ছবি: সংগৃহীত
জব্দ করা ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের’ (বিএফআইইউ) নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তার এ কাণ্ডে ‘বিস্মিত’ সংশ্লিষ্টরা। কীভাবে ও কাদের সহায়তায় তা সম্ভব হলো- এ প্রশ্নও আসছে।
গত বছরের ৫ই আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা ডা. ইকবাল এ ঘটনার মাধ্যমে আবার আছেন আলোচনা-সমালোচনায়। জব্দ করা ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলার ঘটনায় তার সঙ্গে আলোচনায় এসেছেন নব্বইয়ের দশকের বাংলা সিনেমার দর্শকনন্দিত নায়িকা শিল্পী। অবশ্য গত বছর থেকে বারবার ডা. এইচ বি এম ইকবালের সঙ্গে নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন তিনি।
যদিও আওয়ামী লীগ প্রায় ১৬ বছর ধরে টানা ক্ষমতায় থাকতে শিল্পীকে কখনো দল ও সরকারের কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। অভিনেতা রিয়াজ, ফেরদৌস, জ্যেতিকা জ্যেতিদের মতো শিল্পী কখনো আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেননি। নিজেকে তিনি একধরনের গুটিয়েই রাখতেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত অক্টোবরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্রী শিল্পীকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ডা. ইকবালের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এর সঙ্গে অভিনেত্রী শিল্পীর নামও আসছে।
জানা গেছে, জব্দ করা ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনে আওয়ামী লীগের নেতা ডা. ইকবালকে সুযোগ করে দিয়েছে তারই মালিকানাধীন প্রিমিয়ার ব্যাংক। তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। জব্দ করা যে হিসাব থেকে ডা. ইকবাল টাকা তুলেছেন, এর মধ্যে অভিনেত্রী শিল্পীর ব্যাংক হিসাবও আছে।
গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর ডা. ইকবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেন। তবে ব্যাংকটি এখনো তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান তার ছেলে ইমরান ইকবাল।
তথ্যমতে, গত বছরের নভেম্বরে ডা. ইকবাল, তার দুই স্ত্রী ও সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে বিএফআইইউ। এরপরও ইকবাল তার নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা ও ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উত্তোলন করেন।
অন্যদিকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি ‘বাংলার কমান্ডো’ চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় শুরু করেছিলেন আঞ্জুমান শিল্পী। এরপর একে একে ৩৫টি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে ‘প্রিয়জন’ সিনেমায় অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান তিনি।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে একটানা কয়েক বছর চলচ্চিত্রে কাজ করেন শিল্পী। একটা সময় ঢালিউডে অশ্লীলতার দাপটে শিল্পী চলচ্চিত্রে অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছি। কারণ, তখন চলচ্চিত্র অশ্লীলতায় ভরে গিয়েছিল। ২০০১ সালের পর আমি চলচ্চিত্র ছেড়ে নাটক করা শুরু করি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত নাটকে কাজ করেছি।’
দুই দশক ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় না করলেও উপস্থাপনা করতেন শিল্পী। অভিনয় করতেন টেলিভিশন নাটকেও। একটা সময় জানা যায়, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী এইচ বি এম ইকবালকে বিয়ে করেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শিল্পীর স্বামী ডা. ইকবালসহ তাদের পরিবারের আরও তিন সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।
বিএফআইইউ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায়। পাশাপাশি তাদের একক নামে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে তার হিসাবও জব্দ করতে বলা হয়।
ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থাকার পাশাপাশি এইচ বি এম ইকবালের বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশানে হোটেল রেনেসাঁ, গুলশান-২-এ হিলটন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ও রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা অবৈধভাবে নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। তিনি, তার স্ত্রী শিল্পী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক।
প্রিমিয়ার ব্যাংক সূত্র জানায়, ইকবাল তার সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে থাকা পুরো টাকা ও ডলারই উত্তোলন করেছেন। গত আগস্টে সরকার বদলের পর তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা দুবাইয়ে চলে যান।
তার পরিবার–ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, দুবাইয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন এইচ বি এম ইকবাল। সেখানে কাচের কারখানা ও তারকা হোটেলে বিনিয়োগ রয়েছে তাদের। তার স্ত্রী শিল্পীও দুবাইয়ে আছেন।
এইচ.এস/