ছবি: সংগৃহীত
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, গণমাধ্যম (ডেইলি স্টার) হিসেবে আমরা প্রতিদিন সারাদেশ থেকে তোলা শত শত ছবি পর্যালোচনা করি এবং এর মধ্যে কিছু অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশ করি। স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশিত অধিকাংশ ছবি খবরের ঘটনাই তুলে ধরে। কিন্তু কিছু ছবি প্রকৃতির সৌন্দর্য এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন মনে করিয়ে দেয় 'জীবন কত সুন্দর'।
তিনি বলেন, অনেক ছবি মানুষের জীবনের মুহূর্তগুলোকে অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তোলে। সেগুলো কখনো আমাদের বিষণ্ন করে, কখনো উচ্ছ্বসিত করে। আবার কিছু ছবি কেবল একটি মুহূর্ত নয়, আরও গভীর কিছু তুলে ধরে। সেটা হতে পারে অসাধারণ কোনো সাফল্য বা বিশাল ব্যর্থতার গল্প—যেগুলো নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো।
তিনি বলেন, গত ১৯শে নভেম্বর আমরা (ডেইলি স্টার) খুলনার ডুমুরিয়ার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ছবি প্রকাশ করেছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলো একসঙ্গে জড়ো করে উঁচু মঞ্চের মতো বানানো হয়েছে। তার ওপর প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী বসে আছে, আর পেছনে শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা বেঞ্চের বদলে কেন এই অস্থায়ী উঁচু মঞ্চে?
তিনি জানান, কারণ, শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে গোড়ালি-সমান পানি। কতদিন ধরে এই পানি আটকে আছে? পাঁচ মাস। কেন? কারণ, পাশের শৈলমারী নদী পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা কবে স্বাভাবিক শ্রেণিকক্ষ পাবে? নদীর পলি অপসারণে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, খুব শিগগির সেটা সম্ভব না। কাজেই নিকট ভবিষ্যতেও এভাবেই তাদের স্কুলজীবন কাটবে। সেখানেও শর্ত থাকে—যদি না তারা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। যদি আক্রান্ত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের জন্য কী ধরনের চিকিৎসাসুবিধা আছে, সেটা কি কল্পনাও করতে পারি?
'অ্যা পিকচার দ্যাট ল্যাস বেয়ার দ্য ডিকে অব আওয়ার এডুকেশন সিস্টেম' (যে ছবি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অবক্ষয় উন্মোচন করে) শিরোনামে লেখা এক উপসম্পাদকীয়তে মাহফুজ আনাম এসব কথা বলেন। তার লেখাটি আজ শুক্রবার (২৮শে নভেম্বর) ডেইলি স্টারের ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।
মাহফুজ আনাম লেখেন, এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের যে প্রচেষ্টা, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, গত পাঁচ মাস ধরে এবং প্রায় প্রতি বর্ষায় এই 'দুর্দশা' তাদের জীবনে স্বাভাবিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ১লা ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষায় এসব শিশুরা কীভাবে ভালো ফলাফল করবে? ডুমুরিয়াসহ আশেপাশের মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্যও এই প্রশ্ন সমানভাবে প্রযোজ্য এবং তাদের পরীক্ষা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এমনকি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, কেবল ডুমুরিয়া উপজেলাতে ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কলেজসহ মোট ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত।
খবরটি শেয়ার করুন