মঙ্গলবার, ২২শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** লিটন দাস জয় উৎসর্গ করলেন নিহতদের স্মরণে *** সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতে সিরিজ বাংলাদেশের *** বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে সরকার *** বিএনপি-জামায়াতসহ চার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা *** প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান হতে পারবেন না—এই দাবির যৌক্তিকতা নেই: সালাহউদ্দিন *** আখের চিনি দিয়ে ‘ট্রাম্প ভার্সন’ বাজারে আনছে কোকা-কোলা *** বিমান বিধ্বস্তে হতাহতদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে সরকার: প্রেস উইং *** ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি, ফিরেছেন বাসায় *** জাকেরের ফিফটিতে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ *** ২৪শে জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষাও স্থগিত

হিরোশিমা ও নাগাসাকি ট্রাজেডি থেকে মানব ইতিহাসের শিক্ষা

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:৫২ অপরাহ্ন, ৯ই আগস্ট ২০২৩

#

ছবিঃ সংগৃহীত

আজ থেকে ঠিক ৭৮ বছর আগে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে, আগস্টের ৬ এবং ৯ তারিখ যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে পরপর দুটি আণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল। বিশ্বের নৃশংস ইতিহাসে প্রথম কোনও যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল এই গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র। এতে প্রাণ হারিয়েছিল দেশটির লাখ লাখ মানুষ। 

৬ আগস্ট (হিরোশিমা দিবস):

৬ আগস্ট জাপানি সময় ঠিক সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে জাপানের হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। হিরোশিমায় যে বোমাটি ফেলা হয়েছিল মার্কিনিরা তার নাম দিয়েছিল ‘লিটল বয়।’ এটির শক্তি ছিল প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টন টিএনটির বিস্ফোরণ ক্ষমতার সমান। দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে যত স্থাপনা ছিল সবই মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। চোখের নিমিশে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে শহরের অধিকাংশ স্থান।

৯ আগস্ট (নাগাসাকি দিবস):

৯ আগস্ট সকাল ১১টা ২ মিনিটে মার্কিন বিমান বাহিনী অতর্কিতভাবে ‘ফ্যাটম্যান’ নামের তাদের দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমাটি নিক্ষেপ করে নাগাসাকিতে যাতে পুরো শহরটি পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বোমাটির আনুমানিক ওজন ছিল ৪ হাজার ৬৩৩ কেজি, লম্বায় ছিল ১০ দশমিক ৭ ফুট (৩ দশমিক ৩ মিটার), ব্যাসরেখা ছিল মোটামুটি পাঁচ ফুট (১ দশমিক ৫ মিটার) বহনকারী বিমানের নামটি ছিল বি-২৯ সুপারকোর্টস যার অন্য নাম "বক্সার"। 

মাটি থেকে ৫০০ মিটার ওপরে বিস্ফোরিত হওয়া ফ্যাটম্যান নিমেষেই কেড়ে নিয়েছিল ৭৪ হাজার তাজা প্রাণ, তাদের মধ্যে শ্রমিকের সংখ্যাই ছিল ২ হাজার জন আর তার সঙ্গে ছড়িয়ে দিয়েছিল তেজস্ক্রিয়তা যা এখনো জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি জুড়ে আবদ্ধ। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখে পৌঁছেছিল। এই বোমা ছিল ‘লিটল বয়’ থেকেও বেশি ধ্বংসাত্মক; কিন্তু হিরোশিমার মতো বাণিজ্যিক এলাকায় না ফেলে একটি উপত্যকায় ফেলা হয়েছিল। তবুও ক্ষতি ছিল একই পরিমান। 


হিরোশিমা ও নাগাসাকি দিবস জাপানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর মাঝে আণবিক যুদ্ধের প্রতিরোধ এবং নিউক্লিয়ার স্বাক্ষরে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করা হয়।

এই ঘটনার পিছনের মুখ্য কারণ ছিল বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি টেনে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সফলতা নিয়ে আসা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে জাপানের শক্তি ও সামর্থ্য ভাগাভাগি করার চেষ্টা ছিল। এই বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী ছিল যে, জাপান যুদ্ধ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে।  

৬ আগস্ট হিরোশিমায় আণবিক আক্রমণের দুদিন পর যুক্তরাষ্ট্র আবার নাগাসাকিতে আণবিক বোমা নিক্ষেপ করার কি কারণ ছিল?  সংক্ষিপ্তভাবে মুখ্য কারণগুলো জেনে নিই:    

যুদ্ধের শেষ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশে জাপানিদের শক্তি ও সামর্থ্য চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। এতে করে প্রথমে হিরোশিমা এবং পরে নাগাসাকিতে বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সামর্থ্য ভাগাভাগির চেষ্টা না করে যুদ্ধ শেষ করতে চেষ্টা করতেছিল।    

জাপানীদের শক্তি-সামর্থ্য কমানো: আগের আণবিক বোমা নিক্ষেপের ফলে, জাপানের শত্রুদের মানসিকতা এবং শক্তি-সামর্থ্য প্রতিরোধ করতে অবশ্যম্ভাবি হয়ে উঠেছিল। আমেরিকার এই দ্বিতীয় বোমা নিক্ষেপ জাপানের সর্বশেষ চেষ্টা ধুলিস্যাৎ করতে সাহায্য করে।   

হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে আনবিক বোমা নিক্ষেপ মানবইতিহাসে একটি দুর্ঘটনা এবং বিশাল মানবাধিকারের লক্ষ্যে একটি মৌলিক পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

এই ঘটনাগুলি মানবসমাজকে বিভিন্ন শিক্ষাসূত্র দেয়:  

নিউক্লিয়ার যুদ্ধের অত্যধিক মর্মস্পর্শী প্রভাব: হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ঘটনাগুলো দেখায় যে নিউক্লিয়ার যুদ্ধের প্রভাব একটি মানবজীবনের দ্বারা উত্থিত হয়েছে। এটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও ধ্বংসাত্মক। এই ঘটনা পরিষ্কার অবকাশ দেয় যে এই প্রকার যুদ্ধ যে কোনো রকমের মানবজীবন এবং প্রকৃতির প্রতি একটি মৌলিক আঘাত সৃষ্টি করতে পারে।  

মানবজীবনের মৌলিক মূল্যবোধ: এই ইতিহাস মানবজীবনের মৌলিক মূল্যবোধ এবং মানবিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা করতে উদ্ভুদ্ধ করে। এটি সম্পর্কে সচেতন করে যে মানবজীবনের প্রতি ব্যক্তির সম্মান এবং মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ।  

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শান্তির প্রতিষ্ঠান: হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ঘটনাগুলি পৃথিবীর পরিবর্তনের একটি মহান স্বাক্ষর রেখেছে এবং এই ক্রান্তি প্রতিরোধের সাথে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মহত্ত্ব পরিলক্ষিত হয়। এর থেকে মানবজাতি একে অপরকে সহায়তা, সামাজিক উন্নতি ও  শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদ সুদৃঢ় করতে শিখে।    

সম্প্রদায় এবং মানবিক একতা: হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ট্রাজেডি সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য ও মানবিক একতা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এটি মানবজাতিকে সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা এবং সামাজিক সম্মেলনের মূল মানবিক মৌলিকতা সৃষ্টি করতে উপলব্ধি করায়।

লেখক: সাইদুল কাদের, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

এসকে/ আই. কে. জে/ 



যুক্তরাষ্ট্র জাপান হিরোশিমা এবং নাগাসাকি ট্রাজেডি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন