প্রতীকী ছবি
একাকীত্ব মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদি চাপ তৈরি করতে পারে, যার ফলে সৃষ্ট প্রদাহে মানবদেহের কোষ ও রক্তনালির ক্ষতি হয়। তরুণরা বিশেষ করে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা মূলত একাকীত্বের মহামারির মূল ভুক্তভোগী।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিবেক মূর্তির ভাষ্যমতে, জনস্বাস্থ্যের পরবর্তী বড় সমস্যা হচ্ছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং একাকীত্ব। একাকীত্বের সমস্যা এতটাই ভয়াবহ যে এটি দৈনিক ১৫টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতি করে বলে জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সামাজিক বিচ্ছিন্নতাকে স্থূলতা ও মাদকের অপব্যবহারের মতোই গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করার আহ্বান জানাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৫০% মার্কিন নাগরিক একাকীত্বে ভুগছেন।
ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, অনিদ্রা এবং ডিমেনশিয়াসহ স্বাস্থ্যগত জটিলতার মাধ্যমে একাকীত্ব প্রায় ৩০% অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। অতীত গবেষণায় দেখা গেছে, নিঃসঙ্গ ব্যক্তিদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অন্যান্যদের তুলনায় বেশি।
বিবেক মূর্তি জানান, একাকীত্ব একটি গুরুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। এটি নিয়ে আমাদের কথা বলা উচিত এবং এ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা উচিত। ধুমপান ও স্থূলতাজনিত অকালমৃত্যুর চেয়ে বেশি ঝুঁকি তৈরি করছে সামাজিকভাবে নিঃসঙ্গতা ও বিচ্ছিন্নতা।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রই না, বিশ্বজুড়েই দিন দিন সামাজিক নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব বাড়ছে।করোনাভাইরাস মহামারির সময় এ পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে মোড় নেয়। এমনকি এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীদের গড়ে সামাজিক নেটওয়ার্ক আকারে ১৬% কমেছে।
দুই দশক আগেও মার্কিনরা দৈনিক সশরীরে বন্ধুবান্ধব বা পরিচিতদের সঙ্গে গড়ে ৬০ মিনিট বা এক ঘণ্টা সময় কাটাত। কিন্তু ২০২০ সালে তা কমে দৈনিক মাত্র ২০ মিনিটে নেমে আসে।
একাকীত্বের সমস্যা মোকাবিলার জন্য বিবেক মূর্তি মানুষকে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মীদের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটাতে এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম সময় ব্যয় করতে আহ্বান জানান। একাকীত্বের মহামারি মোকাবিলার শিশুদের স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা ও বজায় রাখা শেখাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সামাজিকভাবে যুক্ত মানুষদের আয়ুষ্কাল বেশি। একাকীত্ব মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদি চাপ তৈরি করতে পারে, যার ফলে সৃষ্ট প্রদাহে মানবদেহের কোষ ও রক্তনালির ক্ষতি হয়। তরুণরা বিশেষ করে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা মূলত একাকীত্বের মহামারির মূল ভুক্তভোগী। যুক্তরাষ্ট্রে এই বয়সী তরুণদের মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিমাণ ৭০% কমেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষতাকে একাকীত্বের মহামারির মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বিবেক মূর্তি বলেন, “ব্যক্তিগত পর্যায়ে মিথস্ক্রিয়ার কোনো বিকল্প আসলে নেই। যোগাযোগের জন্য আমরা যত বেশি প্রযুক্তির দ্বারস্থ হয়েছি, ব্যক্তি পর্যায়ে তত মিথস্ক্রিয়া হারিয়েছি।”
একাকীত্বের সমস্যা এড়ানোর টোটকা হিসেবে বিবেক মূর্তি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি। প্রিয়জনের সঙ্গে ১৫ মিনিট সময় কাটানো, মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় ইলেকট্রনিক ডিভাইস এড়িয়ে চলা এবং একে অপরকে সহযোগিতার উপায় বের করা। সেবাই একাকীত্বের বড় প্রতিষেধক।”
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে স্বয়ং বিবেক মূর্তি নিজেও একাকীত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে সার্জন জেনারেল হিসেবে তার কার্যকালের প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় এ সমস্যা শুরু হয়েছিল।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে বিবেক মূর্তি বলেন, কর্মক্ষেত্র আর পরিবারের ওপর মনোযোগ দেওয়া মুশকিল ছিল মনে করে আমি পরিবার এবং নিজের বন্ধুদের অবহেলা করেছিলাম। এ কারণে আমি কয়েক সপ্তাহ ধরে গভীর একাকীত্বে ভুগি, যা পরে কয়েক মাস ধরে দীর্ঘায়িত হয়।
এসকে/
খবরটি শেয়ার করুন