ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিম তীরে অস্কারজয়ী ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা বাসেল আদ্রার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। গতকাল শনিবার (১৩ই সেপ্টেম্বর) এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাসেল নিজেই। তিনি জানান, সেনারা বাড়িতে ঢুকে তার খোঁজ করছিল। এমনকি তার স্ত্রী মোবাইল ফোনেও সেনারা তল্লাশি চালিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপিকে আদরা জানান, শনিবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তিন ভাই আহত হন। তাদের নিয়ে তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে খবর পান ইসরায়েলি বাহিনী তার বাড়িতে ঢুকে তাকে খুঁজছে। তিনি কোথায় আছেন এ বিষয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা। এ সময় বাড়িতে তার ৯ মাস বয়সী শিশু কন্যাও ছিল।
বাসেল জানান, ওই অভিযানে তার চাচাকে আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। অবশ্য কিছুক্ষণ পর আবার তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাসেল আরও জানা, গতকাল রাতে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে পথ অবরোধ করে রেখেছিল ইসরায়েলিরা। এ অবস্থায় বাড়ি ফেরার কোনো উপায়ই ছিল না তার। এ ছাড়া, আটক হওয়ার আতঙ্ক তো ছিলই।
এদিকে, ইসরায়েলের দাবি—অকারণে ফিলিস্তিনিদের হেনস্তা করতে পশ্চিম তীরের ওই গ্রামে অভিযান চালায়নি ইসরায়েলি সেনারা। প্রথমে ফিলিস্তিনিরাই পাথর ছুড়ে ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের আহত করে। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এরপরই সেনারা সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে।
এপির তথ্যমতে, এখনো ওই এলাকায় ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন রয়েছে। জঙ্গি নির্মূলের নামে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বাসেল আদরা পশ্চিম তীরের দক্ষিণাঞ্চল মাসাফের ইয়াত্তায় বড় হয়েছেন। সাংবাদিক আর চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তার কাজের মূল বিষয় ছিল সেখানে চলমান সেটলারদের সহিংসতা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা। চলতি বছর এ বিষয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র নো আদার ল্যান্ডের জন্য অস্কার জেতেন বাসেল।
আগে থেকেই সেটলার বিরোধী কার্যক্রমের জন্য ইসরায়েলি রোষানলে পড়তে হয়েছে বাসেলকে। তবে, অস্কার জয়ের পর আরও বেশি করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের লক্ষ্যবস্তু হতে হচ্ছে বলে এপিকে জানিয়েছেন বাসেল। বিশেষ করে গতকাল শনিবার (১৩ই সেপ্টেম্বর) যে ঘটনা ঘটেছে তাকে তিনি এক কথায় ভয়াবহ বলে অভিহিত করেছেন।
বাসেল আদরা বলেন, ‘শুধু সেটলারদের ভিডিও করার জন্য সেনাদের ধাওয়া খেতে হচ্ছে, বাড়ি এসে তল্লাশি চালাচ্ছে। আমাদের ভয় দেখানো, আতঙ্কিত করাই ওদের মূল লক্ষ্য।’
চলচ্চিত্রের আরেক সহ-পরিচালক ইসরায়েলি নাগরিক ইউভাল আব্রাহাম জানান বাসেলের জন্য খুবই উদ্বিগ্ন তিনি। তিনি বলেন, ‘আজ তার গ্রামে যা ঘটেছে, এই দৃশ্য আমরা বারবারই দেখেছি। ইসরায়েলি সেটলাররা প্রথমে ফিলিস্তিনি গ্রামে নৃশংস হামলা চালায়, আর পরে সেনারা এসে ফিলিস্তিনিদের ওপরই হামলা শুরু করে।’
এ বছরের অস্কারে সেরা প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার পাওয়া ‘নো আদার ল্যান্ড’ চলচ্চিত্রটিতে পশ্চিম তীরের মাসাফের ইয়াত্তা এলাকার মানুষজন কীভাবে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে গ্রাম হারানোর হুমকির মুখে লড়াই চালাচ্ছে, সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। ফিলিস্তিনি নির্মাতা আদরা ও হামদান বল্লাল ছবিটি যৌথভাবে তৈরি করেছেন ইসরায়েলি পরিচালক আব্রাহাম ও র্যাচেল সজরের সঙ্গে।
চলচ্চিত্রটি ২০২৪ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন আসরে একের পর এক পুরস্কার জিতেছে। তবে এ নিয়ে ক্ষোভও দেখা দিয়েছে ইসরায়েল ও তার মিত্র দেশগুলোতে। এমনকি আমেরিকা মায়ামি বিচে একটি সিনেমা হল থেকে ছবিটি প্রদর্শনের কারণে লিজ বাতিল করার প্রস্তাবও উঠেছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েল। ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনিরা তিন অঞ্চলই নিজেদের বলে দাবি করে। এমনকি এই তিন অঞ্চলে ইসরায়েলের যেকোনো ধরনের বসতি বা স্থাপনা তৈরি আন্তর্জাতিক আইনেও অবৈধ। তবুও অঞ্চলগুলোতে দখলদারি বাড়িয়ে চলেছে ইসরায়েল।
জে.এস/
ফিলিস্তিন তল্লাশি ইসরায়েলি সেনা চলচ্চিত্র নির্মাতা বাসেল আদ্রা
খবরটি শেয়ার করুন