সোমবার, ২৬শে আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১১ই ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা সেবা সিং

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:১১ অপরাহ্ন, ৩১শে আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

চলতি মাসের শুরুতে পাঞ্জাবের স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব রিয়াস্তি প্রজামন্ডল আন্দোলনের নায়ক সেবা সিং থেকরিওয়ালার জন্মবার্ষিকী ছিল।

পাঞ্জাব রিয়াস্তি প্রজামন্ডল অল ইন্ডিয়া স্টেটস পিপলস কনফারেন্সের সাথে যুক্ত ছিল। এটি ভারতের প্রায় ৬০০ টি ব্রিটিশ অধিভুক্ত রাজ্যের জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করে। পাঞ্জাবের ব্রিটিশ সমর্থিত শাসকদের হাত থেকে প্রজাদের রক্ষা করার জন্য পাঞ্জাব রিয়াস্তি প্রজামন্ডল স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলধারার নেতাদের কাছ থেকে বিপুল প্রশংসা অর্জন করে।

তখনকার সময়ে ভারতে ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন চলছিল। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করা স্থানীয় শাসকদের বিরুদ্ধেও চলছিল ভারতীয়দের লড়াই। ১৯৩৯ সালে ক্রাউন্স পুলিশ নামে গঠিত পুলিশবাহিনীকে ১৯৪৯ সালে সিআরপিএফ নামে নতুন নামকরণ করা হয়।

ব্রিটিশ সরকারের সাথে সাথে পাঞ্জাবের মহন্তদের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে এগিয়ে আসে ভারতীয়রা।স্বৈরাচার, দুঃশাসন ও অব্যবস্থাপনা থেকে মুক্তি এবং তাদের নাগরিক ও বৈধ অধিকারের জন্য লড়াই করছিল তারা।

এভাবেই ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে থাকা ভারতীয় রাজা, মহারাজা ও নবাবদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রজা মন্ডল ১৯২০ দশকের দিকে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। প্রজা মন্ডলের নেতারা সামন্ত শাসকদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায় এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাদের নাগরিক অধিকারের জন্য লড়াই করে। 

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার ঠিক আগে বা পরে যখন মূলধারার স্বাধীনতা আন্দোলন বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে তখন প্রজা মন্ডলের মতো আন্দোলনগুলোর জনপ্রিয়তা কমে যায়৷ কিন্তু দেশ স্বাধীন এবং দেশের নাগরিকদের অধিকার রক্ষার্থে এ আন্দোলনগুলোর গুরুত্বও কিছু কম নয়।

১৯২৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবে গঠিত হয় এই পাঞ্জাব রিয়াস্তি প্রজা মন্ডল। পরবর্তীতে ১৯২৮ সালে মানসা শহরে এবং এর পরবর্তীতে পাটিয়ালা রাজ্যে গঠিত হয় এটি৷ প্রজা মন্ডল আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ সরকার ও ব্রিটিশ মদদপুষ্ট ভারতীয় রাজা-নবাবদের বিরুদ্ধে একটি গণ আন্দোলন। 

১৮৮২ সালের ২৪ আগস্ট, পাটিয়ালার বার্নালা শহরের কাছে (বর্তমান সঙ্গরুর জেলা) থেকরিওয়ালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সেবা সিং। তার বাবা ছিলেন পাটিয়ালার মহারাজা রাজিন্দর সিংয়ের দরবারে একজন উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা। উর্দু, ফার্সি, পাঞ্জাবি এবং ইংরেজি ভাষায় শিক্ষালাভের পর সেবা সিংকেও রাজ্য কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়৷ তবে তিনি শিখ মূল্যবোধ রক্ষার্থে প্রজা মন্ডল আন্দোলনে যোগ দেন।

ব্রিটিশ ভারত সরকারের দমনমূলক রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ১৯১৯ সালে জালিয়ান ওয়ালাবাগ গণহত্যার ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, ১৯২১ সালে সাকা (গণহত্যা) নানকানা সাহিব, ১৯২২ সালে গু কা বাগ মোর্চা এবং ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ ভারত সরকারের বিরুদ্ধে জয়তো মোর্চার দ্বারা তিনি ভারতবাসীর জন্য আত্মনিয়োগ করেন। ১৯২৩ সালে গ্রেফতার হয়ে তাকে তিন বছর লাহোর জেলে কাটাতে হয়। ১৯২৬ সালে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হলে মিথ্যে চুরির মামলায় তাকে ফের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ না হলেও তাকে আরো তিন বছর কারাগারে কাটাতে হয়। মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জেলে থাকাকালীন সময়ে, ১৯২৮ সালের ১৭ জুলাই তিনি পাঞ্জাব রিয়াস্তি প্রজা মন্ডলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন।

তৎকালীন পাটিয়ালা রাজ্যের মহারাজা ভূপিন্দর সিং অকালি নেতা বাবা খড়ক সিংয়ের কাছ থেকে সমালোচনার শিকার হন। বাবা খড়ক সিং সেবা সিংয়ের মুক্তির দাবি জানান। অন্যদিকে জেল কর্তৃপক্ষের খারাপ আচরণের প্রতিবাদে অনশনে বসেন সেবা সিং৷ তার শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে চাপের মুখে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। ছাড়া পেয়েই সেবা সিং প্রজা মন্ডলের উদ্দেশ্য পূরণ করতে মনোনিবেশ করেন।

প্রতিষ্ঠার পর পাঞ্জাব রিয়াস্তি প্রজা মন্ডলের প্রথম আনুষ্ঠানিক অধিবেশন ১৯২৯ সালের ২৭শে ডিসেম্বর লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে মহারাজা ভূপিন্দর সিংয়ের অদক্ষ প্রশাসনের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। পাটিয়ালা রাজ্যের অদক্ষ শাসনের উপর একটি স্মারকলিপি ভারতের ভাইসরয়ের কাছে পাঠানো হয় এবং সর্বভারতীয় রাজ্য পিপলস কনফারেন্স দ্বারা পরিচালিত একটি তদন্তে মহারাজাকে বেশিরভাগ অভিযোগের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর লুধিয়ানায় অনুষ্ঠিত অপর এক সম্মেলনেও কঠোরভাবে সমালোচিত হন মহারাজা ভূপিন্দর সিং।

রাজ্যে প্রজা মন্ডলের জনপ্রিয়তা অনুধাবন করে ১৯৩১ সালে রাজা ভূপিন্দর সিং সেবা সিংকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। একই বছর সিমলায় পাঞ্জাব রিয়াস্তি প্রজা মন্ডলের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে সেবা সিং মহাত্মা গান্ধীর সাথে দেখা করেন এবং পাটিয়ালা রাজ্যের জনগণের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। এর পর ১৯৩১ সালে পাটিয়ালা রাজ্যের প্রজা মন্ডলের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধপূর্বক হিদায়াত (নির্দেশ) জারি করা হয়। কিন্তু সেবা সিংয়ের নেতৃত্বে প্রজা মন্ডল আন্দোলনের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তিনি ১৯৩১ ও ১৯৩২ সালের কৃষক আন্দোলনেও যোগ দেন।

১৯৩৩ সালে সেবা সিংকে পাটিয়ালা পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং কারাদণ্ড দেয়। কারাগারে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে তিনি অনশন করেন। জেল কর্তৃপক্ষ তার দাবী এবং স্বাস্থ্যের অবনতির দিকে খুব একটা গুরুত্ব না দেওয়ায় তিনি ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

আর.এইচ/ আইকেজে

সেবা সিং

খবরটি শেয়ার করুন