ছবি-সংগৃহীত
কেন্দুয়া উপজেলার একটি ঐতিহাসিক স্থান রোয়াইলবাড়ী। ‘রোয়াইল’ আরবী শব্দ। এর বাংলা অর্থ ‘ক্ষুদ্র অশ্বারোহী বাহিনী’। সুতরাং ‘রোয়াইলবাড়ি’ এর অর্থ দাঁড়ায় ‘অশ্বারোহী বাহিনীর বাড়ি’।
কালক্রমে রোয়াইলবাড়ি এখন একটি পুরো গ্রাম এবং সমগ্র ইউনিয়নের নাম। নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান। রোয়াইলবাড়ি দূর্গের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বেতাই নদী।
নেত্রকোণা জেলার অন্তর্গত কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে কেন্দুয়া ঢাকা সড়ক হয়ে প্রায় ১৩ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে বেতাই নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত পুরার্কীতি কেন্দুয়ার রোয়াইল বাড়ী।
গঠনানুযায়ী এটিকে মহাজাদপুরস্ত এবং গৌড়ের ১৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের সাথে তুলনা করেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এটাও ধারণা করেন যে, এটা সম্ভবত মুঘল আমলের কোনও সেনানায়কের বাসভবন থাকবে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এটি নির্মাণকালের কোনও তারিখ খচিত স্বর্ণলিপি আবিষ্কার করতে পারেনি।
এ প্রত্নতাত্ত্বিক দূর্গটির পশ্চিমে বেতাই নদী এবং অন্য তিনটি দিক পরিখা দ্বারা বেষ্টিত। দূর্গটির প্রারম্ভেই রয়েছে সিংহদ্বার টিবি এর অভ্যন্তরভাগ পূর্ব পশ্চিমে লম্বা। একটি ইটের প্রাচীর দ্বারা দু’অংশে বিভক্ত।
অংশ দুটির মধ্যে উত্তরেরটি অপেক্ষাকৃত বড়, পরিমাণে ৪৯৭ ফুট এবং আবার পূর্ব ও পশ্চিম দিক দিয়ে দ্বিতীয় বেষ্টনী প্রাচীর দ্বারা আবদ্ধ।
উত্তরাংশে রয়েছে একটি বুরুজ টিবি, সানবাঁধানো পুরুক ও একটি কবরস্থান। দূর্গটির দক্ষিণের অংশটিতে রয়েছে বার দুয়ারী টিবি। বেষ্টনী প্রাচীর এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পাথর।
১৯৯১-‘৯২ ও ‘৯২-৯৩’ অর্থবছরে দূর্গাভ্যন্তরে পরীক্ষামূলক খনন কার্য পরিচালনা করা হলে বুরুজ টিবিতে একটি লৌকিক ইমারতের কাঠামো এবং বার দুয়ারী টিবিতে মসজিদের ভূমি নকশা আবিষ্কৃত হয়।
দূর্গের উত্তর বেষ্টনী প্রাচীরের প্রাপ্ত সীমার উপর উত্তর-পশ্চিম কোণ হতে ১২৫ ফুট পূর্ব দিকে দূর্গের অভ্যন্তর ভাগের উত্তরাংশের উত্তর বাগুর মধ্যবর্তীস্থানে বুরুজ টিবিটির অবস্থান। খননের ফলে উন্মোচিত ৯৪‘´৬৯’ পরিমাপের ধ্বংসপ্রাপ্ত লৌকিক ইমারতের উচ্চতা দূর্গ-চত্বর হতে ২০ ফুট।
চূঁড়ায় আরোহনে ব্যবহৃত অক্ষত সিড়িঁটি আবিষ্কৃত হয় ইমারতটির দক্ষিণ পাশ দিয়েই কিন্তু চুঁড়া থেকে অবতরণের সম্ভাব্য স্থানটি ধ্বংসপ্রাপ্ত।
ইমারত কাঠামোটির চূড়াঁয় প্রথম নির্মাণ যুগের দুটি কক্ষের নির্দশন রয়েছে। এ কাঠামো থেকেই দূর্গের বাইরের উটের বেষ্টনী প্রাচীরের উৎপত্তি হয়েছে। এখানে খননের ফলে ৩টি স্তর উন্মোচিত হয়েছে এবং প্রাপ্ত প্রত্ন সম্পদের মধ্যে রয়েছে মৃৎ পাত্রের ভগ্নাংশ, পোড়া মাটির তেরাব এবং রঙ্গের প্রলেপযুক্ত ইট।
আরো পড়ুন: শীতে কাশ্মীরের চোখজুড়ানো স্বর্গীয় দৃশ্য
প্রতি সারিতে ৪টি করে দু’সারিতে ৮টি পাথরের পিলার ছিল যার কিছু অংশ এখনো বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়ানো রয়েছে। আর দেয়ালগুলো ৩‘-৬’ থেকে ৩‘-৮’ প্রশস্ত এবং ৬‘´৬’ চওড়া।
দেয়ালে প্লাষ্টারের আলামত পাওয়া যায়নি এবং দেয়ালের বহিরাবরণ পোড়া মাটির অলংকৃত ইট দ্বারা শোভিত ছিল। এর নির্মাণে পাতলা ইট ঝিনুক চুন ও বিশেষ ধরণের মসলা ব্যবহৃত হয়েছে।
মুঘল আমলে এটি ছিল একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রাচীন হিন্দু, বৌদ্ধ, সুলতানী আমল ও ইংরেজ আমলের প্রথম দিকেও এই স্থানের যথেষ্ট প্রাধান্য ছিল। ঐতিহাসিক নিদর্শন, কারুকার্য আর স্থাপত্য কীর্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেন।
এসি/ আই. কে. জে/