প্রতীকী ছবি
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদার আপাতত ব্যাংকটির কোন সভায় যোগ দিতে পারবেন না । তিনি ব্যাংকটির পরিচালক পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। বাংলাদেশ ব্যাংক এক চিঠিতে তাঁকে এসব সভায় যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।
গত ২৬ জুলাই দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পরিচালক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত রন হক সিকদারের পরিচালক নিযুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। এই অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
গত বছরের ২৫ আগস্ট ব্যাংকের ৩৯তম এজিএম অনুষ্ঠিত হয়। এজিএমের আগে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় নিয়ম অনুযায়ী তৎকালীন পরিচালক ও হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ও পরিচালক মাবরুর হোসেন এবং রন হক সিকদার পদত্যাগ করেন। পরের দিন এজিএমে ভোটে বাদ পড়েন মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাবরুর হোসেন। তবে শেয়ারধারীদের ভোটে নির্বাচিত হয় রন হক সিকদার। আইন অনুযায়ী এজিএমে অনুমোদনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো তাতে অনুমোদন দেয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, গত বছরের ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত ব্যাংকের এজিএমে নির্বাচিত ও পুনর্নির্বাচিত পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। এ জন্য তাঁদের সব ধরনের নথি দ্রুত জমা দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ন্যাশনাল ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, ৩৯তম এজিএমে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাবরুর হোসেনকে পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন, পরে যুক্ত হন তাঁর ছেলে মাবরুর হোসেন।
ব্যাংকটির নথিপত্র অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ আগস্ট এজিএম শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে ব্যাংকের শেয়ারধারীদের অনলাইনে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে অংশ নেন ৭৫৪ জন শেয়ারধারী। অনলাইন ভোটে ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়ে আবার পরিচালক নির্বাচিত হন রন হক সিকদার। আর মোয়াজ্জেম হোসেন ও পরিচালক মাবরুর হোসেনকে শেয়ারধারীরা প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানান ন্যাশনাল ব্যাংকের কোম্পানি সচিব কায়সার রশিদ। এজিএমে তিনি আরও জানান, ব্যাংকটি ২০২১ সালের জন্য কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না এবং এতে ৯৫ শতাংশ শেয়ারধারী সমর্থন দিয়েছেন।
তবে প্রশ্ন উঠছে অনলাইন ভোটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে। কারণ, ৯৫ শতাংশ শেয়ারধারী কখনোই লভ্যাংশ না দেওয়ার প্রস্তাবে সমর্থন দিতে পারেন না বলে মনে করেন ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ব্যাংকটির একাধিক সূত্র বলছে, শেয়ারধারীদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) আইডি ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে অনলাইনে ভোট দেওয়া হয়।
ন্যাশনাল ব্যাংক বাংলাদেশের একটি প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক। উদ্যোক্তাদের ঋণ জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি এখন ঝুঁকির মুখে আছে। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ২৫ শতাংশই খেলাপি। গত বছর ব্যাংকটি ৩ হাজার ২৬০ কোটি লোকসান করে। তাই আপাতত শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না ন্যাশনাল ব্যাংক।
এম.এস.এইচ/
খবরটি শেয়ার করুন