ছবি: সংগৃহীত
খুলনায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা ও এপিসি ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান শেখ বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যা ও স্বেচ্ছাচারী আচরণের অভিযোগ করেছেন তার দুই মেয়ে শেখ তামান্না আলম ও শেখ তাসনুভা আলম।
বুধবার (৮ই অক্টোবর) খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। এ সময় ৩৬ বছর আগে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা করার কথা জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তামান্না আলম জানান, এসব কারণে খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন আদালতে শেখ বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই বোন জীবনের নিরাপত্তার জন্য নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
শেখ তামান্না আলম আরও জানান, পরকীয়া প্রেম, অন্য নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ও নির্মম অত্যাচারে ১৯৮৯ সালের ১৩ই নভেম্বর তার মায়ের মৃত্যু হয়। এরপরও বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এপিসি ফার্মাসিউটিক্যালসের বেতনভুক্ত কর্মচারী হেনা রানী ভৌমিকের সঙ্গে বাহারুল আলমের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
এই ঘরে তাদের ১৮ বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। হেনা রানী ভৌমিক বিবাহিত, তার স্বামী চিত্ত রঞ্জন সেন জেনেশুনে তার স্ত্রীকে বাহারুল আলমের কাছে থাকতে দিচ্ছেন। বিনিময়ে বাহারের বিএমএ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের পদ-পদবি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকাকালে নিয়োগ ও বদলি-বাণিজ্য করেছেন।
সম্প্রতি হেনা রানীকে এপিসি ফার্মাসিউটিক্যালসের ১০ হাজার শেয়ার লিখে দিয়েছেন বাহারুল আলম। চিত্ত রঞ্জন সেন ব্যক্তিগত গাড়ি কিনে রেজিস্ট্রেশনের সময় বাহারুল আলমের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।
একসময়ের সামান্য বেতনের কর্মচারী হেনা রানী এখন বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক। অথচ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে ৫০ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান এপিসি ফার্মা এখন বন্ধের পথে।
তামান্না আলমের অভিযোগ, মূলত বাহারুল আলমকে ব্যবহার করে তার সমুদয় অর্থ-সম্পত্তি গ্রাস করতে চান হেনা রানী ও চিত্ত রঞ্জন। আর বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে তাদের দুই বোনকে হত্যার চক্রান্ত করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ওষুধ কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে স্মার্ট অ্যাগ্রো বিডি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নেওয়ার পর তা আত্মসাতের চেষ্টা, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বাহারুল আলমের বোনদের বঞ্চিত করা, বড় মেয়ের স্বাক্ষর জাল করে ঢাকার ফ্ল্যাট ৭০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া ও ছোট মেয়ের স্বাক্ষর জাল করে পূবালী ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ টাকা লোন উত্তোলনের অভিযোগ আনা হয়।
এসব ঘটনায় স্মার্ট অ্যাগ্রো বিডির মালিক লুবনা জাহান দুই বোন ও তাদের ফুফুদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানানো হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে দুই বোন বলেন, বাহারুল আলম শেখ বাড়ির কাছের লোক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বিএমএর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও খুলনা শাখার সভাপতি। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সভাপতি।
খুলনা বিএমএ ভবন ও তাদের সোনাডাঙ্গা বাসভবনে দিনের বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করেন। সারাদিন বাহারুল আলম তাদের নিয়ে মিটিং করেন রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ গঠনের লক্ষ্যে।
সংবাদ সম্মেলনে বাবার নানা অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় যেকোনো সময় তারা দুই বোন খুন বা অপহরণের শিকার হতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
এদিকে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ বাহারুল আলম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ওদের (মেয়েদের) দিয়ে পর্দার আড়ালে থেকে এসব করানো হচ্ছে। আমাকে যদি কোনোভাবে কাবু করতে পারে বা শায়েস্তা করতে পারে, এপিসি ফার্মাসিউটিক্যালসকে সস্তায় কিনতে পারবে বলে এসব করানো হচ্ছে।'
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন