সোমবার, ১লা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাবিতে প্রতিবন্ধী তরুণদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৮:২৩ অপরাহ্ন, ৭ই অক্টোবর ২০২৩

#

ছবি: সুখবর

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী যুবকদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ছাত্রসংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ফিজিক্যালি-চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) এর সেন্ট্রাল টিম লিডার নাজমুস সাকিব কর্তৃক আইভিএলপি ইম্প্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ বিজয়ী প্রকল্প  ‘Promoting Political Participation of Youth with Disabilities’ এর অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়েছে একটি অংশগ্রহনমূলক প্যানেল আলোচনা। 

প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিলো ‘Breaking Barriers: Accessible Political Engagement for Youth with Disabilities’। 

শনিবার (৭ই অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর চৌধুরী অডিটোরিয়ামে এই আলোচনা সভাটি অনুষ্টিত হয়। প্যানেল আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, নবগঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির সদস্য সচিব নাহিদ ইসলাম, ডাকসুর সাবেক নির্বাচিত সদস্য যোশিয় সাংমা চিবল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবির সদস্য সচিব উমামা ফাতেমা এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অটিজম বিষয়ক উপ-সম্পাদক আনোয়ারুল কবির দিপু। এই প্যানেল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন প্রকল্পের পরিচালক ও পিডিএফ এর টিম লিডার নাজমুস সাকিব। 

আলোচনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের গুরুত্ব উল্লেখ করে ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দীকী বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  জন্য ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন তবে ভেবে দেখতে হবে কোন ধরনের রাজনীতি দরকার। বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি পেশীশক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। এই ধরনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি করতে হবে। এসময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বৈষম্য দূর করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। 

গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব নাহিদ বলেন, সমাজ জীবনে রাজনীতি সকলের জীবনকে প্রভাবিত করে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ, তাদের বাদ দিয়ে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনীতির মাঠে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা খুব একটা উঠে আসেনা। রাজনীতিতে আমরা তাদের বক্তব্যগুলো শুনতে চাই। রাজনীতিতে যেমন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রবেশগম্যতা জরুরি। ঠিক তেমনি সমাজে মানবিক মর্যাদাসহ আনুষঙ্গিক নানা ইস্যুতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করাটাও জরুরি। 

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবির সদস্য সচিব উমামা ফাতেমা বলেন, আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে নারীরা আরো বেশি উপেক্ষিত অবস্থায় থাকে তাই আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্তির উপরে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং সকল পর্যারে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য সংঘাতমূলক রাজনীতি পরিহার করতে হবে। 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত উল্লেখ করে যোশীয় সাংমা চিবল বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ আছে সাংবিধানিকভাবে। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে আসা উচিত নাহলে তাদের দাবি বা কথাগুলোকে বলার মতো কেউ থাকবে না। বাইরে থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যাগুলো কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে রাজনীতিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  অংশগ্রহণ আগের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। এই ধারা অব্যহত থাকলে আগামীতে সংসদেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

ছাত্রলীগের অজিটম বিষয়ক উপ-সম্পাদক আনোয়ারুল কবির দিপু বলেন, রাজনীতি করা মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের প্রতিবন্ধকতা, সমস্যাগুলো সম্পর্কে ভালো জানবেন এবং তারাই এটা থেকে বের হয়ে আসার উপায়গুলো ভালোভাবে বলতে পারবেন। আমাদের মধ্যে বিদ্যমান যে চিন্তাচেতনা রয়েছে তা হলো- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কেন রাজনীতি করবে? তারা অন্যের সাহায্য নিয়ে চলবে। আমাদের এই চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আর ছাত্রলীগ এটা নিয়ে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এই আলোচনায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব, এবং স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় সেগুলো তুলে ধরেছেন। এছাড়াও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন যে ভোটদান ব্যবস্থা তাদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমুলক নয় এবং অনেকক্ষেত্রে এমন হচ্ছে যে তাদের ভোট অন্যের সাহায্য নিয়ে দিতে হচ্ছে।  

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সকল প্যানেলিস্ট তাদের দলকর্তৃক ইতিমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ এবং পরিবর্তনগুলো উল্লেখ করেছেন। তারা তাদের রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক অনুশীলনের মধ্যে প্রবেশগম্যতা এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। 

এই প্রকল্পের পরিচালক নাজমুস সাকিব বলেন, আমরা ছাত্র রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সাথে একটি প্রানবন্ত  এবং কার্যকর আলোচনা করেছি। আমি খুবই আশাবাদী যে এই আলোচনা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কিছু পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রবেশগম্যতা এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে অবদান রাখবে।

এছাড়া আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের সমন্বয়ক যোবায়ের হাসান শুভ্র, পিডিএফ এর ব্রাঞ্চ ম্যানেজমেন্ট কো-অর্ডিনেটর তানভীর আহমেদ তন্ময়, পিডিএফ এর ঢাবির ইউনিটের সভাপতি হৃদয় সরকার। এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। 

এছাড়া গত ৬ অক্টোবর প্যানেল আলোচনার আগে ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ৩৫ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার, নেতৃত্বের দক্ষতা, যোগাযোগ ক্ষতা এবং অন্তর্ভুক্তির জন্য গণতন্ত্রের উপর বিভিন্ন সেশন পরিচালিত হয়েছে। 

এসকে/ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি প্রতিবন্ধী পিডিএফ

খবরটি শেয়ার করুন