শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছোট গল্প

রহস্যময় চিরকুট - হাসিনা সাঈদ মুক্তা

হাসিনা সাঈদ মুক্তা, লেখক

🕒 প্রকাশ: ০৩:৫৪ অপরাহ্ন, ৮ই জুলাই ২০২৩

#

সারা আমেরিকা থেকে এসেছে বাংলাদেশে।

আসার পর থেকে বাসার সবাই তাকে ঘিরে আছে।

প্রায় দশ বছর পর সে এসেছে।

ধানমন্ডি দুই-এ তাদের বিশাল আলিশান বাসা।

মা এমিলি তার খুব খাতির যত্ন করছে।

এমিলি বিদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন মহিলা।

সারার ছোট ভাই  বাপ্পি অনেকদিন ধরে অসুস্থ।

সারার যমজ বোন ন্যান্সি আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল। 

তখন সারা আমেরিকায়।

মেডিকেল সাইন্স নিয়ে পড়ছে সারা।অপরদিকে ন্যান্সি বাংলাদেশে সরকারি মেডিকেলে চান্স পায়।তাদের বাবা জাফর শরাফতও একজন চিকিৎসক ছিলেন।

ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিলো তাঁর।সেখানে তার প্রথম স্ত্রী দিলারারও দূর্ঘটনা ঘটে এবং মারা যায়।জাফর শরাফত সে যাত্রায় বেঁচে যান।

এরপর আমেরিকায় উচ্চতর ডিগ্রী নেবার সময় পরিচয় হয় এমিলির সাথে।

বাপ্পি, এমিলির ছেলে।

শৈশব কিংবা কৈশোরবেলায় ছোটোদের গল্পগ্রন্থে সৎ মা বিষয়ে জানান দেয়া হয়।তাঁরা সচরাচর ভালো হয়না।অন্যের সন্তানকে কষ্ট দেয়,কাজ করায়,খেতে দেয় না ইত্যাদি।

তবে বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর ন্যান্সি ও সারার জীবনে এমন কিছু ঘটেনি।সত্যি বলতে এমিলি নিজেও খুব দুঃখী ছিলো।এমিলি অনাথ ছিলো।তার বাবারও নাকি দ্বিতীয় বিয়ে।এমিলির সৎ মা এলিজাবেথ কিন্তু সে গল্প গ্রন্থের মতো।যেখানে সৎ মা অনেকটাই ভিলেন,তেমন।

এমিলি দেখতে সুন্দরী ও সরল।এমিলির বাবা ডক্টর  ডেভিড হোমার আমেরিকান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।জাফর শরাফত ক্যালিফোনিয়ায় যেখানে থাকতো তার প্রতিবেশি এবং ডেভিডের ছাত্র।

সেসুত্রে এমিলির সাথে পরিচয় ও প্রণয়। 

এমিলি নিজ মুখেও বলতো,তার সৎ মা এলিজাবেথ খুব খারাপ আচরণ করতো।

যেকারণে জাফর শরাফত আকৃষ্ট হতো।এমিলির সানিধ্যে মায়ায় পরে গিয়েছিলো।কারণ জাফরও অনাথ ছিলো।তাছাড়া ডেভিড খুব পছন্দও করতো শরাফতকে।তাই  ডেভিড তুলে দেয় মেয়ে এমিলিকে।

এমিলির সাথে বাবার বিয়ের সময় সারা ও ন্যান্সির বয়স তখন বারো বছর।নানার বাড়ি ফ্রামগেটে থাকতো ওরা।সারা ও ন্যান্সির মামী তনিমা ভালো চোখে দেখতো না।প্রায়ই খাবার নিয়ে খোটা দিতো।

যখন এমিলিকে তাদের বাবা বাংলাদেশে আনলেন সারা ও ন্যান্সির মন আরো খারাপ হয়।

কিন্তু এমিলি খুব সহনশীলতা দেখায়।সারা ও ন্যান্সির সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে।

এমিলি তার সৎ মা এলিজাবেথ কতৃক আঘাতজনিত কথা ও আচরণে ভীষণ কষ্ট পেতো। 

একদিন এক ইংলিশ ছায়াছবিতে এমন গল্প দেখে এমিলি খুব কেঁদে ওঠে।সারা ও ন্যান্সির মায়া হয়।জিজ্ঞেস করতেই এমিলি কষ্টের গল্পগুলো বলে।সারা ও ন্যান্সিও তার নানুর বাড়িতে মামীর একচেটিয়া রাজত্ব ও এমন কুৎসিত আচরণে কষ্ট পেতো।কারণ ততদিনে ওদের নানা বৃদ্ধ ও নানু গত হয়েছিলেন।

সারা ও ন্যান্সি এবং এমিলির জীবনের কষ্টের মুহুর্ত প্রায় মিলে যায়।এভাবে তাদের বন্ধুত্বও প্রগাঢ় হয়।

ন্যান্সির আগুনে পুড়ে মারা যাবার বিষয়টিও রহস্যজনক।সারা ও ন্যান্সির কিছু আত্মীয় এমিলিকেই দায়ী করে।ন্যান্সির মৃত্যু হয়েছিলো কয়েলের আগুন থেকে।সেদিন নাকি মশারীও টানানো ছিলো।ধোঁয়ায় সমস্ত ঘর ভরে গিয়ে ন্যান্সি প্রথমে জ্ঞান হারায় এরপর আগুন ধরে সেখানেই মারা যায়।

এমিলি বাসায় ছিলো না।সে তার বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে কক্সবাজারে গিয়েছিল।বাবা জাফর শরাফতও ঢাকার বাইরে ছিলো।সারা ও ন্যান্সির মামা, মামী ;এমিলিকে দায়ী করে।এমিলি না কী কালো জাদু করেছে ইত্যাদি। 

এদিকে বাপ্পীর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।প্রথমে ন্যান্সির মৃত্যুতে শোক পায়।কারণ ন্যান্সি খুব আদর করতো তাকে।সারা তো বাইরেই চলে গেলো পড়তে।তাই দু ভাইবোনের মধ্যে বেশ ভাব জমে উঠেছিলো।

সারা, এমিলিকে সন্দেহ করতে পারে না।একবিংশ শতাব্দিতে এমিলি কালো জাদু করে তার বোনকে মেরে ফেলবে এটি রীতিমতো অবিশ্বাস্য।

তাছাড়া বাবার সাথে এমিলির বিয়ের সময় এমিলি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে।এমিলি সুন্দরভাবে ধর্মীয় অনুশাসনও মেনে চলে।

ন্যান্সি মারা যাবার পর বাপ্পী কেমন যেন কান্নার আওয়াজ শোনে।পড়ার ঘরের পাশ থেকে কে যেন তাকে ডাকে।কেউ যেন কানে ফিসফিসিয়ে কিছু বলে।

মাঝেমধ্যে সারাকেই জড়িয়ে ধরে ন্যান্সি আপু বলে চিৎকার করে বাপ্পী।

একদিন কাঁদতে কাঁদতে মুখে ফেনা উঠে ওখানেই জ্ঞান হারায়।

সারা খেয়াল করলো বাপ্পী বলছে,"সারা আপু তুমি বাংলাদেশ থেকে চলে যাও তা না হলে তোমাকেও মেরে ফেলবে!"

সারা আকাশ থেকে পরে,"কী?কে মেরে ফেলবে বাপ্পী?বল আমাকে?"

"আমি জানি না তবে ন্যান্সি আপু বলেছে।"

"ন্যান্সি বলেছে?কী বলছিস তুই?ন্যান্সিকে কোথায় পেলি?"

"আমার ঘরে সারা আপু" বলেই মূর্ছা যায় বাপ্পী।

এর কিছুদিন পর একজন হুজুরকে নিয়ে আসে সারা ও ন্যান্সির খালা মাহফুজা।

হুজুরের দোয়া কালামের মাধ্যমে ধানমন্ডির বিশাল বাড়িটা বন্ধ করা হয়।

এরপর হুজুর রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করেন।কিছুদিন পর আশ্চর্য তথ্য জানায় হুজুর।

এই বিশাল বাড়িটি মাহফুজা এবং দিলারার পৈতৃক ভিটা।

তাদের বাবা অর্থাৎ সারা,ন্যান্সির নানা আজগর চৌধুরী   এ বাড়িটি মেয়ে দিলারাকে লিখে দিয়েছিলো।নানার তিন ছেলেমেয়ের কাউকেই বঞ্চিত করেননি।সবাইকে যার যার মতো ন্যায্য ভাগ দেয়া।তবে আজগর চৌধুরী নিজের ছেলে জাভেদ এর সাথে থাকতেন।তার পূর্বে সবাই এখানে অর্থাৎ ধানমন্ডির বাসায় থাকতো।জাভেদ যখন তনিমাকে বিয়ে করে সেও এখানে থাকতো।তবে দিলারার বিয়ের পর দিলারাকে তার ভাগ বুঝিয়ে দিলে তনিমার অন্তরে ক্ষীণ সংকীর্ণতা দেখা দেয়।একসময় তা ভয়ংকর আকার ধারণ করে।

বাড়িটিতে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব পরে।

তবে প্রমান ছাড়াও তনিমাকে দায়ী করা যায় না।

হুজুরের আরও কিছু কথাতেও সারা ও মাহফুজা বিস্মিত হয়।এমিলির একবার চুলো থেকে কাপড়ে আগুন ধরে গিয়েছিলো।কে যেন মাম গায়ে পানি দাও জলদি বলে এক বালতি পানিও ঢেলে দিয়েছিলো।এরপর ছাদে গাছে পানি দিতে গিয়েও পা পিছলে পরে গিয়েছিলো এমিলি।অল্পের জন্যে সিড়ি বেয়ে পরেনি।

সেসব কথাও এমিলি জানায় এতদিন পর।কারণ কেউ-ই তার কথা বিশ্বাস করবে না সেজন্যে।

সারা তার সৎমা এমিলিকেও সন্দেহ করছিলো কিছুটা প্রভাবিত হয়ে।কিন্তু তার ডায়েরিতে কে যেন লিখেছে

"এমিলি মাম ইজ ইন্নোসেন্ট।প্লিজ লিভ দিস প্লেস,লিভ উইথ অল পিপল....।"

সারার হাতের লেখার সাথে ন্যান্সির হাতের লেখা অনেকটাই মিলে।কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এটি কী করে সম্ভব?

সারা তার বাবার সাথে পরামর্শ করে।বাড়ি বিক্রির ব্যবস্থাও করে।এরপর যতদ্রুত সবাইকে নিয়ে পাড়ি জমায় আমেরিকার উদ্দেশ্য।

যাবার পূর্বে তার লাগেজের ওপর চকলেট বক্স,সাদা ফুল ও চিরকুট। 

মিস ইউ পিপল। মে লঙ লিভ ...    । 

চিরকুট এর নিচে "এন" লেখা দেখে শিউরে ওঠে তৎক্ষণাত।

একজন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শির্ক্ষাথীর এমন আশ্চর্য অভিজ্ঞতা, রহস্য ভেদ হয়না আজো।


Important Urgent

খবরটি শেয়ার করুন