শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুদৃষ্টি বা বদনজর থেকে বাঁচার উপায়

ধর্ম ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:২৮ অপরাহ্ন, ২৭শে মে ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

অনেক ক্ষেত্রে কুদৃষ্টি বা বদনজর কার্যকর হয়। ক্ষতিকর ওষুধ কিংবা খাদ্য যেমন মানুষকে অসুস্থ করে, শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতায় যেমন রোগব্যাধি জন্ম নেয়, ঠিক তেমনি কুদৃষ্টিরও বিশেষ প্রভাব আছে। তবে চলুন জানা যাক, এ সম্পর্কে  হাদিস কী বলে? কুদৃষ্টি বা বদনজর থেকে বাঁচার উপায় কী?

(মিসরে প্রবেশের সময়) ইয়াকুব আ. বললেন, ‘হে আমার পুত্ররা! সবাই একই প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করো না, ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কোনো বিধান থেকে আমি তোমাদের রক্ষা করতে পারি না। বিধান কেবল আল্লাহরই। তাঁর ওপরই আমি ভরসা করি এবং তাঁরই ওপর ভরসা করা উচিত ভরসাকারীদের।’ [সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৬৭ (তৃতীয় পর্ব)]

ইমাম কুরতুবি (রহ.) লিখেছেন, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা এ বিষয়ে একমত যে ‘চোখ লাগা’ এবং এর মাধ্যমে ক্ষতিসাধিত হওয়া প্রমাণিত সত্য।

তবে এ ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস রাখতে হবে, দৃষ্টিশক্তির মধ্যে এমন ক্ষমতা মহান আল্লাহই দান করেছেন। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করা, তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে আবু সহল ইবনে হুনাইফের ঘটনা সুবিখ্যাত। একবার গোসল করার জন্য তিনি পরিধেয় বস্ত্র খোলেন। তাঁর গৌরবর্ণ ও সুঠাম দেহের ওপর আমের ইবনে রবিআর দৃষ্টি পতিত হয়।

আরো পড়ুন : ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন

সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ থেকে বের হয়ে পড়ে—আমি আজ পর্যন্ত এমন সুন্দর ও কান্তিময় দেহ কারো দেখিনি। তৎক্ষণাৎ সহল ইবনে হুনাইফের দেহে ভীষণ জ্বর এসে যায়। মহানবী (সা.) এ সংবাদ পেয়ে আমের ইবনে রবিআকে আদেশ দেন, সে যেন অজু করে অজুর পানি থেকে কিছু অংশ পাত্রে রাখে। তারপর তা যেন সহল ইবনে হুনাইফের দেহে ঢেলে দেওয়া হয়। আদেশ মোতাবেক কাজ করা হলে সহল ইবনে হুনাইফ রক্ষা পেলেন।

তাঁর জ্বর চলে গেল। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। এ ঘটনায় মহানবী (সা.) আমের ইবনে রবিআকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ নিজের ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? তোমার দৃষ্টিতে যখন তার দেহ সুন্দর প্রতিভাত হয়েছিল তখন তুমি তার জন্য বরকতের দোয়া করলে না কেন? মনে রেখো, বদনজর লেগে যাওয়া সত্য।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ১৭১৪)

এ হাদিস থেকে জানা যায়, অন্যের জান ও মালের মধ্যে যদি কেউ বিস্ময়কর কোনো কিছু দেখে, তবে তার উচিত দোয়া করা—‘বারাকাল্লাহু ফিহি’। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা এতে বরকত দান করুন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, ‘মাশাআল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলা উচিত। এতে কুদৃষ্টির প্রভাব বিনষ্ট হয়ে যায়।

এ হাদিস থেকে আরো জানা যায়, কেউ বদনজরে আক্রান্ত হলে যার চোখ লাগে, তার হাত-পা ও মুখমণ্ডল ধৌত করা পানি রোগীর দেহে ঢেলে দিলে অনিষ্ট বিদূরিত হয়ে যায়।

হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন আমি সকালের দিকে মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়েছি। দেখলাম, তাঁর গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। ওই দিনই আমি বিকেলে তাঁর কাছে আবার গিয়েছি। দেখেছি তিনি সুস্থ। (এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে) তিনি বলেন, জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসেছেন। 

তিনি আমার জন্য এ দোয়া করেছেন, ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ও ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা।’ দোয়াটির অর্থ হলো, আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি ওই সব বস্তু থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়। আর হিংসুক ও কুদৃষ্টিকারীর কুদৃষ্টি থেকে আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। (মুসনাদে আহমদ ও তাফসিরে মুনির)

আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে মুনিরে উল্লেখ করা হয়েছে, যার সম্পর্কে এটা প্রসিদ্ধ হয়ে যায় যে তার বদনজরে অন্যের ক্ষতি হয়, তাহলে মানুষের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা করা থেকে তাকে বারণ করা বৈধ। (তাফসিরে মুনির : ১৩/২৭)

গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ

এস/ আই.কে.জে/

কুদৃষ্টি বা বদনজর

খবরটি শেয়ার করুন