিয় টেলিসিরিজেও গান গেয়ে পরিচিতি পান।  ‘দ্য জিপিএস গার্ল’ নামে স্বত্ব কিনে নিজের নামকে করেছেন একটি ব্র্যান্ড। অ্যাপলের ডিভাইসে ‘সিরি’র কণ্ঠটাও তাঁরই দেওয়া। ক্যারেন এখন শুধু কণ্ঠশিল্পীই নন, একজন লেখক ও হাজার হাজার নারীর অনুপ্রেরণা। মাঝেমধ্যেই অনুপ্রেরণাদানকারী কথা বলে আবেগে আপ্লুত করেন লাখ লাখ মানুষকে। তাঁর লেখা ‘দ্য জিপিএস গার্ল’স রোড ম্যাপ ফর ইয়োর ফিউচার এবং রিক্যালকুলেট-ডিরেকশনস ফর ড্রাইভিং পারফরম্যান্স সাকসেস’—বই দুটিও বেশ সাড়া ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠকদের মধ্যে।

এমএইচডি/

জিপিএস গার্ল কণ্ঠশিল্পী গ্যাজেট গার্ল নারী গুগল ম্যাপ

খবরটি শেয়ার করুন