ছবিঃ সংগৃহীত
মানব সমাজে বংশবৃদ্ধির প্রয়োজনে নারীদের জীবনের বিশেষ সময়ে ঋতুচক্রের বা পিরিয়ড এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেহেতু বংশবৃদ্ধির এই প্রয়োজনীয়তা শুধু মানব সমাজকে ঘিরে সীমাবদ্ধ না। এক্ষেত্রে জীবকুলের সকল প্রাণীদের বিষয়ে একটি ধোয়াশা বিষয় থেকেই যায়। তাহলে কি অন্য প্রাণীদেরও এমন ঋতুচক্রের মধ্য দিয়ে যেতে হয়? এমন প্রশ্ন থেকেই যায়।
দেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক গণমাধ্যম সাইয়েন্স বি এর বরাতে জানা যায়, ঋতুচক্র বা পিরিয়ড হলো জরায়ুর আস্তরণের (এন্ডোমেট্রিয়াম) ক্ষরণ। এটি নির্দিষ্ট স্তন্যপায়ী প্রজাতির যৌন প্রজনন বয়সী স্ত্রীদের মধ্যে নিয়মিতভাবে ঘটে থাকে। যদিও বিজ্ঞানের অনেক শাখায় এই সংজ্ঞায় দ্বিমত দেখ্যা যায়। তবে এই প্রক্রিয়া সাধারণত, বিজ্ঞানের ভাষায় প্রাইমেটদের অর্থাৎ মানুষ, বানর, হনুমান, গরিলা ও লেমুরজাতীয় স্তন্যপায়ীদের নিয়ে গঠিত উন্নত হাত, পা ও বড় মস্তিষ্কবিশিষ্ট একটি বর্গ) মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে করা হতো।
কিন্তু বর্তমানে প্রাইমেট ছাড়াও হাতী, লাল ক্যাঙ্গারু, সিংহ, বিড়াল, কুকুরসহ বিশেষ প্রজাতির বাদুড়, ইঁদুরের শরীরের এমন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সাধারণত ঋতুচক্র বা পিরিয়ড বলতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রক্তক্ষরণকেই বুঝে থাকি আমরা। কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির দেহে বিভিন্ন ভাবে এই চক্র প্রকাশ পায়। যেমন, বিড়াল হলো বিজ্ঞানের ভাষায় পলিস্টাস প্রজননকারী প্রাণী। যার মানে এরা এদের ঋতুচক্রের সময় হরমোনাল কিক অনুভব করে যা বছরে ৩-৫ বারের মতো হয়ে থাকে। এইসময় তাদের দেহে যে রকম পরিবর্তন আসে তা মানুষের সাথে তুলনা করলে অনেকটা একই ধাচের দেখায়। তবে বাহ্যিকভাবে রক্তপাত তেমন দেখা যায় না। ক্ষেত্র বিশেষে হালকা রক্ত ক্ষরণ হতে পারে যা খুবই সামান্য। অনেক সময় এই অল্প রক্ত ক্ষরণ বোঝাও যায় না।
অপর দিকে হাতির সাথে মানুষের প্রক্রিয়ার বেশ মিল রয়েছে। একটি ঋতুমতী হাতি তার স্যানিটারি তোয়ালে হিসাবে ঘাস ব্যবহার করে এবং সেই সময়কালে সাধারণত নির্দিষ্ট এক জায়গায় অবস্থান করে।
অপরদিকে, একটি স্ত্রী বাঘ প্রতি তিন থেকে নয় সপ্তাহে এস্ট্রাসে প্রবেশ করতে পারে (যে সময় একটি মহিলা গ্রহণশীল এবং তরুণ গর্ভধারণ করতে সক্ষম) এবং তার গ্রহণ ক্ষমতা তিন থেকে ছয় দিন স্থায়ী হয়।
আর বাদুড়ের ক্ষেত্রে, বাদুড় ৩৩ দিন নিজ আবাসস্থলে অবস্থান করে তার শরীরের এই পরিবর্তন নিয়ে বিশ্রাম নেয়। তাদের ক্ষেত্রে রক্তপাত শুধু ১ দিনই হয়। অন্যান্য দিন শুধু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হয়। ১৮ তম দিনে ডিম্বাশয়ে একটি প্রিওভুলেটরি ফলিকল পাওয়া যায় যখন এলএইচ (লুটিনাইজিং হরমোন) এবং এফএসএইচ (ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন) এর মাত্রা তাদের সর্বোচ্চে পৌঁছায়, একটি ঘন এন্ডোমেট্রিয়ামের সাথে।
এভাবে জীবকুলে গর্ভধারণে সক্ষম সকল প্রাণীরই শারীরবৃত্তীয় কিছু পরিবর্তন ঘটে থাকে। তবে এর মানে এটা নয় যে তা মানুষ বা অন্যান্য প্রাইমেটদের মতো হুবুহু একই প্রক্রিয়াতেই হবে।
সূত্রঃ সায়েন্স বি
এসকে/
খবরটি শেয়ার করুন