বুধবার, ৩রা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে বোরোর বাম্পার ফলনে ভাটির জনপদে অন্যরকম আনন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১০:৩২ পূর্বাহ্ন, ৩০শে এপ্রিল ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট বিভাগের প্রায় প্রতিটি জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।পাকা ধানের সোনালী রঙ হাওরের চারদিকে। আনন্দ উৎসবে ধান কাটছেন কৃষকরা।

পুরো সিলেট অঞ্চলে গত বছর প্রলয়ংকরী বন্যা হয়েছিল। সেই বন্যায় তীব্র কষ্ট ও ভোগান্তি সহ্য করেছেন এ অঞ্চলের মানুষ। তবে এ বছরের বোরোর বাম্পার ফলনে ভাটির জনপদের মানুষ ভুলে গেছেন পেছনের দুঃখের কথা। তাদের মধ্যে প্রাণস্পন্দন ফিরে এসেছে। বৃহত্তর সিলেটের মাঠ থেকে প্রায় ২০ লাখ মেট্টিক টন চাল গোলায় ওঠার স্বপ্নে বিভোর এখন হাওরপাড়ের মানুষ। 

সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ব্রি-২৮ জাতের ফলনে এবার চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওর পাড়ের মানুষ এখন উৎসবে মাতোয়ারা। এ বছর বৃষ্টিপাত হয়েছে পরিমিত। আবহাওয়া ছিল রৌদ্রকজ্জ্বোল। এই অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন হয়েছে ভালো। 

এদিকে কড়া রোদ ঠেকাতে মাথায় গামছা বেঁধে ধান কাটা-মাড়াই দিচ্ছেন কৃষক। বিভিন্ন স্থানে কিষানিরা হাওরপাড়েই নাড়ার আগুনে বড় বড় ডেগে কেটে আনা ধান সিদ্ধ দিচ্ছেন। আর সুর করে তারা গীত করছেন। সিলেটের সব কটি হাওরে যেন ‘শুধু ধান তোলার কাব্য’।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জের বোরো ধান সারা দেশের প্রাণ। সবাই খুশিতে ধান তুলছেন। কিন্তু বিশাল ‘মাঠিয়াইন’ ও ‘শনির’ হাওর থেকে সোনার ফসল ঘরে নিয়ে আসতে ‘জাঙ্গাল’ (জামির মধ্যখানে প্রশস্ত রাস্তা) নেই । তিনি বলেন, তাহিরপুরেই ৫২ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপন্ন হয়। যার আর্থিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা। হাওরের মধ্য দিয়ে কৃষির উন্নয়নের স্বার্থে সাবমর্জেবল রোড নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি কর্মকর্তারাও ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের উত্সাহ দিয়ে চলছেন। মৌলভীবাজরের ‘কাউয়াদীঘি’ হাওরের ধান কেটে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং চলছে। অন্যদিকে হবিগঞ্জে শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা ব্যাহত হচ্ছে।

গড়ে ৬৫ শতাংশ কর্তন শেষ :সিলেট কৃষি বিভাগ জানায়, সিলেটের চার জেলায় শুক্রবার পর্যন্ত গড়ে ৬৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। সিলেটে ৭০ দশমিক ৩ শতাংশ, মৌলভীবাজারে ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। সূত্রমতে, শুধু হাওরে ৮৮ শতাংশ ধান কাটা হলেও হাওর নয় এমন জমিতে ৩৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। হাওরের বাইরে ধান বপন দেরিতে হয়। তাই ধান পাকতে দেরি হয়। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে হাওরে ধান কাটা শেষ হবে। হাওর ছাড়া অন্য জমির ধান কাটা শেষ হতে পুরো মে মাস লাগবে। এ বছর রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় প্রত্যেকে খুশি মনে কাজ করছেন বলে জানান কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।

সিলেটে বিভাগের ১২ লাখ ৮৫ হাজার পরিবার সরাসরি এই বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এ বছর ৪ লাখ ৯০ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। এতে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন চাল। সবচেয়ে বেশি বোরো উৎপাদন হয় সুনামগঞ্জ জেলায়। এখানে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে বোরা চাষ হয়েছে। এতে আশা করা হচ্ছে এ জেলায় সাড়ে ১৩ লাখ টন চাল কৃষকের গোলায় উঠবে। 

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বৃহত্তর সিলেট বিভাগের কৃষকদের সঙ্গে অন্তত ১ হাজার ২০০ হারভেস্টার মেশিন নেমেছে ধান কাটতে। সরকারি ভর্তুকি মূল্যে মেশিনগুলো দিনরাত ধান কাটছে। কিষান-কিষানিরাও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। 

সিলেটে বোরো ফসলকে ঘিরেই  অর্থনীতি ও সমাজনীতি। সন্তানের লেখাপড়া, বিয়েসাদি—সবকিছু। সারা বছরের খোরকি বোরো ধান গোলায় না উঠলে সেই গোলা পূর্ণ হয় অভাব অনটন ও ঋণের বোঝায়। তবে এবার বাম্পার ফলনে হাওরের গল্প ভিন্ন। 

এবার সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বোরো ফসলের খেতে ব্লাস্টার রোগ দেখা দেয়। এছাড়াও সরকারিভাবে ধান কিনতে দেরি হওয়ায় ফরিয়াদের খপ্পরে পড়েছেন কৃষকরা। সব ধান চলে যাচ্ছে ফরিয়াদের গুদামে। ৯৫০ টাকা মণ দরে ফরিয়ারা খলা থেকে ধান কিনে নিচ্ছে। শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছত্তার মিয়া জানালেন, হীরা ধান (মোঠা ধান) ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় খলা থেকেই বিক্রয়  হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার ধান  কেনা শুরু করলে ধানের দাম বেড়ে যেত।

আরো পড়ুন: আজ মধ্যরাতে ইলিশ ধরতে নামবেন জেলেরা

সুনামগঞ্জ জেলায় ধানের সবচেয়ে বড় আড়ত মধ্যনগরের এক আড়তদার বললেন, মধ্যনগরে প্রতিদিন ২৫-৩০ হাজার মণ ধান কিনছেন ৩৪ জন আড়তদার। এই ধান নৌপথে  শানবাড়ী, জয়শ্রী, গাগলাজোড়, ইটনা-মিঠামইন হয়ে আশুগঞ্জ পৌঁছায়। মুন্সীগঞ্জ ও মদনগঞ্জে যাচ্ছে এখানের ধান। এখানকার ৭৫ শতাংশ ধান আশুগঞ্জে বিক্রি হয়। 

সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মইনুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, সুনামগঞ্জসহ ১০ জেলায় আগামী ৭ মে ধান কেনা ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন খাদ্যমন্ত্রী। ধান প্রতি কেজি ৩০ টাকা, চাল প্রতি কেজি ৪৪ টাকা দরে কেনা হবে। ধান কৃষকদের কাছ থেকে, চাল চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কাছ থেকে কেনা হবে। কৃষকরো বলেন, ২৫ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরুর কথা বলেছিলেন কৃষিমন্ত্রী। কিন্তু কী কারণে দেরি হচ্ছে তা তারা জানেন না। এখন কৃষকরা ফরিয়াদের কবলে ।

এম/


 

Important Urgent

খবরটি শেয়ার করুন