মঙ্গলবার, ২২শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ রাষ্ট্রীয় শোক *** সংসদে সংরক্ষিত আসন চায় দলিত সম্প্রদায় *** উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নরেন্দ্র মোদির শোক *** সাগরিকার হ্যাটট্রিকে নেপালকে উড়িয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ *** উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক *** হাসপাতাল এলাকায় অহেতুক ভিড় না করার অনুরোধ প্রধান উপদেষ্টার *** নিরীহদের হয়রানি না করতে অনুরোধ গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির *** পাইলট বিমানটিকে জনবিরল এলাকায় নেওয়ার চেষ্টা করেন: আইএসপিআর *** বিসিবির সিদ্ধান্ত বদল, স্টেডিয়ামে খাবার নিয়ে ঢুকতে মানা *** বিমান দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য বাঁচলেন অভিনেত্রী সানা

নতুনের যাত্রা, পুরনোর বন্ধ

সাংবাদিকতায় বেকারত্ব কমছে, না বাড়ছে?

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৭:৩১ অপরাহ্ন, ১৫ই মার্চ ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স প্রায় সাড়ে সাত মাস। এ সময়ের মধ্যে নতুন করে জাতীয় পর্যায়ে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের পথচলা শুরু হয়েছে, আবার প্রকাশনা বন্ধও হয়েছে ছয়টি দৈনিক পত্রিকার। অতীতের বিভিন্ন অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এবারের মতো এতো দৈনিক পত্রিকা বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। 

আবার একই ধরনের সরকারের আমলে অল্প সময়ের মধ্যে এতো সংবাদমাধ্যমের পুনরায় পথচলা ও নতুন যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়ার রেকর্ডও আগে নেই। একদিকে নতুনের যাত্রা হচ্ছে, অন্যদিকে বন্ধ হয়েছে পুরনো পত্রিকা। প্রশ্ন আসছে, এতে সাংবাদিক সমাজের মধ্যে বেকারত্ব কি বাড়ছে, না কমছে?

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাড়ে সাত মাসের মধ্যে প্রকাশনা বন্ধ হওয়া পত্রিকাগুলো হলো- ভোরের কাগজ, যায়যায়দিন,  বিজনেস পোস্ট এবং নাঈমুল ইসলাম খানের সম্পাদিত আমাদের নতুন সময়, আমাদের অর্থনীতি ও আওয়ার টাইম। 

আওয়ামী লীগের গত সরকারের বন্ধ করে দেওয়া আলোচিত পত্রিকা আমার দেশ ও দিনকাল এ সময়ের মধ্যে পুনরায় প্রকাশনা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের সরকারের বন্ধ করে দেওয়া চ্যানেল ওয়ান ও দিগন্ত টিভিও সম্প্রচারে আসছে। এ দুটি চ্যানেলের মধ্যে সম্প্রচার প্রস্তুতিতে চ্যানেল ওয়ান কর্তৃপক্ষ বেশ এগিয়ে আছে। এছাড়া স্টার নিউজ নামে সংবাদভিত্তিক একটি নতুন চ্যানেলও সম্প্রচারে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে জোরালোভাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত সাড়ে সাত মাসের মধ্যে ছয়টি দৈনিকের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলেও কোনোটিই সরকারের সমালোচনা করার অভিযোগে প্রশাসন বন্ধ করেনি। পত্রিকাগুলোর মালিকপক্ষই এমন সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের পত্রিকা বন্ধ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। অবশ্য সরকারের কোনো অংশের চাপে পত্রিকাগুলো বন্ধ হওয়ার অভিযোগ সরকারবিরোধী অংশের সাংবাদিক নেতারাও করেননি।

গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাংবাদিক সমাজের মধ্যে ঐক্য না থাকায় কর্তৃপক্ষ নিজের খেয়াল খুশিমতো সহজেই পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে পারছে। ছয়টি দৈনিক পত্রিকার বন্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে অনেকেই বেকার হয়েছেন। আবার নতুন পত্রিকা প্রকাশনায় ও টিভি চ্যানেল সম্প্রচার শুরুর প্রস্তুতি নেওয়ায় অনেকের কাজের জায়গা তৈরি হয়েছে।

তবে বন্ধ হয়ে যাওয়া সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকাশনা টিকিয়ে রাখতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় চাইলে উদ্যোগ নিতে পারত। এ রকম উদাহরণ অনেক দেশে আছে যে, মালিকপক্ষ প্রচারমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সরকারি হস্তক্ষেপে সেগুলোর প্রকাশনা টিকে থাকে।

দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী মনে করেন, ‘সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠনগুলো নিশ্চুপ। একদা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল এটাই মানুষ ভুলে গেছে। বিশেষ করে, মিডিয়াকর্মীরা। অনেক সাংবাদিক চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব। কারো কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই।’

জানা যায়, প্রকাশনার নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে যায়যায়দিন পত্রিকার প্রকাশনা (ডিক্লারেশন) বাতিল করা হয় গত ১২ই মার্চ। পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য যে অনুমোদিত ছাপাখানা রয়েছে, সেখান থেকে ছাপা না হলেও প্রিন্টার্স লাইনে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে মর্মে এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান অভিযোগ করলে ঢাকা জেলা প্রশাসন প্রকাশনা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

নব্বইয়ের দশকে শুরু হওয়া দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ভোরের কাগজ গত ২০শে জানুয়ারি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ‘দখল ঠেকাতে’ কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নেয় বলা হলেও কারা দখল করতে চেয়েছে পত্রিকাটি, কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যায় এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। ১৯৯২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি প্রথম পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।

গত ৩০শে অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তিতে মালিকপক্ষ ‘অর্থনৈতিক সংকট ও নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত পরিস্থিতির কারণ’ উল্লেখ করে ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ‘দ্য বিজনেস পোস্ট’ বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায়।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খানের সম্পাদিত আমাদের নতুন সময়, আমাদের অর্থনীতি ও আওয়ার টাইম পত্রিকার প্রকাশনা অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণার কথা গত বছরের আগস্টে জানানো হয়। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হলে নাঈমুল ইসলাম খান আত্মগোপনে চলে যান। সেখান থেকেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। 

আওয়ামী লীগের সরকারের আমল থেকে দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে দৈনিক দিনকাল পুনরায় প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সরকারি নির্দেশে পত্রিকাটির প্রকাশনা ও বিজ্ঞাপন ছাপানোর বিজ্ঞপ্তি বাতিল হয়।

গত বছরের ২২শে ডিসেম্বর থেকে ‘আমার দেশ’ প্রায় এক দশক পর আবার প্রকাশিত হচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় পত্রিকাটি। আওয়ামী লীগের সরকারের রোষানলে পড়ে পত্রিকাটি ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ২০১০ সালের জুনেও পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় শেখ হাসিনার সরকার।

এইচ.এস/


সাংবাদিক

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন