সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের সবচেয়ে বড় খেজুর গুড়ের হাট

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:১৮ অপরাহ্ন, ১৬ই জানুয়ারী ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

জমজমাট চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট। শীতের এই সময়ে গুড় কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন ব্যাপারীরা। বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য কয়েকশ বছরের। তবে এবার এই হাটে গুড়ের চাহিদা বেশি, কিন্তু সরবরাহ কম। ফলে বাইরের জেলা থেকে এসে পর্যাপ্ত গুড় না পেয়ে ক্রেতারা হাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন।

জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, খেজুর গাছের সংখ্যা কম থাকায় গুড় উৎপাদনের পরিমাণ কমে গেছে। গুড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের চারপাশে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ক্রেতা বিক্রেতাদের হাক ডাকে মুখর হয় এই খেজুর গুড়ের হাট। সপ্তাহের দু-দিন শুক্রবার ও সোমবারে খেজুর গুড়ের হাট বসে। এই হাটে এবার খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। কৃষকরা তাদের খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। আবার অনেক খেজুর গাছের বয়স হয়ে যাওয়া তা থেকে রস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গাছের সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি দেশে খেজুর গুড়ের সরবরাহ কমে যাচ্ছে।

এদিকে জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, গুড়ের চাহিদা পূরণ ও সঙ্গে গাছ বৃদ্ধি করা। দেশে গুড়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ায়। একই সঙ্গে গুড়ের চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক রাখা যায়।

আরো পড়ুন : হেলিকপ্টারে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন প্রবাসী যুবক

হাট সূত্রে জানা গেছে, এই ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জের গুড়ের হাটে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ২০০-২৫০ টাকা করে। প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার গুড় বেচাকেনা হয়। প্রতিবছর এই হাট থেকে বেচাকেনার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। এই হাটের গুড় দেশের জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, মাগুরা, রাজবাড়ি, পঞ্চগড়, সিলেট, খুলনা, রংপুর, রাজশাহীসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়। বিক্রেতারাও এই হাটে গুড় কিনতে আসেন। এই হাটে গুড় বেচাকেনা করে কৃষক ও হাটমালিকরাও লাভবান হন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চুয়াডাঙ্গা সদরে ৯৮ হাজার ৫০০টি গাছ, আলমডাঙ্গায় ৪৫ হাজার ৫১০টি গাছ, দামুড়হুদায় ৯ হাজার ২০০টি গাছ, জীবননগরে ৩৭ হাজার ৪৫০টি গাছসহ দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৬০টি গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে এবার গুড়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রা গুড়ের বিক্রির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিবার এই গাছ প্রস্তুতে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৩০ হাজার কৃষকের।

পাবনা জেলা থেকে হাটে আসা ক্রেতা জানান, চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জের এই খেজুর গুড়ের হাটে এসে প্রায় ট্রাক ট্রাক গুড় কিনে নিয়ে যাই। এই হাটের গুড়ের চাহিদা ভালো, তাই চাহিদাও বেশি। এই হাটের গুড় কিনে নিয়ে অন্যহাটে বিক্রি করি। এতে আমাদের লাভ হয়। এখানে গুড়ের সুনাম আছে।

অপর ক্রেতা জানান, এবার এই গুড়ের হাটে গুড়ের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু তুলনামূলক সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে পর্যাপ্ত গুড় না পেয়ে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছি। খেজুর গাছের সংখ্যা এবার কমে গেছে। তাই গুড়ের চাহিদা পরিমাণ মতো সরবরাহ হচ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাড়োকান্দি গ্রামের একজন জানান, গত বছর ২৫টি গাছ প্রস্তুত ছিল তার। এবার সে সংখ্যা মাত্র ১২টি গাছ প্রস্তুত হয়েছে। এই গাছ থেকে যেটুকু রস পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই গুড় তৈরি করা হচ্ছে। পরে তা হাটে তোলা হয়েছে। দামও এবার ভালো।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট জমে উঠেছে। সপ্তাহের দু-দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই হাটে খেজুরের গুড় বেচাকেনা হয়। তবে এবার জানা গেছে যে হাটে গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। সরবরাহ বাড়ানোর জন্য খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়াতে হবে। জেলার কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা গুড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

এস/ আই. কে. জে/ 


খেজুর গুড় হাট

খবরটি শেয়ার করুন