রবিবার, ১লা জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সড়কে জরুরি প্রশাসনের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:১২ অপরাহ্ন, ১৯শে মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর সড়কগুলো যেন ‘মগের মল্লুক’। কেউ কাউকে মানছেন না। কীসের ট্রাফিক আর কীসের সিগন্যাল? সড়কে সবাই যেন ‘রাজা’। ট্রাফিক আইন থাকলেও সেটি তোয়াক্কা করছেন না অধিকাংশ যানবাহনের চালক, এমনকি পথচারীরাও। 

ট্রাফিক বিভাগ থেকে অনেক  ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কোনোটিতেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আসছে না। কোথাও কোথাও সিগন্যাল কার্যকর করতে সড়কের মুখে দড়ি বা রশি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখতে হচ্ছে। পারলে একশ্রেণির চালক সেই ব্যারিকেড ভেঙে-ছুটে চলতে চান। সিগন্যালে একটু অপেক্ষা করতে হলে ‘ক্ষুব্ধ’ হয়ে ওঠেন।

প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন রাজধানীবাসীর কাছে নিয়মিত দৃশ্য। মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক নিয়ম না মেনে যত্রযত্র চলছে। এর সঙ্গে প্রধান সড়কে মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত পরিবহন ও সরকারি-বেসরকারি গাড়ির নিয়ম ভাঙার ‘প্রতিযোগিতা’ দেখা যায়।

দিন যত যাচ্ছে, রাজধানীর সড়কের বিশৃঙ্খলা যেন তত বাড়ছে। সড়কে তীব্র যানজটের সঙ্গে বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইনও মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে, ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের মধ্যে অনেকে নিয়ম মানেন না।

যানজটের ঢাকায় একসময় অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যের বাহন ছিল মোটরসাইকেল। যানজট এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সবচেয়ে এটি সবচেয়ে কার্যকর পরিবহন ছিল। এ মোটর সাইকেল যখন ভাড়ায় চলা শুরু হয়, তখন অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অধিকাংশ সড়কে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে, প্রধান সড়কে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। গাড়িচালক, রিকশাচালক, বাইকার পথচারী- প্রায় সবাইকে ট্রাফিক আইন বা নিয়ম ভেঙে চলতে দেখা যায়।

ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপার, বেপরোয়া গতিতে চলাচল, অহেতুক হর্ন বাজানো, যত্রতত্র রাস্তায় যানবাহন দাঁড় করানো, সড়কের মাঝে গণপরিবহনে যাত্রী উঠানো-নামানো, বিশৃঙ্খলভাবে সড়কে গণপরিবহন দাঁড়ানো, ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাত ব্যবহারে পথচারীদের অনীহা এবং উল্টোপথে গাড়ি চলাচলসহ অসংখ্য বিশৃঙ্খলা রাজধানীর নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা শহরের প্রায় সবাইকে দৈনন্দিন কাজে বাসা থেকে বের হতে হয়। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার অভিজ্ঞতা সবার আছে। তাই  সড়কে অরাজকতার বিষয়টি কেউ মেনে নিতে পারছেন না। কারণ, সড়কের বিশৃঙ্খলার কারণে নিদিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না অনেকে।

উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়, মানুষ সাধারণত নিত্যদিনের যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনকে প্রাধান্য দেন। এতে করে সড়কে গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কমে  যায়, যার কারণে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সহজ হয়। ঢাকার সড়কে এর ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এখানে একদিকে যেমন উন্নতমানের গণপরিবহন সেবা গড়ে তোলা যায়নি, অন্যদিকে মোটরসাইকেলসহ  অনুমোদনহীন যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। 

নাগরিক জীবনে স্বস্তির জন্য ও নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। রাজধানীবাসীর বিভিন্ন সড়কে যেভাবে কর্মঘণ্টার অপচয় হয়, এর পেছনে সবচেয়ে দায়ী পরিবহনের বিশৃঙ্খলা।

এক্ষেত্রে পরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থাপনা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি প্রশাসনের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা। পরিবহনের শৃঙ্খলা ফিরলে মানুষের দুর্ভোগ যেমন কমবে, তেমনি সড়কও হয়ে উঠবে নিরাপদ।

এইচ.এস/

সড়ক ব্যবস্থাপনা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন