সংগৃহীত
আমদানি শুরুর পর পাবনার বাজারে পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি হাজার টাকা কমে গেছে। আর কেজিতে কমেছে প্রায় ২২-২৫ টাকা। তবে এ দামেও চাষিদের লাভ থাকছে বলে জানা গেছে। এর চেয়ে দাম কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে চাষিরা জানিয়েছেন।
সরেজমিন পাবনার আতাইকুলা হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় ব্যাপারীদের চাহিদাও কম। ব্যাপারীরা খুব বেশি দরে পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহী নন। আবার পরে দাম বাড়বে এ আশায় চাষিরা পেঁয়াজ কম এনেছেন হাটে।
চাষিরা জানান, গত রোববার (৪ জুন) আতাইকুলা হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। সে পেঁয়াজ তিনদিনের ব্যবধানে পরের হাট বুধবারে মণপ্রতি কমে যায় প্রায় এক হাজার টাকা। এদিন মানভেদে প্রতিমণ পেঁয়াজ ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৮৫-৮৭ টাকা সে পেঁয়াজের প্রতি কেজির দাম এখন ৬০-৬৫ টাকায় নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরা বাজারে প্রভাব নেই
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মে মাসের শুরুর দিকে পাবনার হাট-বাজারে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা মণ। তখন পেঁয়াজের বাজার ক্রমশ: বাড়তে থাকায় সরকার আমদানির কথা জানায়। এতে মে মাসের ২০ তারিখে পেঁয়াজের মণ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় নেমে আসে। এরপর কৃষিমন্ত্রী ঘোষণা করেন সরকার চাষির স্বার্থ আগে দেখবে তারপর পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেবে। এ ঘোষণার পর আবার মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের শুরুতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এখন আমদানি শুরু হওয়ায় আবার দাম কমেছে।
সাঁথিয়া উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামের চাষি রুবেল হোসেন বলেন, পেঁয়াজের দাম যে হারে বাড়ছিল তাতে চাষিরা খুব লাভবান হচ্ছিলেন। ভারতের পেঁয়াজ দেশে ঢোকায় দাম কমতে শুরু করেছে। দাম যদি আরও কমে তবে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। অন্যদিকে, পেঁয়াজ বেশিদিন ঘরে রাখার সুযোগও নেই। পচন ধরে নষ্ট হয়। দুদিক থেকেই আমরা বিপদগ্রস্ত। আমাদের লোকসান ঠেকাতে সরকারের উচিত পেঁয়াজের একটা নির্দিষ্ট দাম বেঁধে দেওয়া। এতে চাষি ও ভোক্তা উভয়েই লাভবান হবেন।
পাবনা সদর উপজেলার শুকচর গ্রামের শুকুর আলী বলেন, পেঁয়াজের দাম উঠেছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ টাকা মণ। তখন আরও দামের আশায় ঘরে রেখেছিলাম। এত তাড়াতাড়ি দাম পড়ে যাবে তা ভাবতে পারিনি। তবে যে দাম আছে এটা যদি থাকে তাহলে কিছুটা লাভ থাকবে। এর চেয়ে কম হলে ক্ষতি হবে।
সাঁথিয়ার পৌর সদরের বাসিন্দা মানিক মিয়া রানা বলেন, সামান্য পেঁয়াজ আমদানি শুরু হতেই দাম কমে গেলো। এতে বোঝা যায় জনগণকে জিম্মি করে দাম বাড়ানো হয়। এখানে কিছু বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। তাদের জন্য চাষি এবং ভোক্তা উভয়েই ক্ষতির শিকার হন। তাই চাষির উৎপাদন খরচ হিসাব করে তাদের কিছুটা লাভ রেখে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দাম সহনীয় থাকবে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) পাবনা জেলা শাখার সেক্রেটারি এস এস মাহবুব আলম বলেন, কৃষকের লাভ রেখে পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেওয়া দরকার। তা না হলে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দাম লাগামহীন হয়ে যায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রণি বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকালে জানান, পেঁয়াজের বাজার মনিটরিংয়ের কাজ চলছে। বুধবার তারা জেলার অন্যতম বড় হাট হাজিরহাটে অভিযান চালান। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। পেঁয়াজের বাজার এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। ঈদকে পুঁজি করে কেউ যেন কারসাজি করতে না পারে তা দেখা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজ চাষিরা লাভবান হোক তা অবশ্যই চাই। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর কারসাজিতে দাম নাগালের বাইরে চলে যায়। তারা চাষিদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে নিজেরা সুযোগ বুঝে ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চাষিরাও পেঁয়াজের ভালো দাম পাচ্ছেন। প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকা দাম পেয়ে তারা লাভবান হচ্ছেন।
এসি/