সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে: ইউএনএইচসিআর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, ১৮ই অক্টোবর ২০২৩

#

দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় একটি ভবন ধ্বংসের পর চলছে উদ্ধারকাজ ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। অসহায় চোখে উঁকি দিচ্ছেন কংক্রিটের চাঁইয়ের ভেতরে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজছেন নিচে চাপা পড়া সন্তান ও মাকে। এ চিত্র ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফাহ এলাকার। মঙ্গলবারও (১৭অক্টোবর) সেখানে ইসরায়েলের বোমা হামলায় বহু নারী-শিশুসহ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

অবরুদ্ধ গাজায় এভাবে বেসামরিক মানুষের ওপর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে বলে মনে করছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর। হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাবিনা শামদাসানি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজায় প্রতিদিন যুদ্ধসংক্রান্ত আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

গাজার উত্তরাঞ্চলের ১১ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার যে নির্দেশ ইসরায়েল দিয়েছে, তার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করে লোকজনকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে বলে মনে করছেন রাবিনা শামদাসানি। ওই নির্দেশের পর উত্তর গাজা থেকে পালাতে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৭অক্টোবর) সংঘাতের ১১তম দিনে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজার মানুষের মরদেহ আটকে আছে। তবে সেখান থেকে তাদের বের করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। খালি হাতেই ভবনের ধ্বংসাবশেষ সরানোর চেষ্টা করছেন ফিলিস্তিনিরা।

মঙ্গলবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গাজায় ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত ১২ হাজার ৫০০। তাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের হাতে ৬১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। অপর দিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাদের ঘেরাওয়ের মধ্যে থাকা গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানিসংকট চরমে পৌঁছেছে। হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও রক্তের অভাবে চলছে হাহাকার। জাতিসংঘের খাদ্য বিতরণকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ রেশনের খাবার পাচ্ছেন না। পান করতে হচ্ছে দূষিত পানি। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, খুব শিগগিরই উপত্যকাটিতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে গাজার ২২ লাখ বাসিন্দার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে চলছে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি দেশ এ লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও সোমবার তেল আবিবে ত্রাণসহায়তা চালু নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে সফলতা আসেনি। মিসর সীমান্তের রাফাহ ক্রসিংয়ে অপেক্ষায় থাকা ত্রাণের গাড়িগুলো মঙ্গলবারও গাজায় ঢুকতে পারেনি। এরই মধ্যে গাজায় আহতদের পাশে দাঁড়াতে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকাটিতে প্রবেশের সুযোগ চেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তুলেছিল রাশিয়া। তবে ভোটাভুটিতে সেটি পাস হয়নি। মঙ্গলবার ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় চারটি দেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ চার দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে দাঁড়ায়। ভোটদানে বিরত ছিল ছয়টি দেশ।

ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল বাহিনীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে লেবানন সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো খালি করেছে ইসরায়েল। সেখানে তারা মোতায়েন করেছে ট্যাংক। মঙ্গলবার দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, সীমান্তে তাদের দুটি সেনাচৌকিতে হামলা করে হিজবুল্লাহ। জবাবে দক্ষিণ লেবানন লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। এ ছাড়া লেবানন থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশের চেষ্টার সময় চারজনকে হত্যা করা হয়েছে।

ইসরায়েল গাজায় হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করলে পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় যেসব কর্মকাণ্ড করবে, তার পরিণতি অবশ্যই তাদের ভোগ করতে হবে।

চলমান সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রশাসন বলছে, বাইডেনের সফরের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের প্রতি তাদের সংহতির বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সফরকালে গাজায় সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে এবং গাজাবাসীকে নিরাপদে সরে যাওয়ার একটি ‘নিরাপদ পথ’ চালুর বিষয়ে আলোচনা করবেন বাইডেন।

ইসরায়েল সফর শেষে জো বাইডেনের জর্ডানের রাজধানী আম্মানে যাওয়ার কথা। সেখানে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

একে/ 


হামলা গাজা ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ ইউএনএইচসিআর

খবরটি শেয়ার করুন