সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদানের সময় এসে গিয়েছে

ডেস্ক নিউজ

🕒 প্রকাশ: ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, ১১ই জুলাই ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

৩ জুলাই, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট 'দ্য ফরগটেন জেনোসাইড: বাংলাদেশ ১৯৭১' শিরোনামে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। এ আয়োজনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ৫২ বছর আগে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনি কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদান। 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি কর্তৃক বাংলাদেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হন, দুই লক্ষ মা-বোন হারান তাদের সম্ভ্রম। তাছাড়া জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে প্রায় এক কোটি লোক আশ্রয় নেন ভারতে। তিন কোটি লোক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনি বাঙালিদের সমূলে ধ্বংস করার যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেছিল তা এখন অনেকেরই জানা। লন্ডন সানডে টাইমস এ ঘটনাগুলোকে "গণহত্যা" হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।

তৎকালীন পাকিস্তানি কমান্ডারের বক্তব্যেই এ বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, তারা পূর্ব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার যজ্ঞে মেতেছিলেন এবং এজন্য দুই কোটি মানুষকে হত্যা করতে হলেও তারা পিছপা হতেন না। তবে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে নি।


হেগ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সম্মেলনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল ইউরোপের জনগণ এবং বিশ্ববাসীকে উপলব্ধি করানো যে এবার বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদানের সময় এসেছে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য (এমইপি), ফুলভিও মার্তুসিলো এ সম্মেলনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও ফ্লাইটের সময়সূচির জটিলতার কারণে তিনি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন নি। তার প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন, গিউলিয়ানা ফ্রাঙ্কোইসা।

এমইপি ইসাবেলা অ্যাডিনোলফি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশি নারীরা যে অমানবিক অত্যাচারের শিকার হন তার বর্ণনা করে এ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানান। এ সময় অপর একজন এমইপি থিয়েরি মারিয়ানিও উপস্থিত ছিলেন।

গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স এর প্রেসিডেন্ট, শ্রদ্ধানন্দ বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ ঘোষণা দিয়েছিল এ বিশ্বে আর কোন গণহত্যা সংঘটিত হবে না। কিন্তু তারা বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে আটকাতে পারেনি। এ গণহত্যার লক্ষ্যবস্তু শুধুমাত্র হিন্দুরা ছিল না, বরং সমগ্র বাঙালি জাতিই ছিল।

হিউম্যান রাইটস উইদাউট ফ্রন্টিয়ারের পরিচালক উইলি বলেন, দীর্ঘদিনের শোষণ-নিপীড়নের ইতিহাস শেষমেশ গণহত্যায় পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই, রাজনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানিদের থেকে এগিয়ে যায়। পশ্চিম পাকিস্তানের বেশিরভাগ নাগরিকের ভাষা ছিল উর্দু। অপরদিকে গোটা পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষই ছিল বাংলাভাষী। স্বাধীনতার এক বছর পরেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালায়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালিদের বিরুদ্ধে জাতিগত ও ভাষাগত বৈষম্য চালায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা। বাঙালিদের সাহিত্য ও সঙ্গীত রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচার করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদীয় আসনের দুটি ছাড়া সবকটিতে জয়লাভ করে এবং সমগ্র রাজ্যের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

কিন্তু তাকে সরকার গঠনের অনুমতি প্রদান না করে, পাকিস্তান সামরিক বাহিনি বাঙালি রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রদের গ্রেফতার ও হত্যা করার জন্য "অপারেশন সার্চলাইট" এর পরিকল্পনা করে। এ অপারেশন সার্চলাইট ছিল গণহত্যার পথে তাদের একটি বড় পদক্ষেপ।


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় এই অপারেশন সার্চলাইট। পরের দিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। 

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সম্মেলনে এই গণহত্যা সম্পর্কিত একটি ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওটিতে একজন প্রত্যক্ষদর্শী পাকিস্তানিদের হাতে তার বাবার নিহত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন। তার বাবার মৃতদেহ খুঁজতে গিয়ে তিনি এবং তার মা আরও চারজন ব্যক্তির মৃতদেহ খুঁজে পান।

আরো পড়ুন: আলোচনা হবে বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে: মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র

ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সারা বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত। তাই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং অন্যান্য ইইউ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিলে এটি অবশ্যই একটি বড় পদক্ষেপ হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ঠিক কী হয়েছিল তা বিশ্ববাসীকে জানানোর দায়িত্ব বাংলাদেশিদের। গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশিরা ৫২ বছর অপেক্ষা করেছে, প্রয়োজনে আরও করবে, কিন্তু আশা হারাবে না। 

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান তিনি। 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, মানেল মসালমি। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনি কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে জোর দেন। অনুষ্ঠানে বেলজিয়ামের একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন জাতীয়তার বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এম এইচ ডি/

বাংলাদেশ গণহত্যা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট পাকিস্তান মানবাধিকার সংস্থা বাঙালি

খবরটি শেয়ার করুন