অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস- ছবি: সংগৃহীত
ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দেন। এটি বুধবার (৩০শে অক্টোবর) প্রকাশিত হয়।
এতে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবিলম্বে ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে না। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ তার বড় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার রায় ঘোষণার পর ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আমি মনে করি না, রায় ঘোষণার আগে এটা করার দরকার আছে।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা বলেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা হবে না। ড. ইউনূস আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়। তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা (রাজনৈতিক) মেকানিজম তৈরি করেছে, তারা নিজ স্বার্থে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করেছে।
ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, আওয়ামী লীগ হয়তো ভেঙে যেতে পারে; কিন্তু তার সরকার এমন কিছু করবে না। কারণ তারা ‘রাজনৈতিক’ সরকার নয়। ড. ইউনূস জানান, তার রাজনীতিতে যোগ দেয়ার বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা নেই। তার সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করেনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় ৮শ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে, হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা নিয়ে ভারত যে অভিযোগ করছে, তার কোনো সত্যতা নিশ্চিত করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ড. ইউনূস বলেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ‘কিছু ঘটনা’ ঘটেছে এবং ‘খুব অল্প সংখ্যক’ প্রাণহানি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তাদেরকে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগস্টে হামলার শিকার অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। এটাকে ভিন্ন রূপ দেয়া হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে, যেমনটি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে থাকা উচিত।’
আই.কে.জে/