ছবি: সংগৃহীত
দৈনিক আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের (৭১) খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় তার পরিবার রাজধানীর রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। তার সহকর্মীরা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিকের খোঁজ দেওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম আরো তরান্বিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
রমনা থানায় পরিবারের জিডির পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিকেলে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বিভুরঞ্জন সরকারের বাসায় গিয়েছিলেন। তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন। বিভুরঞ্জনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর কিছু ঘটেছে কি না, তা বোঝার জন্য ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখছেন তারা। এই সাংবাদিক ঋণের দায়ে জর্জরিত বলে সুখবর ডটকমকে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সাংবাদিক।
এর মধ্যে আজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বিভুরঞ্জনের একটি খোলা চিঠি প্রচার করেছে। এতে অনলাইন সংবাদমাধ্যমটি জানায়, 'বিভুরঞ্জন সরকার লেখাটি বিডিনিউজকে ই-মেইল করেন গতকাল ২১শে আগস্ট সকাল সোয়া ৯টায়। ফুটনোটে তিনি লেখেন, "জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।” তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ওইদিন সকাল ১০টার দিকে আজকের পত্রিকার অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি।
খোলা চিঠিতে বিভুরঞ্জন নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিকেল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ‘ফেল করা’, বুয়েটে থেকে পাস করা ছেলের ‘চাকরি না হওয়া’ এবং নিজের আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা লিখেছেন।
বিভুরঞ্জন সরকার গত ১৬ই আগস্ট থেকে আজকের পত্রিকায় সাত দিনের ছুটিতে ছিলেন। তার পরিবার জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার (২১শে আগস্ট) সকালে তিনি মোবাইল ফোন ও ট্যাব বাসায় রেখে বের হন। এরপর থেকে আর বাড়ি ফেরেননি। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি।
বৃহস্পতিবার রাতে তার ছেলে ঋত সরকার রাজধানীর রমনা থানায় জিডি করেন। জিডিতে উল্লেখ করেন, সকাল ১০টার দিকে তার বাবা সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বের হন। জিডিতে বলা হয়, আজকের পত্রিকার অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি অফিসেও যাননি।
আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে যোগাযোগ করা হলে কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকারের স্ত্রী শেফালি সরকার সুখবর ডটকমকে বলেন, গতকাল সকালে কর্মস্থল আজকের পত্রিকার অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। বিকেল ৫টার মধ্যে বাসায় ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
পুলিশ কর্মকর্তারা বিকেলে বাসায় এসেছেন জানিয়ে শেফালি সরকার বলেন, তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন। জানতে চাইলে রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তারেক ইসলাম বলেন, বিভুরঞ্জন সরকার বাসা থেকে বের হওয়ার পর কিছু ঘটেছে, তা বোঝার জন্য ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখছেন তারা।
বিশিষ্ট এই সাংবাদিকের খোঁজ পাওয়া না যাওয়ায় পরিবারের পাশাপাশি তার সহকর্মী ও সাংবাদিক সমাজও উদ্বিগ্ন। অনেক সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
বিভুরঞ্জন সরকারের ঘনিষ্ঠজন ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহবুব কামাল আজ বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, সাংবাদিকতা জীবনের আমার প্রথম সহকর্মী বিভুরঞ্জন সরকার গতকাল সকালে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন, ২৮ ঘণ্টা পার হলেও এখনো বাসায় ফেরেননি। আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের সঙ্গে শেষ যে কথা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে আর্থিক সংকটে জর্জরিত হয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেছেন তিনি। আমি ইতোমধ্যে ডিবির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাকে খুঁজে বের করতে অনুরোধ করেছি। সমস্যা হলো, মোবাইল ফোন সেটটিও নিয়ে যাননি তিনি। আমরা ভালো খবরের অপেক্ষায় আছি।
সাংবাদিক আফজাল বারী লিখেছেন, 'বিভু দা (বিভুরঞ্জন সরকার) আগেও নিখোঁজ হয়েছিলেন। এমনকি আত্মহত্যার মতো ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। তিন বছর আগে (২০২৩ সাল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের গেস্টরুমে বসে খারাপ সময়ের গল্পকালে তিনি বলেছিলেন। আজকের পত্রিকায় জুনিয়রের আন্ডারে মনোকষ্ট নিয়ে যে জব করছেন- এমনটিও শুনেছি তার মুখে। প্রথিতযশা ও জ্যেষ্ঠ এ সাংবাদিক সবার উদ্বেগ কাটাতে সুস্থভাবে ফিরে আসুক, কামনা করি।'
আজ বিকেল ৫টা ১৬ মিনিটে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে সাংবাদিক মাহবুব কামাল লেখেন, প্রতি মিনিটে ফোন। ফোনে কথা বলতে বলতে এডিটোরিয়াল (দৈনিক যুগান্তরের জন্য) লিখতে হয়েছে। এখন দেখছি আমার প্রেসার বেড়ে যাবে। বিভুদাকে বলছি আমাকে রেহাই দিন। বড় সমস্যা হচ্ছে, তিনি একগাদা ওষুধ খান, বৌদি নিয়ম করে খাওয়ান। একদিন ওষুধ না খেলে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তিনি মোবাইল ফোন তো নেনইনি, ওষুধও নিয়ে যাননি। ফিরে আসুন, আমরা সবাই মিলে আপনার সমস্যার সমাধান করব। রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকবো না।'
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন