ছবি : সংগৃহীত
মৌসুমি ফল জলপাই খেতে পছন্দ করেন কমবেশি সবাই। টকজাতীয় এ ফল লবণে মিশিয়ে কাঁচা, পাকা বা সেদ্ধ করেও খাওয়া যায়। জলপাইয়ের আচার, জ্যাম, জেলি মুখরোচক খাবার। কিন্তু এ নির্দোষ ফলটিকে কেমিক্যাল প্রয়োগ করে বাজারজাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে আগে খামার করে জলপাই আবাদ হতো না। গৃহস্থের বাড়ির আঙিনায় আর দশটি পুষ্টিকর ফলের সঙ্গেই জলপাই গাছ শোভা পেত। কিন্তু এক দশক আগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারী-১ জাতের জলপাই অবমুক্ত করায় দেশি ফল জলপাই চাষে সাড়া পড়ে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে প্রায় ১৩ হাজার একর জমিতে জলপাইয়ের আবাদ হয়। দেশের বিশেষ ভৌগোলিক এলাকা মধুপুর গড়ের মধুপুর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ঘাটাইল, ভালুকা, সখীপুর, ধনবাড়ীর অংশবিশেষ ও জামালপুর সদর উপজেলার অংশবিশেষে গৃহস্থরা উদ্যানভিত্তিক জলপাই আবাদ করছেন। চাহিদা থাকায় জলপাইয়ের বাজারজাতকরণেও কোনো সমস্যা নেই বলে জানায় ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল কৃষি অফিস।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়-জলপাই স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। বিভিন্ন কোম্পানি জলপাইয়ের আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি তৈরি করছে।
পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গযেণায় বলা হয়, জলপাইয়ে ভিটামিন এ, সি, ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ বহুমুখী ঔষধি গুণ রয়েছে।
আরো পড়ুন : সিলেটে চীনা নাগরিক হত্যায় আরেক চীনার ১০ বছর কারাদণ্ড
মধুপুর উপজেলার আউসনারার সবুজ মিয়া এবং ফুলবাড়িয়া উপজেলার সন্তোষপুরের নজরুল ইসলাম জানান, জলপাই গাছে তেমন রোগবালাই বা পোকামাকড় দেখা যায় না। সার ও সেচ লাগে না। বড় গাছ থেকে ছয়-সাত মণ জলপাই মেলে। কাঠ টেকসই। এজন্য অনেকেই গাছ লাগাচ্ছেন।
শোলাকুড়ির মোফাজ্জল হোসেন জানান, কার্তিক থেকে পৌষ মাসে জলপাই নামে। মুক্তাগাছার গাবতলী ও চেচুয়া, মধুপুরের জলছত্র, মোটেরবাজার ও মধুপুর সদর, ফুলবাড়িয়ার আছিম ও কিশোরগঞ্জ, ঘাটাইলের গারো বাজার, জামালপুর সদরের ছোনটিয়া ও নান্দিনা এবং ধনবাড়ী হাটে প্রচুর জলপাই ওঠে।
স্থানীয় পাইকাররা জলপাই কিনে কাওরান বাজারে চালান দেয়। কিন্তু লোভী পাইকাররা জলপাই কিনে বস্তাবন্দির আগে কেমিক্যাল মেশায়, যাতে সহজে না পাকে। এজন্য ক্ষতিকর হরমোন, শ্যাম্পু বা গুঁড়া সাবান ব্যবহার করে। ডেকচি ভর্তি পানিতে হরমোন, শ্যাম্পু বা গুঁড়া সাবান গুলিয়ে জলপাই চুবানো হয়। এরপর ডেকচিতে নেমে দুই পায়ে জলপাই মাড়াতে থাকে। সাদা ফেনা বালতি উপচিয়ে না পড়া পর্যন্ত দলন কাজ চলে। কেমিক্যাল মেশানো জলপাই বস্তাভর্তি হয়।
জলপাই এমন একটি ফল যার কোনো বাড়তি খোসা নেই। ভোক্তা সরাসরি এটি খায়। বাজারজাতকরণের নামে কেমিক্যাল, সাবান বা শ্যাম্পু যেটাই প্রয়োগ করা হোক না কেন, এতে জলপাই বিষাক্ত হতে বাধ্য।
জলপাইয়ের পাইকার রহিম মিয়া জানান, ক্রেতারা খসখসে বা দাগপড়া জলপাই কিনতে চায় না। এজন্য জলপাই পরিশোধন করা হয়। তবে নিষিদ্ধ বা ক্ষতিকারক কেমিক্যাল দিয়ে নয়, শ্যাম্পু বা গুঁড়া সাবান মিশিয়ে চুরানোর কাজ হয়। এতে জলপাইয়ের রং চকচকে হয়। গ্রাহকের বেশি নজর পড়ে। মূলত আড়তদারের পরামর্শেই জলপাই চুবানো হয়। চুবানো জলপাই সহজে পাকে না এবং বেশি দিন আড়তে সংরক্ষণ করা যায়। আস্তে ধীরে তা বিক্রি করা যায়।
এস/ আই.কে.জে/