সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানে চীনা প্রকল্পে মজিদ ব্রিগেডের বাধা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৩:৪৩ অপরাহ্ন, ২৪শে আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি পাকিস্তানের গোয়েদার বন্দর নগরীতে ২৩ জন চীনা প্রকৌশলীকে বহনকারী যানবাহনে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৩  আগস্টে হওয়া এ হামলায় দুইজন জঙ্গী নিহত হয় এবং দুইজন পাকিস্তানি সৈন্য আহত হন। 

বেলুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) মুখপাত্র জিয়ান্দ বালোচ দাবি করেন, এ ঘটনায় অন্তত চারজন চীনা নাগরিক এবং ১১ জন পাকিস্তানি সামরিক কর্মী নিহত হয়েছেন এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনার একদিন পর, বিএলএ চীনকে এ জায়গা খালি করতে এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) অঞ্চল বন্ধ করার ব্যাপারে ৯০ দিনের সময় দেয়। অন্যথায় চীনকে তীব্র আক্রমণ সহ্য করার জন্য প্রস্তুত হতে বলে।

পাকিস্তানের স্পেশাল প্রোটেকশন ইউনিটের (এসপিইউ) প্রায় ৩৮২৯ জন অফিসার এবং কর্মী, জেলাসমূহের ২৫৫২ জন নিরাপত্তা কর্মীরা বেলুচিস্তান প্রদেশের চারটি সিপিইসি এবং ২৭ টি নন-সিপিইসি প্রকল্পে কাজ করা ৭৫৬৭ জন চীনাদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন। তারা প্রদেশের ৭০ টি আবাসিক এবং ২৪ টি ক্যাম্পে বসবাসকারী চীনাদের নিরাপত্তা প্রদান করছে।

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর বা সিপিইসি প্রকল্প, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল চালু হয়। ২০৩০ সালের ভেতর এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা এবং এ প্রকল্প পূরণে ৪৬০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়।

যদিও প্রাথমিক ঘোষণার পর থেকে, ২০২২ সাল পর্যন্ত এ বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চীনের মোট বিনিয়োগ ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলারে এসে পৌঁছেছে। এ প্রকল্পের সমাপ্তির পর, সিপিইসি পাকিস্তানের জিডিপিতে ২০% অবদান রাখতে চলেছে।

হাম্মাল রেহান বিএলএর একটি সুইসাইড স্কোয়াড। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এটি প্রথম আত্মঘাতী হামলা চালায়। এ ঘটনার সাত বছর পর, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ডালবাদিনে চীনা প্রকৌশলীদের বহনকারী একটি বাসে আত্মঘাতী হামলা চালায় এ মজিদ ব্রিগেড।

মজিদ ব্রিগেডের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর করাচিতে চীনা কনসুলেটে, ২০১৯ সালের ১১ মে গোয়াদরের পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেলে এবং ২০২০ সালের ২৯ জুন পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে হামলা চালায়।

বিএলএ তে ১০০০ থেকে ১৫০০ জন যোদ্ধা রয়েছে। এর মধ্যে মজিদ ব্রিগেডের সদস্য ১০০ থেকে ১৫০ জন, যার মধ্যে মহিলা সদস্যরাও রয়েছে। মজিদ ব্রিগেডের তিনটি লজিস্টিক ইউনিট রয়েছে যারা হামলার আগে আত্মঘাতী বোমারুদের পরিবহন করে এবং তাদের কোথায় কোথায় মোতায়েন করা হবে সে বিষয়টি নির্ধারণ করে। একই সাথে তারা হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন করে ও লক্ষ্যবস্তুর আশপাশে অনুসন্ধান পরিচালনা করে।

মজিদ ব্রিগেড ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত বেলুচ ভিন্নমতাবলম্বী এবং প্রবাসীদের কাছ থেকে হাওয়ালা এবং হুন্ডির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে। 

সুসজ্জিত এবং উন্নতমানের বিস্ফোরক ডিভাইস (আইইডি), অ্যান্টি-পার্সোনেল এবং অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন, গ্রেনেড, রকেট-চালিত গ্রেনেড (আরপিজি) এবং এম ৪ রাইফেলের মতো বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সহ উচ্চ-মানের অস্ত্র রয়েছে মজিদ ব্রিগেডের।

যদিও মজিদ ব্রিগেড দ্রুত বিএলএ-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে, তবে বিএলএ সদস্য হওয়া মজিদ ব্রিগেডে যোগদানের পূর্বশর্ত নয়। অন্যান্য বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের বিদ্রোহীরা যারা আত্মঘাতী সন্ত্রাসবাদের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হতে প্রস্তুত তারা মজিদ ব্রিগেডে যোগ দিতে পারে। 

মজিদ ব্রিগেডের নিয়োগ নীতি অনুসারে, আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর ন্যূনতম বয়স ১৮। মজিদ ব্রিগেডের বোমারুদের নিয়মনীতি অন্যান্য জিহাদি সংগঠন থেকে আলাদা। এখানে আক্রমণের আগে স্বেচ্ছাসেবকদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় না। বরং তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে দেখা করার স্বাধীনতা রয়েছে।

মজিদ ব্রিগেডের প্রতিটি আত্মঘাতী হামলার তিনটি পর্যায় এবং লক্ষ্য রয়েছে। একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিজেকে নিঃশেষ করার মাধ্যমে বেলুচ বিদ্রোহী আন্দোলনকে সকলের দৃষ্টির সামনে নিয়ে আসে। 

অন্যদিকে করাচিতে পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে হামলা বা বেলুচিস্তানের বিভিন্ন সিপিইসি প্রকল্পে হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল তাদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব।

বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে চীনাদের মধ্যে বিশাল বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেলুচিস্তানের বাসিন্দারা। বেলুচদের দাবি, চীন ও পাকিস্তান সরকার সিপিইসি রুট এবং গোয়েদার বন্দর এলাকা থেকে হাজার হাজার বেলুচ পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

সাম্প্রতিক তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বৈঠকটিকে চীন, ইরান এবং পাকিস্তানের আরেকটি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বেলুচিস্তানের অধিবাসীরা। তাদের মতে, চীন ও পাকিস্তানের উদ্দেশ্য হলো বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করা, বেলুচ জাতিকে ধ্বংস করা এবং বেলুচ জনগণের স্বাধীনতার জন্য ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করা।

তিব্বত, জিনজিয়াং এবং হংকং-এ ও চীনের সম্প্রসারণবাদী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তারা বন্দী শিবিরে রাখা ১০ লাখ উইঘুরদের আটকে রাখার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চীন দরিদ্র দেশগুলোকে ক্রমাগত শোষণ করে উপরে উঠতে চাইছে।

চীন এখন বেলুচ গণহত্যার নতুন নেতৃত্বও গ্রহণ করেছে এবং দুই দখলদার ইরান ও পাকিস্তানকে নির্দেশ দিয়েছে বেলুচ জাতিকে নির্মূল করার এবং চীনা ও পাঞ্জাবিদের জন্য জায়গা তৈরি করার। যেহেতু চীনারা এখন বেলুচ জাতিদের ধ্বংস করতে চাইছে, তাই বেলুচ জনগণেরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরো বিশ্বকে এটা দেখানোর যে চীন নিজেকে যে শান্তিপ্রিয় দেশ বলে দাবি করে, আসলে তা নয়।

এম.এস.এইচ/ 

চীন পাকিস্তান মজিদ ব্রিগেড

খবরটি শেয়ার করুন