সোমবার, ১লা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্মার্ট বাংলাদেশ কতদূর

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, ২৫শে এপ্রিল ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

আব্দুল্লাহ এইচ কাফি

দেশে বর্তমানে ১৮ কোটি ২৬ লাখ সেলফোন গ্রাহক। ইন্টারনেট গ্রাহক সাড়ে ১২ কোটি (বিটিআরসি প্রকাশিত সর্বশেষ হিসাব)। সরকারি বিভিন্ন সেবা এখন অনলাইনে ঘরে বসে পাওয়া যায়। আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণে বড় বড় বিনিয়োগ হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বড় অংশই পূরণ হয়েছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিসহ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার দৌড়ে সফলতার সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছি। এসব উন্নয়নের লেখচিত্রই বলে দিচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী এখন ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে জোর দিচ্ছেন তিনি। ‘ভিশন ২০৪১’ বিনির্মাণে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির জন্য যেসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম শতভাগ শিক্ষিত নাগরিক। এ জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হবে। দেশের নাগরিকদের কর্মমুখী দক্ষতা বৃদ্ধিতেও জোর দেওয়া হবে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে উদ্ভাবনী অর্থনীতির কথাও বলা হচ্ছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার মানোন্নয়নে হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট (হিক্যাপ) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। হিক্যাপের আওতায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিখন, গবেষণা ও উন্নয়ন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা হবে।

আমি মনে করি, সরকারের এই পরিকল্পনা সত্যিই চমৎকার। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর যে বিশ্ব অচিরেই আমাদের সামনে এসে হাজির হবে, সেখানে জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে মাইক্রোসফটের মালিকানাধীন ওপেনআই নির্মিত কৃত্রিম বুদ্ধির চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির সক্ষমতা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। চ্যাটজিপিটির পরীক্ষামূলক সংস্করণের সক্ষমতাই বলা যায়, বিশ্বকে একটা ধাক্কা দিয়েছে। মার্কিন অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনের এআই পাইপলাইনে রয়েছে। কাজেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্ব আমাদের সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে– এতে কোনো সন্দেহ নেই। শ্রমনির্ভর আমাদের যে অর্থনীতি, টিকে থাকতে হলে তার বিকল্প আমাদের বের করতেই হবে। আমাদের রেমিট্যান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তর জায়গা প্রবাসীদের আয়। ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে শ্রমনির্ভর কাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে এবং বাড়তে থাকবে। এখানেও বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

কাজেই বিশ্বব্যবস্থায় টিকে থাকার জন্য, মধ্যম থেকে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেধা ও জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি কতটা কাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ জন্য প্রয়োজন দক্ষ, কর্মঠ জনশক্তি।

জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির মূলকথাই হচ্ছে দক্ষ ও স্মার্ট জনশক্তি। স্মার্ট বাংলাদেশের ‘হিউম্যান ক্যাপিটাল’ হবে দক্ষ জনশক্তি। বিশ্বব্যাংকের মতে, জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির চারটি খুঁটি রয়েছে। তা হলো ইনস্টিটিউশন (বিশ্ববিদ্যালয়, ল্যাবরেটরিজ, ইনকিউবেটরস ইত্যাদি), উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেম, মানসম্মত শিক্ষা এবং পর্যাপ্ত ও আধুনিক আইসিটি অবকাঠামো। এই চারটি খুঁটি ব্যাপক পরিসরে দক্ষ জনবল তৈরিতে, উদ্যোক্তাদের পণ্য ও সেবা উন্নয়নে কাঠামোগত সুবিধা দেবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন ঘোষণা করা হলো, তখন থেকেই আমি মানসম্মত শিক্ষা, দক্ষ জনবল তৈরি নিয়ে কথা বলে আসছি। যেসব দেশ উন্নত বলে আমরা জানি, তাদের মূলমন্ত্রই জ্ঞানভিত্তিক ইকোনমি, দক্ষ জনশক্তি। তারা উদ্ভাবন ও গবেষণায় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সরকার তার সামর্থ্যের মধ্য থেকে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করেছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পেলেও এখনও আমাদের জনবল সর্বক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে ওঠেনি। এ ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে সরকারি সেবায় সর্বক্ষেত্রে যে হয়রানি কিংবা অবৈধ লেনদেন বন্ধ হয়েছে, তা বলা যাবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হবে, সেই অর্থ যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

আব্দুল্লাহ এইচ কাফি: সাবেক প্রেসিডেন্ট ও লাইফটাইম অনারারি চেয়ারম্যান, এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশন (অ্যাসোসিও)।

আরো পড়ুন:


মানুষ কী তবে জীবন নিয়ে ভাবনাই ছেড়ে দিয়েছে?

স্মার্ট বাংলাদেশ

খবরটি শেয়ার করুন