ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
ঈদের ছুটিতে গণ-পরিবহনের ভাড়া বাড়ার বিষয়টি একটা 'প্রথা' হয়ে দাঁড়িয়েছে! এ সময় যারা পরিবার ও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে নগর ও শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যান, দূরদূরান্তের সেসব যাত্রীকে জিম্মি করে পরিবহনগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে।
ঈদ ঘিরে পরিবহনের চাহিদা বাড়ে। কারণ, লাখ লাখ মানুষ একযোগে প্রিয়জনদের সঙ্গে ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিতে শহরের কর্মস্থল থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যান। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভাড়া বাড়ান অসাধু পরিবহন ব্যবসায়ীরা।
বড় বড় কোম্পানির বাসগুলোর টিকিট ঈদের বেশ কয়েকদিন আগেই বেশি দামে বিক্রি হয়ে যায়। ছোট কোম্পানির বাসগুলোর আসন ফাঁকা থাকলেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে টিকিটপ্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বেশি গুনতে হয়। রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোসহ সর্বত্র একই চিত্র।
সরকারি চাকরিজীবীরা ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটিতে থাকবেন। পোষাক কারখানাসহ বেসরকারি কোম্পানিগুলোতে কোথাও কোথাও ছুটি আরো বেশি।এতোদিন ছুটি থাকায় সঙ্গত কারণেই বিরাট সংখ্যক মানুষ 'দেশের বাড়িতে' ঈদ করতে যাচ্ছেন।
এ সুযোগই পরিবহন কোম্পালিগুলো কাজে লাগিয়েছে।যাত্রী কল্যাণ সমিতি অভিযোগ করেছে, ঈদযাত্রায় 'বকশিশের' নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহন ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট।
শুধু রাজধানী ঢাকা ছাড়তেই দেড় কোটি যাত্রীকে বিশাল অঙ্কের এ টাকা গুনতে হবে। তাদের অভিযোগ, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে আনুমানিক ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাবেন। তাছাড়া ঈদ বাজারসহ নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন গণপরিবহনে বাড়তি ট্রিপ সম্পন্ন হবে।
এবারের ঈদযাত্রায় শুধু ঢাকা ছাড়তেই ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে। সারাদেশের হিসাব করলে চাঁদাবাজির পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
সরকার বাস-লঞ্চ ও বিভিন্ন গণ-পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে চালক, সহকারীর বেতন-ভাতা ও দুই ঈদের বোনাসসহ প্রতিদিনের আদায়কৃত ভাড়ায় মজুরি ধার্য করে রাখলেও দেশের হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বাকি কোনো পরিবহনে তা কার্যকর নেই। এবারের ঈদে প্রায় শতভাগ গণ-পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি যাত্রী নৌপথে গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকার সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরসহ বিভিন্ন ঘাট দিয়ে ২০০টি ছোট-বড় নৌযানে প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবেন।
যাত্রীপ্রতি গড়ে ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত, শ্রেণিভেদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গড়ে যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া আদায় হলে ঈদের আগে এসব যাত্রীর কাছ থেকে ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় হয়।
ঈদকেন্দ্রিক পরিবহনে চাঁদাবাজি বাড়ানো, পরিবহন কোম্পানিগুলোর বাড়তি খরচের জোগান দেওয়া, পরিবহনের মালিক, চালক, হেলপার ও অন্যান্য কর্মচারীদের ঈদ বোনাস তুলে নেওয়াসহ নানা কারণে বিভিন্ন শ্রেণির গণ-পরিবহন ও ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট পরিবহনগুলো একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
যদিও দেশে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইনের ৩৪ ধারার ৪ উপধারাতে অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ ধারা অমান্য করলে একমাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কিন্তু এ ধারার প্রয়োগের কার্যকর উদ্যোগ তেমন নেই। সাধারণ মানুষও এ আইন সম্পর্কে তেমন অবগত নন, যার কারণে অসাধু পরিবহন মালিকদের বেশি টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেন না।
অন্যদিকে সরকার প্রতি বছরই সড়ক ও নৌপথের পরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া বন্ধে মনিটরিং ভিজিল্যান্স টিম গঠন করে। কিন্তু এসব টিমের নাকের ডগা দিয়েই সবকিছু চলে।
এক্ষেত্রে যাত্রীরা অসহায়। এসব বন্ধে গণ-পরিবহনে ডিজিটাল ভাড়া চালু করা, নগদ টাকার লেনদেন বন্ধ করা, সড়ক-মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা চালু করা এবং সর্বোপরি আইনের শাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন