বুধবার, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৫ দেশে রপ্তানি হচ্ছে কুমিল্লার কচুর লতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, ১৭ই জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার কচু ও কচুর লতি বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এখানকার কচু ও লতি খেতে সুস্বাদু, গলায় ধরে না। ফলে চাহিদা বেশি। চাহিদার জোগান দিতে ১২ মাসই এখানে বাণিজ্যিকভাবে এই দুই সবজি চাষ করেন কৃষকেরা। একবার রোপণ করলে ফলন পাওয়া যায় বছরের আট থেকে নয় মাস। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরা ঝুঁকছেন এই চাষে।

বরুড়ায় আগে ধান চাষ হতো। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কম পাওয়ায় কৃষকেরা ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। ২০১৫ সালের দিক থেকে কচু চাষে মনোযোগ দেন কৃষকেরা। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় তারা ক্রমে বাণিজ্যিকভাবে কচু ও লতি চাষ করতে থাকেন। যতদিন যাচ্ছে, এই সবজি চাষ বাড়ছে। বর্তমানে পুরো উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে তিন হাজারের বেশি কৃষক কচু ও লতি চাষ করছেন।

বরুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালে উপজেলার মোট ১২০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কচুর চাষ হয়েছিল। বর্তমানে ২৬০ হেক্টরের বেশি জমিতে কচু ও লতির চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ থেকে ২৫ টন পর্যন্ত লতি হয়। সময়ভেদে এসব লতি টনপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন কৃষকেরা। মূলত দুই জাতের কচুর চাষ বেশি হয়, লতিরাজ ও বারি পানি কচু-৩। লতিরাজ স্থানীয়দের কাছে লতিকচু নামে পরিচিত।

এই কচু থেকে শুধু লতি সংগ্রহ করা হয়। আর পানি কচু থেকে মোটা সাইজের লতি, মূলসহ কচু সংগ্রহ করা হয়। একবার কচুর চারা রোপণ করলে বছরের ৮ থেকে ৯ মাস প্রতিটি গাছ থেকেই লতি তোলা যায়। সাতদিন পরপরই লতি তুলতে পারেন কৃষকেরা। এই উপজেলায় প্রতিবছর বাণিজ্যিকভাবে ৬ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন লতি উৎপাদন হয়।

উপজেলার আগানগর গ্রামের কৃষক রবিউল হোসেন বলেন, ‘সাত বছর ধইরা ধান বাদ দিয়া কচু ও লতি চাষ করতাছি। তিন মাস আগে ৭ গণ্ডা (৪২ শতাংশ) জমির মইদ্দে কচু লাগাইছি। খরচ হইছে ১৫ হাজার। এহন পর্যন্ত লতি বেচছি ১৮ হাজার টাকার। আরও ৬ মাস বেচন যাইব। পরে খেত চুক্তি কচু বেচমু। এক গণ্ডা ৮-১০ হাজার কইরা। আমরা উন্নত জাতের কচু লাগাই। আমরার কচু-লতি বিদেশেও যায়।’

বারাইপুর গ্রামের কৃষক হারুন উর রশীদ বলেন, ‘বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে প্রতি কেজি লতি বিক্রি করছি। লতি চাষের বড় সুবিধা হলো, সপ্তাহে এক থেকে দুবারও লতি বিক্রি করা যায়। আমি এবার ৪৫ শতাংশ জমিতে চাষ করছি, খরচ গেছে ৪০ হাজার। এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকার বেশি লতি বেচছি। পাইকারেরা বাড়ি আইসা লতি লয়ে যায়।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, খেত থেকে কচু ও লতি তুলে বাড়ি নিয়ে যান কৃষকেরা। সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে আঁটি বাঁধার কাজ করেন নারীরা। উপজেলায় এক হাজারের বেশি নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বরুড়ায় এসে কৃষকের বাড়ি থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যান। মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েক হাত হয়ে এই পণ্য যায় রপ্তানিকারকদের হাতে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বছরে বরুড়ায় উৎপাদিত ১৩৩ থেকে ১৪০ মেট্রিক টন লতি ও কচু বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে যায়। প্রবাসী বাংলাদেশি বেশি থাকেন, এমন দেশগুলোতে কচু ও লতির চাহিদা বেশি। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশি পরিমাণে এই দুই সবজি যায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের নানা দেশেও রপ্তানি হয়। কৃষি বিভাগের হিসাবে বছরে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার কচু ও লতি রপ্তানি হয়।

ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই পণ্য রপ্তানি হয়। তবে চট্টগ্রামের সবজি রপ্তানিকারদের সংগঠন ‘চিটাগং ফ্রেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের’ মাধ্যমে বরুড়ার লতি ও কচু সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে। সংগঠনটির সহসভাপতি মো. ইসমাইল চৌধুরী চিটাগং ফুডস অ্যান্ড ভেজিটেবল নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৯৫ সাল থেকেই বরুড়ার পানি কচু ও লতি রপ্তানি করছি। ২০১১-১২ সালের পর থেকে ব্যাপক হারে রপ্তানি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই বিমানবন্দর হয়ে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে যায় এই দুই পণ্য।’

এইচ এস/ আই.কে.জে

কচুলতি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন