জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২৪তম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- ছবি : সংগৃহীত
বর্তমান সরকারের আমলে সবগুলো নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এর চেয়ে ভালো নির্বাচন এদেশে কবে হয়েছে? কোন দেশে হয়েছে? অনেক দেশের নির্বাচন তো এখনো বিরোধী দল মেনে নেয়নি। দেশ যখন সুষ্ঠুভাবে এগুচ্ছে তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?’
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান। গত ৩ সেপ্টেম্বর একাদশ সংসদের এই অধিবেশন শুরু হয়।
এরপরে অক্টোবরে আরেকটি অধিবেশন বসবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অক্টোবরের অধিবেশনই শেষ অধিবেশন। এরপরই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে এদিকে (সরকারি দলে) থাকব, না দিলে ওদিকে (বিরোধী দলে) যাব। কোনো অসুবিধা নাই। জনগনের ওপর আমরা সব ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণ যেটা করবে। সেটাই মেনে নেব।’
আগামী নির্বাচনে দেশবাসীসহ সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যাহত করতে না পারে। কোনও চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ আর মাথানত করবে না। সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই অগ্রযাত্রাটা যেন অব্যাহত থাকে। বিশ্বব্যাপী বাঙালী যে মর্যাদা পেয়েছে সেই মর্যাদা অব্যাহত রেখেই আমরা এগিয়ে যাব। আবার দেখা হবে।’
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হযেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে এ পর্যন্ত যতগুলি নির্বাচন হয়েছে- উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূ্ণ নির্বাচন হয়েছে। এর থেকে শান্তিপূর্ণ কবে হয়েছে বাংলদেশে নির্বাচন বা পৃথিবীর কোন দেশে হয়ে থাকে?’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে নির্বাচন তো এখনো তাদের বিরোধী দল মানেনি। এরকম তো ঘটনা আছে। তারপরও আমাদের নির্বাচন নিয়ে অনেক সবক শুনতে হচ্ছে। আজকে যখন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আমরা করছি তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা। এর অর্থটা কী? আজ দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?’
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তখন জনগণের কোনো অধিকার বলে কিছু ছিল না। তাদের ভোটের অধিকার ছিল না। বেঁচে থাকাই ছিলো কষ্টকর। নির্বাচনের পর ৪৮ ঘণ্টা ভোটের ফল বন্ধ রেখে মনমত ফলাফল প্রকাশ করতে দেখা গেছে।’
ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মশা মারতে কামান দাগলে হবে না। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সবাইকে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। কোথাও পানি জমে আছে কী না তা দেখতে হবে। শুধু সরকার করে দেবে? সিটি করপোরেশন করে দেবে? গালি দিতে হবে। গালি দিলে তো হবে না। তাদের কাজ তো তারা করে যাচ্ছে। নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হবে। কে কী করে দিল না দিল ওই কথা বলে লাভ নেই। নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে।’
মুদ্রাস্ফীতিতে কিছু মানুষ কষ্টে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসের কিন্তু অভাব নেই। উৎপাদনে ঘাটতি নেই। উৎপাদনের জন্য যা যা দরকার সেটা করছি। বাজারে গেলে কোন জিনিসের অভাব নেই, মনে হয় কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বাড়ানো হয়, ইচ্ছে করে বাড়ানো হয়। অনেক সময় গোডাউনে রেখে দিয়ে কেউ কেউ এরকম খেলা খেলে। সরকার পদক্ষেপ নিলে কমে আসে।’
বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাজার মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাকে বিশেষভাবে দেখার জন্য বলা হয়েছে, কেন জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে?’
আই.কে.জে/