ছবি: সংগৃহীত
নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে আসছে ভারতীয় চিনি। চোরাকারবারি চক্র দুই মাস ধরে এ দুই উপজেলার কয়েকটি সীমান্ত পথ দিয়ে এসব চিনি আনছে। চোরাকারবারিদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা বিজিবি।
এ দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চোরাকারবারিরা প্রতিদিন চিনি এনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছে। ৫০ কেজি ওজনের প্রতিটি বস্তা ভারত সীমান্ত থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনে শ্রমিকের খরচসহ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছাতে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। এসব বস্তা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাঁচ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। চিনির বস্তা সীমান্ত থেকে স্থানীয় বাজারে আনতে ‘লাইনম্যান’সহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে টাকা দিতে হয়।
কলমাকান্দার লেংগুরার কাঁঠালবাড়ি ও সাত শহীদের মাজার সীমান্ত এলাকার দুজন চোরাকারবারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চিনি আনতে চোরাকারবারিরা দুর্গাপুরের ভরতপুরের গাজীকোনা; বারোমারির লক্ষ্মীপুর, বিজয়পুর; চণ্ডীগড়ের ফেচিয়া; কলমাকান্দার লেংগুরা ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়ি, জগন্নাথপুর, চেংগ্নী, সাত শহীদের মাজার, কালাপানি, তকলেটবাড়ি; খারনৈ ইউনিয়নের বৌ-বাজার, বলমাঠ, কচুগড়া; রংছাতি ইউনিয়নের পাতলাবন, পাঁচগাঁও, সন্ন্যাসীপাড়া, বেতগড়া, জাকিরপাড়া, নক্লাই, রামনাথপুরসহ বিভিন্ন সীমান্ত পথ ব্যবহার করে।
প্রথমে সীমান্ত থেকে সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা ও ইজিবাইকে করে দুর্গাপুর বাজার, কলমাকান্দা বাজার ও নাজিরপুর বাজারে কিছু ব্যবসায়ীর গুদামে এসব চিনি মজুত রাখা হয়। পরে পিকআপ ভ্যান ও ছোট ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, চিনির সঙ্গে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, চকলেট, বিস্কুট, মসলা, পোশাক, গাড়ির যন্ত্রাংশ, মদ, ফেনসিডিলসহ মাদক আসছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কলমাকান্দায় বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকে করে চিনির বস্তা নাজিরপুর ও কলমাকান্দায় নিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীর গুদামে জমা করছেন কিছু লোক।
আরো পড়ুন: জিআই মর্যাদা পাচ্ছে আরো ৭ দেশীয় পণ্য
কলমাকান্দার লেংগুরা বাজার এলাকায় বুধবার বিকেলে দেখা যায়, শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি পুলিশের কথা বলে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন। আর নাজিরপুর মোড়ে বৃহস্পতিবার মো. সুজন মিয়া নামের এক যুবক নিচ্ছেন ৫০ টাকা করে। টাকা নেওয়ার কারণ হিসেবে তারা দুজনই এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে কিছু চিনি আসছে। এ জন্য সবকিছু ম্যানেজ করতে হয়।’
নেত্রকোনা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি–পূর্ব) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের নাম ভাঙিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এ ব্যাপারে পুলিশের জিরো টলারেন্স।’
এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/
খবরটি শেয়ার করুন