ছবি: সংগৃহীত
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বার্ন ইউনিটসমূহের সমন্বয়ক হিসেবে ২০২৩ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর থেকে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্পে ১৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিমের নেতৃত্ব দেন। প্লাস্টিক সার্জারি টিমটি ভুটান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পরিচালিত হয়। সাত দিনব্যাপী ওই ক্যাম্পে ১৬টি জটিল প্লাস্টিক সার্জারি সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। সেখানে রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় কারমা দেমা নামক ২৩ বছর বয়সের একজন রোগী প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে বিকলাঙ্গ নাক তৈরি করার জন্য আসেন।
কারমা দেমা ৮/১০ বছর পূর্বে নাকের গহব্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি গ্ৰহণ করেন। পরবর্তীতে তার নাকের ভেতরে রেডিওথেরাপিজনিত পচন হয় এবং নাক নষ্ট হয়ে যায়। তিনি পুনরায় নাক তৈরি করার জন্য টাটা মেমোরিয়ালে ভর্তি হন এবং পরপর দুইবার অপারেশন করার পরেও নাক পুনর্গঠনে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় তিনি ভারতের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করছিলেন। পিতার নিম্ন আয়ের কারণেই প্রথম থেকে তিনি জটিল এই চিকিৎসার জন্য ভুটান সরকারের শরণাপন্ন ছিলেন।
বাংলাদেশের প্লাস্টিক সার্জারি টিম কারমা দেমাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভুটানে চিকিৎসায় নাক পুনর্গঠন সম্ভব নয় জানান। তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ চিকিৎসার মাধ্যমে সম্ভব বলে জানান। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে সেরিং ও রাজা জিগমে সিংমে নাম গেইল ডা. সামন্ত লাল সেন ও ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায়কে পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকারের সময় কারমা দেমার চিকিৎসায় সহায়তা করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে দুই দেশের সরকারের সহযোগিতায় বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুগ্রহে কারমা দেমা ও তার এক ভাই গত ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে চিকিৎসার জন্য আসেন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।
আরো পড়ুন: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি: প্রধানমন্ত্রী
ডা. সামন্ত লাল সেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. অখিল রঞ্জন বিশ্বাসসহ কয়েকজন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে কারমা দেমার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসক টিম গঠন করেন। চিকিৎসক টিমের সুদীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ৯ জানুয়ারি ২০২৪ দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে কারমা দেমার নাকের পুনর্গঠন করা হয়। অপারেশনটি কারমা দেমার বুকের পাঁজরের তরুণাস্তি ও হাতের চামড়া/টিসু দিয়ে ফ্রি ফ্লাট করে মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। সমগ্র অপারেশনটি ডা. সামন্ত লাল সেন, শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রায়হানা আওয়াল, অধ্যাপক ডা. নওয়াজেশ খান ও সহকারী পরিচালক ডা. মামুন খান-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে দুইটি অভিজ্ঞ মাইক্রো সার্জারি টিম সম্পন্ন করেন। ডা. প্রদীপ চন্দ্র দাস, সহযোগী অধ্যাপক-এর নেতৃত্বে প্রথম টিমের অন্যান্য সদস্য ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হেদায়েত আলি খান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসেন ইমাম, ডা. ওবায়দুল ইসলাম, ডা. মো. শাহিন, সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আহমেদুর রহমান সবুজসহ আরো অনেকে।
ডা. হাসিব রহমান, সহযোগী অধ্যাপক-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় টিমের অন্যান্য সদস্য ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ডা. মাহবুব হাসান, রেজিস্ট্রার ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী রেজিস্টার ডা. মোঃ আবেদুর রহমানসহ আরো অনেকে। উক্ত অপারেশনে আবেদনবিদ হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ডা. মোঃ আতিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মলয় কুমার দাস ও ডা. রেবেকা সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক ডা. মৌমিতা তালুকদারসহ আরো অনেকে।
গত ১৪ই জানুয়ারি ছিল কারমা দেমার অপারেশন-পরবর্তী পঞ্চম দিন। কারমা দেমা শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং তার অপারেশন সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। যদিও প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে এ ধরনের তৈরি নাকে আরো কয়েকবার সূক্ষ অস্ত্রোপাচার সম্পন্ন করলে একটি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন নাক পুনর্গঠন সম্পন্ন হবে।
মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের ব্যস্ততা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন প্রতিনিয়ত কারমা দেমার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি সশরীরে হাজির হয়েছিলেন কারমা দেমার সঙ্গে কথা বলতে।
এসি/ আই. কে. জে/