ছবি: সংগৃহীত
বছরখানেক আগে পরিচয় আনন্দ সাহা ও অমরিতা সরকারের। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ের দিনক্ষণও নির্ধারিত হয় এ বছরের ১৫ই ডিসেম্বর। কিন্তু হঠাৎ ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনায় বদলে যায় সব পরিকল্পনা।
গত ৭ই আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে মানিকগঞ্জে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন আনন্দ। তার দুই হাত ও একটি পা ভেঙে যায়, কোমরে লাগে প্রচণ্ড আঘাত। দুর্ঘটনার পর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে তাকে মানিকগঞ্জের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না; চলাফেরাতেও পুরোপুরি অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
প্রিয়জনের এমন সংকটময় সময়ে পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেন অমরিতা। শুধু পাশে থাকা নয়, অসুস্থ আনন্দকে একা ফেলে যেতে চাননি তিনি। তাই দুই পরিবারের আলোচনায় বিয়ের আয়োজন এগিয়ে আনা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ঠা সেপ্টেম্বর) রাতে মানিকগঞ্জ শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের হলরুমেই সম্পন্ন হয় তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালের সেই বিয়ের ছবি। এতে দেখা যায়, হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দুই হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা আনন্দ কনের মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছেন। ধর্মীয় আচার মেনেই সম্পন্ন হয় বিয়ে। উপস্থিত ছিলেন দুই পরিবারের কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন।
আনন্দ সাহা মানিকগঞ্জ শহরের চান মিয়া লেন সড়কের বাসিন্দা, বাবা অরবিন্দ সাহা স্থানীয় ব্যবসায়ী। শহরে তার কয়েকটি ব্যবহারিক পণ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। নববধূ অমরিতা সরকার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী গ্রামের মেয়ে। তিনি বর্তমানে মানিকগঞ্জ শহরের খানবাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। মানিকগঞ্জ শহরের আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আনন্দ সাহা।
হাসপাতালের মেডিকেল অ্যান্ড ইউনিট প্রধান সিরাজুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, রোগীর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেই হাসপাতালে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। অল্পসংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এতে অন্য কোনো রোগীর স্বাস্থ্যসেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
আনন্দের চাচাতো ভাই অমি সাহা আজ শুক্রবার সকালে বলেন, ‘ডিসেম্বরে বড় আয়োজনে বিয়ের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে এখন আমাদের প্রথম কাজ আনন্দের চিকিৎসা ও সেবা। তাই পরিবারের সিদ্ধান্তে গতকাল রাতে সীমিত পরিসরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। নবদম্পতির জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অ্যান্ড ইউনিট হেড ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'দুই পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের বিয়ের বিষয়টি জানালে আমরা গুরুত্ব সহকারে কনসালটেন্টদের সঙ্গে আলোচনা করি। রোগীর অবস্থা আগের তুলনায় স্থিতিশীল মনে হওয়ায় ক্যাবিনে নয়, হাসপাতালের অব্যবহৃত অংশে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করার অনুমতি দেওয়া হয়। আমাদের কর্তৃপক্ষ সবসময় রোগীদের সেবায় আন্তরিক।'
খবরটি শেয়ার করুন