সার্জিও রেস্তেলি :
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের উদ্দেশ্য আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার হলেও এটি একদিক দিয়ে আসাদকে শক্তিশালীই করে তুলে। এর ফলে আসাদ সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করে। সিরিয়া বর্তমানে বিশ্বে ক্যাপ্টাগনের বৃহত্তম উৎপাদক। এই ক্যাপ্টাগনের ফলেই সিরিয়া তিনগুণ রাজস্ব লাভ করে। তবে সিরিয়া ক্যাপ্টাগনের বৃহত্তম উৎপাদক হয়ে উঠায় তা মধ্যপ্রাচ্যের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিরিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় অপরাধী গোষ্ঠীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং বিশ্ব বাজারের ৮০% ক্যাপ্টাগন উৎপাদন করার মাধ্যমে আসাদের শাসনকে শক্তিশালী করে তুলছে। অপরদিকে এটি একটি মাদক রাষ্ট্রের জন্ম দিচ্ছে যা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে রেখেছে। সম্প্রতি ফ্রান্স অভিযোগ জানায় যে, বেশিরভাগ ক্যাপ্টাগন উৎপাদন ও বিতরণ পরিচালিত হয় সিরিয়ার সেনাবাহিনীর এলিট ৪র্থ ডিভিশন দ্বারা, যার পরিচালনায় আছে মাহের আল আসাদ, হিজবুল্লাহসহ উপজাতি প্রধান, বিদ্রোহী আন্দোলন ও অপরাধী দলগুলো।
তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের মাধ্যমে সিরিয়া নারকো রাষ্ট্র হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আফগানিস্তানের হেলমান্দ এবং কান্দাহারের মতো আফিম উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর জন্য পাকিস্তান হলো আফিম পাচারের জন্য প্রাথমিক রাস্তা। পাকিস্তানের মাধ্যমেই মাদক এশিয়া, পারস্য উপসাগর, আফ্রিকা এবং পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বাজারে পৌঁছায়। ইউএনওডিসি এর তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের অবৈধ মাদক বাণিজ্যের ৪৫% এরও বেশি পাকিস্তানের মাধ্যমে পাচার হয়।
উপসাগরীয় অঞ্চল হেরোইনের প্রধান বাজার এবং পাকিস্তানের মাধ্যমে আফিম পাচারের কেন্দ্রস্থল। সাম্প্রতিক সময়ে, পাকিস্তান ও ইউরোপের মধ্যকার যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
মূলত আফ্রিকার মাধ্যমে পূর্ব থেকে পশ্চিমের বাজারে পাকিস্তানি মাদক পৌঁছে যাচ্ছে। পাকিস্তান থেকে হেরোইন পাচারের ব্যাপারে পূর্ব আফ্রিকা প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
২০২১ সাল থেকে আফগানিস্তানে আফিম চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে পাকিস্তানেও হেরোইন পাচার বেড়েছে। আফগানিস্তানে সব ধরনের মাদক উৎপাদন ও পাচার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তালেবানের ঘোষণা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটে। মূলত কোভিড -১৯ মহামারীর সময়েও পাকিস্তানে হেরোইন পাচার চলমান ছিল। অর্থাৎ কোভিড-১৯ মহামারীও হেরোইন উৎপাদন ও পাচারে হ্রাস ঘটাতে পারেনি। ফলে শত চেষ্টা সত্ত্বেও পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে এ ধরনের পাচার চলমান থাকবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। তাছাড়া এ ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের অনুমতি প্রদান করার ব্যাপারে পাকিস্তানি রাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। পাকিস্তানের করাচির অনেকগুলো জঙ্গি সংগঠন এই হেরোইন ব্যবসার সাথে জড়িত। পাকিস্তানে আফগান ও ইরানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত বেলুচিস্তানে মরফিন ধরা পড়ার খবরও পাওয়া যায়।
গাঁজা উৎপাদনের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের নাম উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানে ব্যাপক পরিমাণে গাঁজা সেবন হয়। এমনকি নিউইয়র্ক এর পর গাঁজা সেবনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে পাকিস্তানের করাচির নাম। তাছাড়া খাইবার পাখতুনখোয়ায় বিপুল পরিমাণে গাঁজার চাষ হয়। পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় বাজারে পাকিস্তানে উৎপাদিত গাঁজা সরবরাহ হয়। পাকিস্তান থেকে ইরানে পাচার হওয়া বেশিরভাগ গাঁজা স্থলপথে পরিবহণ করা হলেও সমুদ্রপথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাঁজা আটক করা হয়।
তাছাড়া তরুণ সমাজের কাছে জনপ্রিয় বেশকিছু মাদকজাতীয় ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের নাম।
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ অভিযোগ করেছিলেন যে সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মির্জা আসলাম বেগ এবং আইএসআই মহাপরিচালক আসাদ দুররানি একটি গোপন সামরিক অভিযান পরিচালনার অর্থায়নের জন্য বড় আকারের মাদক ব্যবসার অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন।
প্রায় তিন দশক আগে লরেন্স লিফশুল্টজ তার অনুসন্ধানী লেখা 'পাকিস্তান: দ্য এম্পায়ার অফ হেরোইন'-এ লিখেছিলেন ১৯৮৪ সাল নাগাদ, ইউরোপীয় পুলিশ সূত্রের মতে, পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী মোট হেরোইনের ৭০ শতাংশ সরবরাহ করত।
সিরিয়া এবং পাকিস্তান উভয়ই এখন বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি৷ প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে তারা মাদক উৎপাদন শুরু করলেও বর্তমানে তা সন্ত্রাসীদের মূল অর্থায়নের ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র: দ্য টাইমস অফ ইসরায়েল
আই. কে. জে