মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ভারতীয় ঋণচুক্তির ১০ প্রকল্প বাতিলের তথ্য সঠিক নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা *** সালমান শাহ, সোহেল চৌধুরী হত্যা: কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই *** সোনারগাঁও হোটেলে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে কেন চড় মেরেছিলেন সালমান *** যে প্রার্থীদের ভোট দিতে বললেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার *** ক্ষতি পোষাতে শনিবারও ক্লাস নেবেন শিক্ষকরা *** আন্দোলনরত শিক্ষকরা নবউদ্যমে শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন, আশা প্রধান উপদেষ্টার *** ২৯ বছর পর সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের *** সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি *** তরুণ-তরুণীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ দেবে সরকার *** শিক্ষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার, ফিরছেন ক্লাসে

সালমান শাহ, সোহেল চৌধুরী হত্যা: কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৪০ অপরাহ্ন, ২১শে অক্টোবর ২০২৫

#

ফাইল ছবি

নাম তার আজিজ মোহাম্মদ। ভাই তার বংশের উপাধি। নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি থাকার কারণে অনেকে তাকে গডফাদার মনে করেন। সাধারণত মাফিয়া ডন বা গডফাদারকে ভাই ডাকেন তাদের অনুগতরা। তামিল বা গুজরাটি অনেক সিনেমায় এ রকম দেখা গেছে।

কিন্তু নব্বই দশকের চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এবং সালমান শাহকে হত্যায় অভিযুক্ত আজিজ মোহাম্মদ ভাই কি সত্যি ডন বা গডফাদার?

আদালতের নির্দেশে চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর গতকাল সোমবার (২০শে অক্টোবর) হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তার স্ত্রী সামিরা হক, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসিসহ আরও কয়েকজনকে। এর সূত্র ধরে আবার আলোচনায় উঠে এসেছে আজিজ মোহাম্মদের নাম।

যদিও কাগজ কলমে আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন ব্যবসায়ী, ব্যবসা আছে বৈধ ও অবৈধ। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসে। তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভুত। ধনাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে।

১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় ঢাকার আরমানিটোলায়। পারিবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেও শুরু করেন ব্যবসা। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।

এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যাবসা। আবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তিনি সার্ক চেম্বারেরও আজীবন সদস্য।

ব্যবসার পাশাপাশি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের আরেকটি পরিচয় তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক। বলা যায়, ৯০ এর দশকে এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এসে ব্যবসায়ী পরিচয় ছাপিয়ে যান তিনি। নতুন নায়িকা ও মডেল তৈরিতে তার খ্যাতি আছে ফিল্ম পাড়ায়। এ কারণে চলচ্চিত্রে এসে আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেন তিনি।

রহস্যময় কারণে পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মিডিয়া মালিক ও সাংবাদিকরা সমীহ করে চলতেন তাকে। ৫০টির মত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। দেশের বিজ্ঞাপন জগতে গ্লামার আনতেও তার ভূমিকা ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক ব্যাটারির ‘আলো আলো বেশি আলো’ বিজ্ঞাপনে মিতা নূরের ঝলমলে উপস্থিতি তখন বেশ নজর কেড়েছিল।

চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প আছে। এরশাদের আমলে একবার তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নারীঘটিত বিরোধের জের ধরে। অবশ্য দ্রুতই প্রিন্স আব্দুল করিম আগা খানের সুপারিশে মুক্তি পান আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

তাকে মুক্ত করতে আগাখান বাংলাদেশ পর্যন্ত এসেছিলেন। এতে ধারণা করা হয় অপরাধ জগতের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। 

পরবর্তীতে একটি পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার অভিযোগে ওঠে তার বিরুদ্ধে। সেখান থেকেই তার অপরাধ জগতের বিচরণের বিষয়টি পরিস্কার হয়। যদিও সেটাকে পরে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করে পার পেয়ে যান। তিনি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন ১৯৯৬ সালে।

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে  হত্যার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যদিও সেটাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়। তবে পারিপার্শিক আলামতে এটাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই মনে হয়। 

আরও সন্দেহ বাড়িয়ে দেন সালমানের স্ত্রী সামিরার তখন থাইল্যান্ডে অবস্থানের কারণে। শোনা যায়, সালমান শাহ নিহত হওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেন আজিজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সকলের সামনে আজিজকে চড় মারে সালমান। এটাকে মোটিভ হিসেবে ধরেন অনেকেই। যদিও হত্যাকাণ্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। সালমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় আজিজকে। 

এর দুই বছর পর ঢাকা ক্লাবে খুন হন আরেক চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সে সময় সোহেল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকার ডিশ ব্যবসা। এই ব্যবসা নিজেদের কব্জায় নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় বলে ধারনা সংশ্লিষ্টদের।

মামলার এজহার বলা হয়েছে, ঢাকা ক্লবের গান নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও সোহেল চৌধুরীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ ঘটনার জেরেই ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে খুন করানো সোহেল চৌধুরীকে। এই হত্যা মামলায় ২০২৪ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। 

১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে উঠে আসে আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জেরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়।

বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। আর নারীদের নিয়ে আনন্দ-ফূর্তি করে সময় কাটান। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। 

আজিজ মোহাম্মদ ভাই

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250