ছবি: সংগৃহীত
প্রবাসীদের উপর প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে ইউরোপে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে চীনা অপরাধের মাত্রা। ২০১০ সালে, ছয়জন চীনা সন্ত্রাসীর একটি দল তাদের প্রতিপক্ষের দুই সদস্যকে হত্যা করে। ভায়া স্ট্রোজিতে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা ইউরোপে চীনা অভিবাসীদের অপরাধের দিক তুলে ধরে।
২০১৭ সালে এ তদন্ত শেষ হয়। তদন্তে উঠে আসে আরেক চমকপ্রদ তথ্য। জানা যায়, ইতালির বড় পর্যায়ের মানুষদের সখ্যতা রয়েছে চীনের সাথে।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার শাসনামলে চীনের বাইরে অপরাধের সীমানা বিস্তৃত করেছে। ইতালি এবং ইউরোপের বিভিন্ন অংশে অনুপ্রবেশ এবং অপরাধমূলক বিভিন্ন কাজে চীনাদের সম্পৃক্ততা লক্ষ্যণীয়।
দেখা যায়, চীনা অপরাধীরা অভিবাসীদের উপর নজরদারি এবং তাদেরকে ভয় দেখানোর কাজের সাথে জড়িত।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি তাদের দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী, ধনী ও সফল ব্যক্তিকেই দেশের বাইরে যাওয়ার বা কাজ করার সুযোগ প্রদান করে। এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি কোন উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। এ সুযোগের বিনিময়ে তখন ঐ ব্যক্তি চীনা অপরাধীদের রক্ষা করে।
চীনা সংঘটিত অপরাধের তদন্তের ব্যাপারেও ইউরোপীয় পুলিশকে সাহায্য করতে নারাজ চীন সরকার।
অর্থ যেকোন অপরাধ সংঘটনের আরেক চালিকাশক্তি। ইতালি, স্পেন এবং ফ্রান্সে চীনা অপরাধীদের সহযোগিতা করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে চীনা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে।
মাদক পাচারকারীদের প্রধান অর্থের যোগানদাতাও হয়ে উঠেছে চীনা মাফিয়ারা। তারা বেশ কিছু দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন অবৈধ টাকা সারা ইউরোপে ছড়িয়ে দিচ্ছে চীন।
এই এক বছরে, রোমেস ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে পুলিশ ১৬ টি চীনা কুরিয়ার আটক করেছে যেখানে ৪১০ লাখেরও বেশি মার্কিন ডলার পাওয়া যায়।
ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানির সাথে জড়িত চীনাদের শনাক্ত করেছে মার্কিন আইন প্রয়োগকারীরা। মূলত আটলান্টিকের উভয় পাশেই অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে চীন।
অপরাধী এবং চীন সরকারের মাঝে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দেশের বাইরে প্রভাব বিস্তারের জন্য অপরাধীদের সহযোগিতা করছে চীন সরকার।ইউরোপকে বিভক্ত ও দুর্বল করার জন্যে চীনা আক্রমণ সম্পর্কে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন।
চীনা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সম্প্রতি একটি জোট গঠন হয়েছে। ইতালির সরকারি তথ্য মতে, প্রাটো চায়নাটাউনে ১৯৯০ সালে, মাত্র ৫২০ জন চীনা বংশোদ্ভূত বাসিন্দা ছিলেন।বর্তমানে ২ লাখ মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৪০ হাজারই চীনা বংশোদ্ভূত নাগরিক। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের পর, ইতালিতেই সর্বাধিক সংখ্যক চীনা নাগরিক বাস করেন।
তবে চীনা নাগরিকদেরকে বিশ্বাস করে না ইতালির বাসিন্দারা। প্রায়শই চীনা বণিকদের কর ফাঁকি, কম মজুরি প্রদান ইত্যাদি নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। ২০০০ এর দশকে চীনা অপরাধ উত্থানেরও প্রধান শিকার চীনা অভিবাসীরা।
২০১১ সালে, ভায়া স্ট্রোজির জোড়া খুনের সাক্ষীরা প্রাটোর লিন গুওচুন ওরফে লাওলিনের সম্পর্কে পুলিশকে জানায়।প্রবাসীদের উপর নজরদারির অপরাধে পুলিশ রোমের ঝাং নাইজংকে শনাক্ত করে। পরবর্তীতে জানা যায়, ঝাং লিনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থন নিয়ে কথিত অপরাধীরা চীনের বাইরে ইউরোপীয় বিভিন্ন শহরে অবস্থান করছে। প্রবীণ মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, চীন সরকার বিভিন্ন অপরাধীদের ব্যবসার সুযোগ দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ প্রদান করে।
তাছাড়া নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার জন্যেও অনেক চীনা রাজনীতিবিদেরা অপরাধীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।ফ্রাঙ্কো নামে পরিচিত ঝেং ওয়েনহুয়া অনেক অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকলেও তিনি এখনো নেতা হিসেবে কাজ করে চলেছেন।
মেয়রসহ চীনের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে দেখা করতে দেখা যায় তাকে। ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরেন্সের মেয়র এবং চীনের রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে দেখা যায় তাকে। মার্চ মাসে তিনি ফুজিয়ান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।মানবাধিকার সংস্থা, সেফগার্ড ডিফেন্ডারস ৫০ টিরও বেশি দেশে চীনা প্রাদেশিক পুলিশ বাহিনির তত্ত্বাবধানে ১০০ টিরও বেশি গোপন স্টেশনের তথ্য প্রকাশ করে। গত বছর তারা রিপোর্ট জারি করার পর, ১২ টি দেশ এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে।
আরো পড়ুন: পাকিস্তানে রকেট লঞ্চার দিয়ে হিন্দু মন্দিরে হামলা
এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিক্রিয়া ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। যদিও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন মার্কিন কর্তৃপক্ষকে ভিত্তিহীন অভিযোগ করার দায়ে অভিযুক্ত করে।
ওয়াং বলেন, এখানে কোনো তথাকথিত বিদেশি পুলিশ স্টেশন নেই। চীন অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনেই চলে। চীন আন্তর্জাতিক আইন কঠোরভাবে পালন করে এবং সব দেশের বিচারিক সার্বভৌমত্বকেও সম্মান করে।
অন্যান্য দেশের তুলনায় ইতালিতে চীনা পুলিশ স্টেশনের সংখ্যা বেশি, প্রায় ১১ টি। ২০১৬ সালে চীনা পর্যটক এবং অভিবাসীদের সুরক্ষা উন্নত করার লক্ষ্যে ইতালি সরকার টহল কর্মসূচি চালু করে।
এ কর্মসূচির আলোকে চীনা পুলিশ অফিসারদের ইতালির পুলিশ অফিসারদের সাথে যৌথভাবে টহলের অনুমতি প্রদান করা হয়। যদিও এর ফলে ইতালিতে অবৈধ পুলিশ স্টেশন স্থাপনের ব্যাপারটি সহজ হয়ে যায়।
তাছাড়া স্পেনে মানবপাচার, নথিপত্র জাল করা, শ্রম আইন লঙ্ঘন এবং জালিয়াতির সাথেও যুক্ত রয়েছে চীনা অপরাধীরা।
মোট সম্পদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক বর্তমানে চীনের শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যাংক।
এসি/ আই.কে.জে/