প্রতীকী ছবি
ঘরে লেগে থাকে অশান্তি ও কলহ-বিবাদ। শয়তানের কাছে পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট করার চেয়ে বড় খুশির খবর নেই। তেমনই এক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘শয়তান পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে, তারপর (পুরো বিশ্বে) তার বাহিনী পাঠিয়ে দেয়। আর (ওই শয়তান সদস্য) তার সবচেয়ে বেশি নৈকট্যপ্রাপ্ত, যে (মানুষের মাঝে) সবচেয়ে বেশি ফেতনা সৃষ্টি করে। শয়তান সিংহাসনে বসে সবার ঘটানো ফেতনার বর্ণনা শোনে। একজন এসে বলে আমি অমুক কাজ করেছি, শয়তান বলে তুমি তেমন কোনো কাজ করোনি। এভাবে শয়তান তার পাঠানো অন্যদের (শয়তান সদস্যদের) মন্দ কাজের বিবরণ শুনতে থাকে।
অতঃপর একজন এসে বলে- 'আমি অমুকের সঙ্গে ধোঁকার আচরণ করেছি, এমনকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছি। এ (ফেতনার) কথা শুনে শয়তান তাকে তার কাছাকাছি (বুকে) টেনে নেয়। আর বলে- তুমিই বড় কাজ করেছ। হাদিস বর্ণনাকারী আমাশ বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, অতঃপর শয়তান তাকে তার বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নেয়।' (মুসলিম: ৭২৮৪; আহমদ: ১৪৩৭৭)।
অতএব সংসারে শান্তি বজায় রাখতে হলে শয়তানের ধোঁকা-প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আর শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী আমল ও দোয়ার বিকল্প নেই। এ বিষয়ে যেসব দোয়া ও আমল করা জরুরি তা হলো-
১) ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া: বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করতেই সালামের পর সুন্নতের দিকনির্দেশনা মোতাবেক এ দোয়া পড়া- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাল মাউলিজি, ওয়া খাইরাল মাখরাজি; বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা; ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আগমন ও প্রস্থানের কল্যাণ চাই। আপনার নামে আমি প্রবেশ করি ও বের হই এবং আমাদের রব আল্লাহর উপর ভরসা করি।’ (আবু দাউদ: ৫০৯৬)।
২) পরিবারে সালামের প্রচলন করা: পরিবারের কোনো সদস্য বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করতেই ঘরে অবস্থানরত পরিবারের অন্য লোকদের সালাম দেওয়ার প্রচলন চালু করা। এটি কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশ। আর এতেই রয়েছে কল্যাণ। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ-
فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُون ‘যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র। (সুরা নূর: ৬১)।
রাসুলুল্লাহ (স.) আনাস (রা.)-কে বলেন, ‘হে বৎস, যখন তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরবে, তখন তাদের সালাম দেবে। এটা তোমার ও তোমার ঘরবাসীর জন্য বরকতের কারণ হবে।’ (তিরমিজি: ২৬৯৮)।
৩) খাবার গ্রহণের আগে-পরে দোয়া পড়া: খাবার গ্রহণের আগে পরে দোয়া পাঠ করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে।’ (মুসলিম: ৫৩৭৬)। তাই খাওয়া বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে শুরু করতে হবে। অতঃপর এই দোয়াটি পড়া- اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَ اَطْعِمْنَا خَيْراً مِّنْهُ ‘আল্লাহুম্মা বা-রিক লানা- ফী-হি ওয়া আত্বইমনা খাইরাম্ মিনহু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে এতে বরকত দিন, ভবিষ্যতে আরো উত্তম খাদ্য দিন’। (তিরমিজি, আবু দাউদ, মেশকাত: ৪২৮৩)।
খাবার গ্রহণ শেষে এই দোয়া পড়া—الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়া সাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।’ অর্থ: ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন।’ (আবু দাউদ: ৩৮৫০)।
৪) সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সবকিছুরই একটি চূড়া থাকে আর কোরআনের চূড়া হলো সূরা আল-বাকারা। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বাড়িতে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সে বাড়িতে শয়তান প্রবেশ করে না।’ (তিরমিজি: ২৮৭৭)।
৫) অশ্লীল বিনোদন থেকে পরিবারকে মুক্ত রাখা।
৬) ঘরে কুকুরের প্রবেশ থেকে সাবধান থাকা।
অতএব মুসলমানের উচিত হবে ঘরে অবস্থানকালীন কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলা। সুন্নতের পুরোপুরি অনুসরণ ও অনুকরণ করা। তাতে শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ঘরে ফিরে আসবে শান্তি ও নিরাপত্তা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ওআ/ আই.কে.জে