শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালিত

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৩৫ অপরাহ্ন, ১৫ই অক্টোবর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শোক দিবস পালিত হয়েছে। 

এ উপলক্ষে রোববার (১৫ অক্টোবর) ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল সাড়ে ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শোক র‌্যালি বের করে জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। 

পরে জগন্নাথ হলের অক্টোবর স্মৃতি ভবনস্থ টিভি কক্ষে উপাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজমুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোল্লা মো. আবু কাওছার, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নিবাস চন্দ্র মাঝিসহ হলের ছাত্র নেতারা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য রাখেন। রেজিস্টার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হলের প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অ্যালামনাইবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নিহতদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৫ অক্টোবরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার সুরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের সর্বদা সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে। এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সবাইকে দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের সবাইকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, মূল্যবোধ, চেতনা ও দায়িত্বের জায়গা দুর্বল থাকলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। যখনই দেশে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তখনই বিপর্যয় নেমে আসে। অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ইতিবাচক মূল্যবোধসম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য উপাচার্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালনের মাধ্যমে আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বর্তমান প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি।

দিবসটি পালন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল, হোস্টেল ও প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বাদ আছর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআ'সহ সব হল মসজিদে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হবে। এছাড়া নিহতদের তৈলচিত্র ও তৎসম্পর্কিত দ্রব্যাদি প্রদর্শন করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর। তখন সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অগণতান্ত্রিক শাসনবিরোধী প্রতিবাদে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঐ সময় টিভি চ্যানেল হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশনই (বিটিভি) ছিল একমাত্র অবলম্বন। প্রতি মঙ্গলবারের মতো বিটিভিতে সেদিনও ছিল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ধারাবাহিক নাটক ‘শুকতারা’। জগন্নাথ হলের তৎকালীন অনুদ্বৈপায়ন ভবনের টেলিভিশন কক্ষে রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয় নাটক। এসময় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপজনিত কারণে রাজধানীর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যায় এবং প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়। ভবনটির ছাদ বৃষ্টির পানিতে নরম হয়ে যাওয়ায় আগে থেকেই বৃষ্টির পানি পড়ছিল। সে কারণে ভবন মেরামতের কাজ চলছিল। এর মধ্যেই দু-চার জন করে প্রায় ৪০০ ছাত্র এলে টেলিভিশন কক্ষ ভরে ওঠে।

রাত পৌনে ৯টার দিকে হঠাৎ ভবনটির ছাদ ধসে পড়ে। অধিকাংশ ছাত্রই সেদিন ছাদচাপা পড়েন। ওই দুর্ঘটনায় ২৬ জন ছাত্র, ১৪ জন অতিথি ও কর্মচারীসহ মোট ৪০ জন নিহত হন এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী ও অতিথি আহত হন।

সেই থেকে প্রতি বছর দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

এসকে/ 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ আগস্ট শোক দিবস

খবরটি শেয়ার করুন