সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেদিনের কান্না বাস্তব হয়ে উঠেছিল ফরীদির জন্য : ডলি জহুর

বিনোদন ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:০১ অপরাহ্ন, ২৯শে মে ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

বেঁচে থাকলে ৭২ বছর বয়সে পা রাখতেন কিংবদন্তি অভিনেতা হ‍ুমায়ুন ফরীদি। আজ তার জন্মবার্ষিকী। তার সঙ্গে একাধিক নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন ডলি জহুর।  বিশেষ এই দিনটিতে হুমায়ূন ফরীদিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি —

‘অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে এক কথায় বলব, অসাধারণ এক শিল্পী। যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে চরিত্র হয়ে যেত। যাকে আর হুমায়ুন ফরীদি বলে চেনা যেত না। ওর তুলনা ও নিজেই। শিল্পী হুমায়ুন ফরীদির বাইরে দোষ-গুণ মিলিয়েও ছিল প্রিয় বন্ধুদের একজন। এই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল যখন বিটিভিতে আমরা একসঙ্গে কাজ শুরু করি। আতিকুল হক চৌধুরীর 'সেই চোখ' নামের একটি নাটকে আমরা অভিনয় করেছিলাম। প্রথম দিনেই বুঝে গিয়েছিলাম, তার মধ্যে বড় এক অভিনেতার বাস। এরপর 'অক্টোপাস', 'হঠাৎ একদিন' থেকে শুরু করে অনেক নাটকে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আর সিনেমাতে যে কত কাজ করেছি, তার হিসাব-নিকাশ বের করাও কঠিন। একটা সময় নিঃসঙ্গতা ফরীদিকে পেয়ে বসেছিল। ওর কথা থেকেই তা স্পষ্ট হতো। ভাবি ডাকলেও সম্পর্কটা ছিল বন্ধুর মতো। তাই যে কোনো বিষয় নিয়ে অকপটে কথা বলে যেত। প্রায় রাতেই ফোন করে নানা বিষয়ে কথা বলত। তা থেকেই অনুমান করতে কষ্ট হতো না, ঘরবন্দি সময়টা তার কীভাবে কাটছে। তাই অনেক রাতে ফোন বাজলেই বুঝে যেতাম সেটা ফরীদির কল। মনের কষ্ট হালকা করার জন্যই ও ফোন করেছে।

শেষের দিনগুলোয় ফরীদিকে দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। শরীরের যত্ন নিত না, শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। মনে আছে, তখন আমি হানিফ সংকেতের 'আপন নিবাস' নামের একটি নাটকে কাজ করছিলাম। সেই নাটকে ফরীদিও ছিল। মাঝে বেশ কিছুদিন দেখা হয়নি, তাই জানতাম না ওর শরীরের অবস্থা কতটা খারাপ। যখন শুটিংয়ে এলো, আমি তো ওকে দেখে অবাক! এ কী শরীরের হাল! ঠিকভাবে হাঁটতেও পারছিল না। ওকে ধরাধরি করে গাড়ি থেকে নামানো হয়েছিল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, সামনে যে দাঁড়িয়ে সে কোনো মানুষ নয়, হ্যাঙ্গারে ঝোলানো একটি কাপড়! ওকে দেখে বলেছিলাম, শরীরের এ কী হাল! শরীর নিয়ে কেউ এত অবহেলা করে?

আরো পড়ুন: দেশের পতাকা নিয়ে নিউইয়র্কের রাস্তায় মৌসুমী

এই প্রশ্নের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলেছিল, ও কিছু নয় ভাবি, সব ঠিক আছে। কিন্তু আসলেই যে সবকিছু ঠিক নেই, তা বোঝা গিয়েছিল ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর পর। দেখা গেল, পরিচালক অ্যাকশন বলার পরও ফরীদি ঠিকভাবে কথা বলতে পারছে না। যে মানুষ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক সংলাপ বলে যায়, সামনের মানুষগুলোকে বিস্মিত করে দেয় অনবদ্য অভিনয় দিয়ে- সেই ফরীদিই কথা বলতে পারছে না। একজন জাত অভিনেতা ক্যামেরার সামনে এভাবে থমকে যাবে- এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি। তাই বুকে কষ্ট চেপেই অভিনয় করে গেছি। 'আপন নিবাস' নাটকে আমার একটি কান্নার দৃশ্য ছিল। বলতে দ্বিধা নেই, সেদিনের কান্না বাস্তব হয়ে উঠেছিল ফরীদির জন্য। যতটা না অভিনয়ের জন্য সেদিন কেঁদেছি, তার চেয়ে বেশি কান্না পেয়েছে ফরীদির কথা মনে করে।’

এসি/ আই.কে.জে/

হুমায়ুন ফরীদি ডলি জহুর

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন