ছবি : সংগৃহীত
অনেক শিক্ষার্থীর কাছে আতঙ্কের বিষয় অঙ্ক। অঙ্ক পরীক্ষা মানেই যেন এক দুঃস্বপ্ন। অনেকে আবার সাধারণ অঙ্কের সমাধান করতে পারলেও ভয়ে জটিল অঙ্ক এড়িয়ে যেতে চান। এ অবস্থায় একটি ঘোড়া যদি অঙ্কে পারদর্শী হয়ে ওঠে তাহলে অবিশ্বাস্য ব্যাপারই বটে! হ্যাঁ, এমনই এক ঘোড়া ছিল যে ছোট ছোট সাধারণ অঙ্কের সমাধান করতে পারতো।
জার্মানির শিক্ষক, গণিতবিদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন উইলহেম ভন ওস্টেন। গণিত শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি ঘোড়া পালন ছিল তার শখ। গণিতজ্ঞ ওস্টেনের ছিল সেই বিখ্যাত ঘোড়া যে সমাধান করতে পারতো অঙ্কের। ঘোড়াটির নাম ছিল হান্স। যোগ-বিয়োগ-ভাগ-গুণসহ সব ধরনের অঙ্কে পারদর্শী ছিল হান্স। অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার জন্য লোকে এই ঘোড়ার নাম দেয় ‘ক্লেভার হান্স’।
হান্সের এই বুদ্ধিমত্তার কথা চারপাশে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই একে ‘জাদু’ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। অনেকে আবার বিষয়টিকে স্রেফ গুজব বলেছিলেন। ফলে ঘটনা যাচাই করতে জার্মানিতে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ প্রদর্শনীর।
১৯০৪ সালে প্রদর্শনীতে লোক সমাগম ঘটলো বেশ ভালোই। নির্দিষ্ট দিন সেখানে ঘোড়া নিয়ে হাজির হন ওস্টেন। এরপর সমবেত লোকের সামনেই ওস্টেন হান্সের অঙ্কের পরীক্ষা নেন। পরীক্ষা বলতে হান্সকে মাটিতে লিখে ছোট ছোট সংখ্যার যোগ-বিয়োগ-গুণ করতে দেওয়া হলো। হান্স অঙ্কের সঠিক উত্তর পায়ের সাহায্যে মাটিতে খুর দিয়ে শব্দ করে দিতে লাগল।
আরো পড়ুন : হাসতে হাসতে বেহুঁশ!
হান্স মাটিতে অক্ষর দেখে সেই সংখ্যা চিনতে পারতো। এরপর সে মাটিতে খুর দিয়ে শব্দ করতো। একবার শব্দ করলে এক, দুবার করলে দুই এরকম। হান্স এ বি সি বুঝতে পারতো। যেমন একবার শব্দ করলে ‘এ’। দুইবার শব্দ করলে ‘বি’। এরপর হান্সকে অনেকেই নাম জিজ্ঞেস করল। হান্স সেভাবে শব্দ করে উৎসুক জনতাকে বুঝিয়ে দিলো তার নাম। এরপর হান্সকে ওস্টেন প্রশ্ন করলেন- বলো, মাসের অষ্টম দিন মঙ্গলবার হলে শুক্রবার কততম দিন। সবাইকে বিস্মত করে হান্স খুর দিয়ে ১১বার শব্দ করে জানিয়ে দিলেন ১১ তারিখ।
এরপর আর কোনো সন্দেহ রইল না। পত্রিকায় হান্সের ছবি ছাপা হলো। অবশ্য হান্সের সুনাম অনেকে আবার ভালোভাবে নেননি। নানা দিক থেকে হান্সের জন্য শত্রু বাড়ছিল ওস্টেনের। হান্সের এই খবর কানে যায় জার্মান শিক্ষা দপ্তরের। ঘোড়ার এমন কর্মকাণ্ড সত্য কিনা পরখ করতে শিক্ষাদপ্তর থেকে গঠন করা হলো হান্স কমিশন। এ জন্য নিয়োগ করা হলো মনোবিজ্ঞানী ও দার্শনিক কার্ল স্টাম্ফকে। শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী, চিড়িয়াখানার লোক, সার্কাসের মালিক, নানা পেশার মানুষ নিয়ে গঠিত হলো ১৩ সদস্যের হান্স কমিশন। মূলত হান্সের উপর নজর রাখাই ছিল এই কমিশনের কাজ। আর এই কাজ তদারকির মূল দায়িত্ব পড়েছিল অস্কার ফাস্কস্টের কাঁধে।
১৯০৪ সালের সেপ্টেম্বরে হান্স কমিশনের নেতৃত্বে আবারো পরীক্ষা শুরু হলো হান্সের। সে সময় মনিব ওস্টেনকে ছাড়াই উত্তর দিতে পেরেছিল হান্স। পরীক্ষায় দেখা গেল, যারা প্রশ্নের উত্তর জেনে প্রশ্ন করছিল তাদের উত্তর হান্স দিতে পারছিল ঠিকঠাক। যারা উত্তর না জেনে একটু কঠিন প্রশ্ন করছিল তাদের উত্তর হান্স দিতে পেরেছিল মাত্র ৬ শতাংশ। দূর থেকে প্রশ্ন করলে হান্সের উত্তর দিতে সমস্যা হচ্ছিল।
হান্স মূলত উত্তর দিতো মানুষের মুখ ও চোখের ভঙ্গি দেখে। মানুষের হাততালি, হইচই উত্তেজিত করতো হান্সকে। এ ছাড়া ওস্টেনের দেওয়া নানান প্রশিক্ষণ থেকেও হান্স অনেক বিষয় আয়ত্ত করেছিল। তবে অস্কার ফাস্কস্টের এই পরীক্ষা নিয়ে অনেকের মতবিরোধ ছিল। কারণ হান্সের ভুল উত্তরের জন্য প্রশ্নকর্তার অভিব্যক্তির কোনো বিষয় তিনি উল্লেখ করেননি।
এরপর ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা কমতা থাকে হান্সের। কয়েকটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হলেও সেভাবে আর জনপ্রিয়তা পায়নি হান্স। ১৯০৯ সালে মারা যায় ওস্টেন। এরপর হান্সের ঠিকানা হয় বিভিন্ন মালিকের কাছে। আট-দশটা সাধারণ ঘোড়ার মতোই তার দিন কেটেছিল ওস্টেনের মৃত্যুর পর। এরপর ১৯১৪ সালে মারা যায় ক্লেভার হর্স হান্স।
এস/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন