ছবি: সংগৃহীত
প্রবাসী শ্রমিকদের ভূমিকা দেশের অর্থনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু সঠিক নজরদারির অভাবে অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, অযাচিত হস্তক্ষেপ ও দুর্বল নীতির কারণে শ্রমবাজার নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনিয়মের কারণে বৈধ অভিবাসনের পরিবর্তে দালাল চক্র সক্রিয়। একশ্রেণির দালাল ভুল ও ভুয়া তথ্য দিয়ে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাচ্ছেন। এ প্রতারণার কারণে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও হচ্ছে।
দেশের শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে প্রায় অদক্ষ, তাদের দক্ষতা উন্নয়নে উদ্যোগের অভাব রয়েছে। অথচ বর্তমান বৈশ্বিক শ্রমবাজারে সাধারণ শ্রমিকের চাহিদা নেই বললেই চলে। সেখানে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেশি। তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা দেশে পর্যাপ্ত নেই। ফলে জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশি কর্মীদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানসহ অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদা থাকলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এ সুযোগ অনেকাংশে কমে গেছে। ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও নেপালের মতো দেশগুলো দ্রুত এসব শ্রমবাজার দখল করছে।
নজরদারির অভাবে শ্রমিকদের বৈধ চ্যানেলে বিদেশ যাওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, যা মানব পাচারেরও অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। সরকারের নির্ধারিত অভিবাসন খরচে বিদেশে যাওয়া সম্ভব হয় না বলে উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেক শ্রমিক বাধ্য হয়ে বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন।
দালালরা তাদের কম খরচে বিদেশে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফাঁদে ফেলেন এবং অনেক সময় বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। মালয়েশিয়া, লিবিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের মতো দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি শ্রমিক পাচারের ঘটনা কর্তৃপক্ষের নজরদারির দুর্বলতারই প্রতিফলন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮৬৯ কর্মী কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গেছেন। তাদের মধ্যে ৯ লাখ ৬৬২ জনই গেছেন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। যা গত বছরের মোট জনশক্তি রপ্তানির ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ, জনশক্তি রপ্তানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এ পাঁচ দেশের ওপর।
সরকারি তথ্য মতে, বাংলাদেশ ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠায়, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি কর্মী মাত্র গুটিকয়েক দেশে যান। বাকি দেশগুলোতে কর্মী পাঠানোর হার খুবই কম। আশঙ্কার বিষয় হলো, প্রধান শ্রমবাজারগুলোতেও কর্মী রপ্তানি কমতে শুরু করেছে।
নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়ায় এরই মধ্যে ইউএইতে কর্মী নিয়োগ কমে গেছে। প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবেও শ্রমিকের চাহিদা কমেছে। মালয়েশিয়ায় যেসব শ্রমিক গিয়েছিলেন, তাদের অনেকে চাকরি না পেয়ে দেশে ফিরেছেন। দেশটির শ্রমবাজার প্রায় বন্ধই বলা যায়। এটি হওয়ার পেছনে সিন্ডিকেটগুলোর অনিয়মই দায়ী।
দেশের অভিবাসন খাত সংকুচিত হয়ে আসছে। এখন শ্রমিকদের জন্য নতুন নতুন শ্রম বাজার খুঁজে বের করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও শ্রম অভিবাসন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশি কর্মীদের অংশগ্রহণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না।
এইচ.এস/