বৃহস্পতিবার, ৩রা জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি জাতীয় সংসদ ছাড়া কেউ করতে পারবে না: আমীর খসরু *** তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব দল একমত: আলী রীয়াজ *** পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০০ স্কুলে এ বছরই ই-লার্নিং চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার *** এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর *** প্রথমবার নারী এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ *** অপতথ্য মোকাবিলায় জাতিসংঘকে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার *** সবজি সংরক্ষণে ১০০ হিমাগার নির্মাণ করছে সরকার *** বিপিএলের দল বাছাই আগস্টে, ড্রাফট অক্টোবরে *** দালাই লামার মৃত্যুর পর একজন উত্তরসূরি থাকছেন *** প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে পোস্ট দেওয়া সেই ঊর্মি অবশেষে...

যাত্রা গানের বিকাশ শুরু অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০১:২৭ অপরাহ্ন, ২১শে অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

রবিউল হক

প্রাচীন ও মধ্যযুগের নানা বিবর্তনমূলক স্তর অতিক্রম করে বাংলা নাট্যরীতি বিশেষ আঙ্গিকরূপে যাত্রাগান হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। হাজার বছরের নানা নাট্যরীতিকে একটিমাত্র রূপে বিচার করার প্রবণতার ফলে যাত্রার উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গবেষকদের ধারণা, যাত্রা গানের বিকাশ শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে।

উৎপত্তি ও বিকাশ: যাত্রার উৎপত্তি যেমন বাংলাদেশের থিয়েটার তথা নাটকের আগে, যাত্রার বিকাশও তেমনি থিয়েটারের আগে শুরু হয়েছিল। লোকসংস্কৃতির কতিপয় পাঠগ্রন্থে যাত্রার উদ্ভব সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পাচালি থেকেই যাত্রা গানের উদ্ভব আর যাত্রার সঙ্গে পাচালির পার্থক্য হলো মূল গায়েনের মধ্যে। যাত্রায় একাধিক গায়েন থাকলেও পাচালিতে গায়েন মাত্র একজন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে কৃষ্ণবিষয়ক যাত্রা ‘কালীয়দমন’-এর সাজসজ্জা ও পরিবেশনারীতি সম্পর্কে যে বিবরণ মিলে তাতে দেখা যায়, এতে দান-মান, মাথুর, অক্রুর সংবাদ, উদ্ভব সংবাদ, সুবল সংবাদ প্রভৃতি আখ্যান গৃহীত হয়েছিল।

সাজসজ্জা: যাত্রার শুরুর দিকে অভিনেতাদের সাজসজ্জার উপকরণ ছিল যৎসামান্য। চোগার মতো অনেকটা দেখতে রঙ্গিন কাড়রের ঘেরাটোপ ব্যবহৃত হতো। তবে সামনের অংশে জরির পাড় বসানোর রীতি ছিল।

যাত্রার সুর: কীর্তনাঙ্গের গান যাত্রায় গ্রহণযোগ্যতা পেলেও এতে রামপ্রসাদী সুর, চণ্ডী প্রভৃতির প্রভাব ছিল বলে ধারণা করা হয়।

বাদ্যযন্ত্র: যাত্রা গানে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে খোল, করকাল, মৃদঙ্গ, হারমোনিয়াম, কর্ণেট, ক্লারিনেট, ঝাঝ প্রভৃতির ব্যবহার বেশ প্রচলিত। তবে, বর্তমানে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে কী-বোর্ড, ড্রাম, কঙ্গো, অক্টোপ্যাডের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

পরিবেশনের সময়: বছরের অন্যান্য সময়ে যাত্রার আয়োজন হলেও মূলত শীতকালেই যাত্রা আয়োজনের উপযুক্ত সময়। শীতকালে নিরব ও কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে যাত্রার পরিবেশনা দর্শকদের মনে এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

মঞ্চ বা আসর: সাধারণত খোলা মাঠে গোলাকার বা আয়তাকারে টিনের ঘেরা দিয়ে যাত্রার আসর বসে। মূল মঞ্চ ভূমি সমতল থেকে দুই/তিন ফুট উঁচু হয়ে থাকে। মঞ্চের উপর টিনের চালা বা ছামিয়ানা থাকে।

আলোর ব্যবস্থা: পূর্বে হ্যাজাক বাতির ব্যবহার থাকলেও বর্তমানে বিদ্যুতের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। এমনকি বিকল্প হিসেবে জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়।

পরিবেশনা রীতি: অষ্টাদশ শতকের যাত্রায় সংগীত অপরিহার্য ছিল। তবে সঙ্গে দোহার রাখার রীতি ছিল। দোহারের কাজ ছিল পালার ধুয়া অংশগুলি সমস্বরে গাওয়া এবং পাত্র-পাত্রীর সংলাপের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে পরিবেশনা চালিয়ে যাওয়া।

যাত্রাশিল্পের বর্তমান অবস্থা:
বাংলাদেশের যাত্রাদলের যথাযথ কোনও পরিসংখ্যান নেই। স্বাধীনতার আগে যাত্রাদলের সংখ্যা ছিল ২২টির মতো, এমনকি ২০০১ সালে প্রায় ৮০ টি দল। ২০০২ সালে ৬৪টি দল এবং ২০০৩ সালে ৪০টি যাত্রাদল পালা পরিবেশনে সক্রিয় ছিল। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। এখন যাত্রা গানের কথা শুনলেই মানুষের মনে এর সম্পর্কে খারাপ ধারণা চলে আসে। সমাজে যাত্রা শিল্পীদের খুব একটা ভালো দৃষ্টিতে দেখা হয় না। সামাজিক মূল্য নেই বললেই চলে।

তথ্যসূত্র :
১. তপন বাগচী, বাংলাদেশের যাত্রাগান: জনমাধ্যম ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৭
২. সেলিম আল দীন, মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১৮
৩. তপন বাগচী, লোকসংস্কৃতির কতিপয় পাঠ, গতিধারা, ঢাকা, ২০০৮

 রবিউল হক, লোক গবেষক ও শিল্পী

আই.কে.জে/

যাত্রা গান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন