ছবি - সংগৃহীত
রবিউল হক
পঞ্চগড় জেলার সাংস্কৃতিক ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত লোকসংস্কৃতি। লোকসংস্কৃতির নানা উপাদানে পরিপূর্ণ উত্তরের এ জেলা। লোকজ উপাদানের মধ্যে এ জেলার লোকসাহিত্য এবং লোকসংস্কৃতির মধ্যে লোকক্রীড়া অন্যতম স্থান দখল করে আছে। সমাজের অনেক বিষয়ের প্রতিফলিত রূপ লোকক্রীড়া।
পঞ্চগড় জেলায় প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত বিভিন্ন খেলা লক্ষ করা যায়। আদিকাল থেকেই পুতুল শিশুদের বিনোদোনের প্রধান মাধ্যম। লৌকিক আকডুম বাগডুম সম্পর্কে ড. আশুতোষ ভট্টাচার্যের মত হলো-‘আকডুম’ অর্থ সৈন্যদল, ‘বাগডুম’ অর্থ পার্শ্ববর্তী ডোম সৈন্যদল এবং ‘ঘোড়াডুম’ অশ্বারোহী ডোম সৈন্যদল। এককালে ডোম সৈন্যই বাংলার পশ্চিম সীমান্ত রক্ষা করতো। লোকক্রীড়ায় শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণ একে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
লোকজ খেলার মধ্যে পুতুল খেলা, সুপারির খোল টানা খেলা, বাঘ-বকরি, চৌপাতি, চকচ্চাল, হাতত (হাতে) না কছাত, ইচিং বিচিং খেলা, কুতকুত খেলা, গাই বাছুর খেলা, এক-এ-ইঁদুর, কুনঠে মুই কহদি, হাসাহাসি, লুকাটুহু, ছাগলদাড়ি, কিস কিস কিসের পাতা, এলাটিন বেলাটিন, ভেপু খেলা, বুড়ির বেটি কুনঠে যাছি, চোর পুলিশ খেলা, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দধি কাদো, বিয়ারিং খেলা, সাঁতার কাটা, হিন্দু-মুসলমান খেলা, কাঁঠাল খেলা, একশমনি একশমনি, পাইসা খেলা, কড়ি খেলা, এক্কা দোক্কা, মারবেল খেলা, হাঁড়িভাঙ্গা, পাখি খেলা, মাঝি খেলা, কুদ্দাকুদ্দি, কলাগাছে উঠা, সুঁই সুতা, কানামাছি, ছুঁয়াছুঁয়ি খেলা, পিঠিত গুড়িখেলা, ছোট বৌ, বাঘ-শিয়াল খেলা, বৌচি খেলা, ছেলেদের পাখি খেলা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মহররমের মাসে লৌকিক আচার হিসেবে পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন স্থানে ‘লাঠিখেলা’ বা ‘গোল খেলা’ এবং মানত হিসেবে ‘টোকা’ খেলার বেশ প্রচলন রয়েছে।
এ দেশে লোকখেলা সমাজ বিবর্তনের মধ্যদিয়ে বিকাশ লাভ করেছে। সময়ের বিবর্তনে লোকজ অনেক খেলা কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, আবার কোনও কোনও খেলার নব্য প্রচলন ঘটে। আর এভাবে বিলুপ্তি এবং সংযুক্তির মধ্যদিয়ে লোকখেলা এদেশের মানুষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
তথ্যসূত্র :
১. মাযহারুল ইসলাম তরু, চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকসংস্কৃতির পরিচিতি, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৯৯
২. নাজমুল হক, উত্তরবঙ্গের লোকসাহিত্যের নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক সমীক্ষা, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৭
৩. আবদুল জলিল, বাংলাদেশের ফোকলোর চর্চার ইতিবৃত্ত, অনার্য, ঢাকা, ২০০৭
রবিউল হক, লোক গবেষক ও শিল্পী
আই.কে.জে/