সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনা ঋণফাঁদে কি পড়তে চলেছে বাংলাদেশ?

ডেস্ক নিউজ

🕒 প্রকাশ: ১২:৫৬ অপরাহ্ন, ২৫শে মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ায় চীন থেকে বিনিয়োগ গ্রহণের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। পাকিস্তানের পর বাংলাদেশই চীন থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ পণ্য আমদানি করে। ফলে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে চীন। 

বাংলাদেশের ভিশন-২০৪১ সফল করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে চীন। তবে চীন থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থায়নের ফলে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তাদের আশংকা শ্রীলঙ্কার পর এবার কি চীনের ঋণফাঁদে জর্জরিত হতে চলেছে বাংলাদেশ!

ঋণফাঁদ কূটনীতি, চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়া সবচেয়ে পরিচিত একটি বিষয়। চীন এবং পশ্চিমা বিশ্বগুলোর দ্বন্দ্বে এই ঋণফাঁদ কূটনীতি আরো পরিচিত হয়ে উঠেছে মানুষের কাছে। 

চীন রাজনৈতিক বিষয়ে সমাজতন্ত্রকে অনুসরণ করলেও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমাজতন্ত্রের ধারেকাছেও যায় না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই ভালো। 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশের বহিরাহত অর্থায়নের প্রয়োজন রয়েছে। তাই অনুকূল পরিস্থিতিতে বাহ্যিক অর্থায়নের বিকল্প খুঁজছে বাংলাদেশ। পদ্মাসেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাখ্যান এবং চীনের সহযোগিতার পর চীনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে দেশটি।

১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক একবিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত বাণিজ্য চুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বিআরআই শুরুর আগে এবং পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দুটি ভিন্ন পর্যায়ের অভিজ্ঞতা লাভ করে। ২০১০ সালের পর সম্পর্কটি কৌশলগত অংশীদারিত্বে পরিণত হয়। এসময় বেশ কয়েকটি বাণিজ্য, ট্রানজিট ও প্রতিরক্ষা ক্রয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দুটি দেশ। উভয় দেশই মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিপুল বাণিজ্য-ঘাটতি নিরসনে কাজ করছে।

বাংলাদেশ ও চীন সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ আলাদা হলেও তারা তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় পরস্পরের কাছাকাছি এসেছে। অংশীদারদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে চীনের অ-হস্তক্ষেপ নীতি বাংলাদেশকে মুগ্ধ করেছে। উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন, যা চীনই বাংলাদেশকে প্রদান করতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশের সস্তা শ্রমশক্তিকে চীন কাজে লাগাতে পারছে বেশ ভালোভাবেই। তবুও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের ভূমিকার প্রশ্ন তুলে সমালোচকদের নিন্দা চলমান।

বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, কোনও দেশের বৈদেশিক ঋণ মোট জিডিপির ৪০ শতাংশ অতিক্রম করলে সে দেশ বিপজ্জনক স্থানে রয়েছে বলে বোঝা যায়। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ স্থানে রয়েছে, কারণ বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ১৫ শতাংশ। 

সুতরাং বাংলাদেশ চীনা ঋণফাঁদে পড়ছে, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বিশ্বব্যাংক থেকে ৩৮ শতাংশ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ২৪.৫ শতাংশ, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সি থেকে ১৭ শতাংশ, চীন থেকে ৬.৮১ শতাংশ, রাশিয়া থেকে ৬.১৪ শতাংশ এবং ভারত থেকে ১.৩ শতাংশ। এ তথ্য স্পষ্ট দেখায় যে বাংলাদেশ সঠিক পথেই চলছে।

আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের কৌশলগত সুবিধার ফলে বাংলাদেশ দ্রুত চীনের দিকে ঝুঁকেছে। ফলে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ভেবেছেন বাংলাদেশ চীনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের কূটনৈতিক পরিস্থিতি এটা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ কখনোই চীনের প্রতি এতোটা নির্ভরশীল হয়নি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে চীনের অর্থায়নে পরিচালিত সব প্রকল্পই আর্থিকভাবে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

Important Urgent

খবরটি শেয়ার করুন