শুক্রবার, ১১ই এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৮শে চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্থির শেয়ারবাজার, আস্থা ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:৩২ অপরাহ্ন, ১৮ই অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি- সংগৃহীত

শেয়ারবাজারে টানা দরপতন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিনিয়ত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমছে। যতই দিন যাচ্ছে শেয়ারবাজারের পতনও ততই বাড়ছে। পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। গত দুই মাসের ব্যবধানে মূল্যসূচকের যেমন বড় পতন হয়েছে, তেমনি বাজারে মূলধনও ক্রমাগত কমেছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে  ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে একদল লুটেরা ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লুট করে নিয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পর বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিল শেয়ারবাজার ভালো হবে। ফিরে পাবে নতুন প্রাণ। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। গত দুই মাসে ৯২ শতাংশ শেয়ারের দরপতনে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা। যার কারণে পুঁজি হারিয়ে অনেক বিনিয়োগকারী হতাশায় নিমজ্জিত। অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে যখন রেকর্ড উত্থান হচ্ছে, তখন আমাদের দেশের শেয়ারবাজারের অবস্থা ক্রমাগত পতনের দিকে যাচ্ছে। যেখানে উন্নতি হওয়ার কথা, সেখানে উল্টো পতনের ধারা অব্যাহত কেন– এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারবাজারের মূল শক্তি আস্থা। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত দুই মাসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়- এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি, বরং অনাস্থা তৈরি হয়েছে। শুধু নীতিকথা দিয়ে শেয়ারবাজার চলবে না। এখানে বড় বড় স্মাগলার রয়েছে, তাদেরকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধু কয়েকজনকে শাস্তি দিলেই বাজার স্থিতিশীল হবে না। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা দূর করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাজারের একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা করতে হবে।

সম্প্রতি শেয়ারবাজারের অব্যাহত দরপতনের কারণে একাধিক দিন বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিক্ষোভ, মানববন্ধন করার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন একদল ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারী। কিন্তু এত কিছুর পরও শেয়ার বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং লেনদেন এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে।

চলমান দর পতনের কারণ বিশ্লেষণ করে শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রতিদিনই মিডিয়ায় দুর্নীতি, ব্যাংক লুটের তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এটা বিনিয়োগকারীদের কাছে স্বস্তিদায়ক নয়। তারা আস্থাহীনতায় পড়বে এটাই স্বাভাবিক। পোশাক কারখানায় অস্থিরতা বাড়ার কারণে গার্মেন্টস শিল্পে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী বুঝেশুনে বিনিয়োগ করেন না, তারা জুয়াড়ীদের প্রলোভনে পড়ে বিনিয়োগ করে। ফলে অসাধু চক্র সুযোগ বুঝে মুলধন সরিয়ে ফেলে যার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

অনেক বড় বড় কোম্পানি মুনাফা ও লভ্যাংশ ঘোষণা করেও শেয়ার বাজারের পতন ঠেকাতে পারছে না।মুনাফা ও লভ্যাংশ বৃদ্ধির ইতিবাচক কোনো প্রভাব বাজারে পড়ছে না। তারপরও উল্টো মূল্য বৃদ্ধির বদলে দরপতন হচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাজারের পরিস্থিতি ভালো না থাকায় এ প্রবতা তৈরি হচ্ছে।শেয়ারের এখন মূল সমস্যা তারল্য প্রবাহ। নতুন করে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শেয়ারবাজারে সরকারি-বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে পলিসিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।পাশাপাশি দেশের বড় বড় শিল্প গোষ্ঠীকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। অন্যথায় শেয়ার বাজারের কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা অধরাই রয়ে যাবে।

নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সবচেয়ে জরুরী হলো- শেয়ারবাজারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা। কারণ একটি দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে শেয়ার বাজারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার বাজারের গতি ফেরানো না গেলে অর্থনীতির গতি ফেরানো কঠিন হবে।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হলো শেয়ারবাজার। সেখানে এই খাত থেকেই বড় উদ্যোগের পুঁজি আসছে। কিন্তু আমাদের দেশে এর উল্টোটা। এদেশে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অর্থায়ন করা হয়। শেয়ার বাজারকে যতদিন না অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করা হবে, ততদিন এই বাজারেও উন্নয়ন হবে না।

আই.কে.জে/



শেয়ারবাজার

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন