সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালন স্মরণোৎসব উদ্বোধন: ভক্তদের ঢল

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১০:২৭ পূর্বাহ্ন, ১৮ই অক্টোবর ২০২৩

#

ছবিঃ সংগৃহীত

মঙ্গলবার (১৭অক্টোবর) কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে শুরু হয়েছে লালন তিরোধান দিবস উপলক্ষে তিন দিনের স্মরণোৎসব। হেমন্তের শুরুর দিনে গরমের তীব্রতা কম হলেও মানুষের ভিড়ে সরগরম পুরো আখড়াবাড়ি।

মঙ্গলবার আখড়াবাড়িতে দেখা গেছে , কুষ্টিয়া শহর থেকে যাওয়ার পথে আখড়াবাড়ির এক কিলোমিটার আগে থেকে সাধু, ভক্ত ও অনুসারীদের ঢল নেমেছে। শত শত মানুষ ছুটছেন আখড়াবাড়ি। মূল ফটকে পৌঁছাতেই ভিড় যেন আর সামনে এগোতে পারে না।

সাধু-ভক্তরা বলছেন, এ বছর উৎসব শুরুর দু-তিন দিন আগে থেকে প্রচুর মানুষ আসছে। শুরুর দিনে পা ফেলার জায়গা ফাঁকা নেই। মায়ার টানে, আত্মার টানে সাধু-ভক্তরা ছুটে আসছেন ধামে। আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ বাদ্যযন্ত্র ও গানে গানে মুখর হয়ে উঠছে।

লালন একাডেমি মিলনায়তনের নিচে আসন পেতেছেন প্রবীণ ফকির নহির শাহ। তাঁর পাশে বসেছিলেন জাপানি নাগরিক কানাকো সরস্বতী সিমিজু ও ফ্রান্সের নাগরিক দেবরাহ জান্নাত। কানাকো খালি কণ্ঠে বাংলায় স্পষ্ট করে গান ধরলেন, ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াময়। পারে লয়ে যাও আমায়...।’

জাপানি নাগরিক কানাকো জানান, ১৬ বছর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানে একটি আশ্রমে তিনি যান। সেখানেই লালনের গান শোনেন। এরপর বাংলাদেশের ফকির নহির শাহের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই ১৬ বছরে এবারই প্রথম তিনি লালনের কোনো অনুষ্ঠানে এসেছেন। এসে তাঁর খুবই ভালো লাগছে জানিয়ে বললেন, লালনের গান হৃদয় আন্দোলিত করে। কাঁপিয়ে তোলে। এ এক মধুর কথা, মধুর সুর।

ফরাসি নাগরিক দেবরাহ অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরে কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা প্রাগপুরে নহির শাহের ধামে থাকেন। তিনি নিয়মিত আখড়াবাড়িতে আসেন। তিনি দাবি জানান, বছরের দুটি উৎসবের এক-দেড় মাস আগে যেন সাধু–বাউলদের নিয়ে মতবিনিময় বৈঠক করা হয়। এতে নানা সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরা সম্ভব হয়। এ ছাড়া এই আখড়াবাড়িতে উৎসবে আসার পর কিছু সমস্যা থাকে, যেগুলো বলার জন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। এগুলো সমাধান করা প্রয়োজন।

সন্ধ্যা ছয়টায় লালন একাডেমির আয়োজনে আখড়াবাড়ির বাইরে কালী নদীর পাড়ঘেঁষা মূল মঞ্চে তিন দিনের আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে সেখানে অতিথিরা বক্তব্য দেন।

বাউল ও লালন একাডেমির শিল্পীরা সেখানে মধ্যরাত পর্যন্ত লালনের গান পরিবেশন করেন। কালী নদীর তীরে বিশাল মাঠে শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসেছে। গান শোনার ফাঁকে সেখানে মানুষ কেনাকাটা করছেন।

১৮৯০ সালের ১ কার্তিক লালন সাঁই কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। এর পর থেকে আখড়াবাড়ি চত্বরে তাঁর ভক্ত-অনুসারীরা তাঁদের সাঁইজিকে স্মরণ করে আসছেন। লালন একাডেমি প্রতিবছর ছেঁউড়িয়ায় একাডেমি চত্বরে লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করে। 

একে/ 

উদ্বোধন লালন স্মরণোৎসব কুষ্টিয়া

খবরটি শেয়ার করুন