ছবি: সংগৃহীত
সারা বিশ্বের সঙ্গীতপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে ৫ জুলাইয়ের অপেক্ষায় আছেন, যখন আসামের বিশিষ্ট গায়ক ও সুরকার জয় বড়ুয়া রয়েল ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার সাথে বেশ কিছু গান গেয়ে শুনাবেন। লায়লা মজনু, এজেন্ট বিনোদ, জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা, মার্গারিটা উইথ এ স্ট্র এবং দেব ডি এর মতী বিখ্যাত কিছু হিন্দি সিনেমায় কাজ করেছেন জয়। সেখানে সঙ্গীতের বিভিন্ন মাধ্যমের অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন তিনি।
জয়ের লন্ডন ভিত্তিক গানের মধ্যে রয়েছে, দ্য জঙ্গল গান, টেলিপোর্টেশন, এলান দ্য মিউজিক্যাল থিম সং, ওড টু এলান, সিন্থেটিক ডিএনএ এবং নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার। ডাক্তার, সংগীতজ্ঞ এবং গীতিকার সুজান লিমের সাথে জয় পিয়ানো এবং অর্কেস্ট্রার সম্মিলনে একটি গান ২০১৯ সালে লন্ডনের এবে রোড স্টুডিওতে রেকর্ড করেন যা তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দেয়।
লিমের এলবাম প্রাইডে জয় বড়ুয়ার গান "রাভা" লিমকে মুগ্ধ করে। আমেরিকান স্যাক্সোফোনিস্ট জর্জ ব্রুকের সাথে এই গানে তিনি আসামের এক বিপ্লবী বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার গল্প বলেন।
তিনি মানু মার্টিন, ম্যাথিউ আইমার্ড এবং রন ড্যানজিগার এর মতো সুরকারদের সাথেও কাজ করেছেন। বড়ুয়া বলেন, যেকোনো অর্কেস্ট্রা অনুষ্ঠানে নিজের গান শুনার মতো আনন্দের চেয়ে বড় আর কিছু নেই। তার সব গানেরই শিকড় আসামে লুকায়িত বলে স্বীকার করেন তিনি। আসামের শিল্প সংস্কৃতিই তার গানের অনুপ্রেরণা।
জয় বড়ুয়া এমনই একজন সঙ্গীতশিল্পী যার প্রতিভা শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে চলে গেছে।
অন্যদিকে কল্পনা পাটোয়ারি তার ভোজপুরী লোকসংগীতকে আন্তর্জাতিক মহলে নিয়ে গেছেন। আজ তার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে বহু যুগের পুরনো খাদি বিরহা সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
পাটোয়ারি বলিউড, তামিল, বাংলা এবং অসমীয়া চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। এ আর রহমান, প্রীতম, দেবী শ্রী প্রসাদ এবং আনন্দ রাজ আনন্দের মতো বিখ্যাত সব মানুষদের সাথে কাজ করেছেন তিনি। মুম্বাইয়ের ক্ষেত্র ছাড়িয়ে কুইন্সল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ গেমস এবং অসলো নরওয়ের মেলা উৎসবেও অংশ নেন তিনি। তিনি বলেন, গানের ক্ষেত্র বিশাল এবং প্রতিনিয়ত আপনার নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে এক্ষেত্রে। সঙ্গীত মানে অনুভূতির ভাষা, আপনার অনুভূতিটুকু শ্রোতাদের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে।
তেজপুরে জন্মগ্রহণকারী প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী এবং গীতিকার, মৃন্ময় সরমা বড়ুয়া "মেলোডি মাফিয়া" নামেও পরিচিত। তিনি ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে এবং দোহাতে ফিফা বিশ্বকাপের ময়দানে পারফর্ম করেন। সুনিধি চৌহান, বোম্বে ভাইকিংস (নীরজ শ্রীধা), বিশাল মিশ্র, আশিষ কৌরের মতো প্রখ্যাত গায়কদের সাথেও কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি টিপস অফিসিয়ালের একজন সক্রিয় সঙ্গীত পরিচালক।
সম্প্রতি তিনি তার এক বন্ধুর সাথে আসামের বিখ্যাত আনন্দিরাম দাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি এলবাম প্রকাশ করেন। আনন্দিরাম দাসের পুরনো সব গানগুলোকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে বিশ্বের সামনে তুলে ধরাই তার উদ্দেশ্য ছিল।
সঙ্গীত জগতে দিব্যজ্যোতি নাথ আরেক বিখ্যাত নাম। এই গিটারিস্ট ১৫ বছর ধরে মুম্বাইতে কাজ করছেন। কনসার্টের জন্য তিনি প্রায় ২৭ টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। বলিউডের বিখ্যাত শঙ্কর এহসান লয়, সাজিদ-ওয়াজিদ, আদনান সামি, ফারহান আখতার, মোহিত চৌহান, সেলিম সুলায়মান থেকে শুরু করে প্রয়াত কে.কে. এর সাথেইও কাজ করেছেন তিনি।
এমটিভি কোক স্টুডিও ১ থেকে যাত্রা শুরু করে রক অন ২, বডিগার্ড, ডি কোম্পানি, জাজবা এর মতো বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি।
আরো পড়ুন: “আপনি তো ভীষণ জনপ্রিয়, আমি আপনার একটা অটোগ্রাফ নেবই” মোদীকে জো বাইডেন
এত অগ্রগতি সত্ত্বেও আসামের মানুষেরা মনে করেন আসামের শিল্পীরা আরো অনেক দূর যেতে পারে। এখনও আসামের বিহু, তুকারি, কামরূপীয়ার মতো আরো অনেক ঐতিহ্য রয়েছে যা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা যায়।
প্রখ্যাত সুরকার, প্রযোজক, যন্ত্রশিল্পী অম্বর দাস বলেন তার বিখ্যাত কাজগুলো এখনও অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে। কিংবদন্তি ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ চলচ্চিত্র "সানগ্লাস" এ তার করা কাজ অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আসাম সঙ্গীতায়নের প্রধান সমস্যা হলো সঠিক পরিকাঠামো ও সুযোগের অভাব। এই অঞ্চলের তরুণ শিল্পিদের একটি অংশ দারুণ ভালো সব কাজ করছে। তবে তাদের প্রতিভা ও নৈপুণ্যকে মেলে ধরতে আরো সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আসামের শিল্পিদের জন্য সরকারি সহযোগিতার প্রার্থনা করেন।
এম এইচ ডি/আইকেজে