ছবি: সংগৃহীত
আজ ১লা জুলাই (মঙ্গলবার) দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাঙ্গন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয় হাঁটি হাঁটি পা পা করে এর মধ্যে শত বছর অতিক্রম করেছে আগেই। দেশের ক্রান্তিলগ্নে সোচ্চার থাকা এ বিদ্যাপীঠের এবারের প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’
দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিবিড় চর্চার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনবদ্য অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সুদীর্ঘ পথ চলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ- এ তিন সময়কালে গৌরবোজ্জ্বল সাক্ষী হয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০০৮ সালে এক এগারোর সরকার পতনের আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বলা যায়, দেশের প্রায় সব আন্দোলন সংগ্রামের মূল নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যখনই জাতির ক্রান্তিলগ্ন শুরু হয়েছে, তখনই সোচ্চার থেকেছে এ বিদ্যাপীঠ। কীর্তিমান লেখক আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এ দেশটির যা কিছু আশা-ভরসার, তার সবটাই তো ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’
শুরুর দিকে জ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞান ও সামাজিক গবেষণা, পাঠদানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অগ্রণী। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিকদের বড় অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, পড়িয়েছেন। তবে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও পাঠদানের মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়েছে।
শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতির এখন দলীয় লেজুড়বৃত্তির দোষে দুষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর বিভাগ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, বিপরীতে মানের দিক দিয়ে অবনমন ঘটেছে। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এসেছে বহুবার।
আইন অনুযায়ী ‘স্বায়ত্তশাসিত’ হলেও এ বিশ্ববিদ্যালয় মূলত দলীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হয়। উপাচার্য পদে নিয়োগ হয় সরকারের পছন্দে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ হয় সরকারপন্থী শিক্ষক সংগঠনের অনুগতদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনো কখনো জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাকে জোরদার করার তাগিদ খুব গভীরভাবে অনুভব করে। জ্ঞানচর্চার বৈশ্বিক মাত্রায় পৌঁছানোর জন্য আমাদের যে ঘাটতি আছে, সেটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার আগে খুব ভালো মৌলিক ও প্রায়োগিক আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার ফল প্রত্যাশা করাটাও কঠিন বিষয়।
মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সব ক্ষেত্রে যে অবনমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর বাইরে নয়। তবে দেশে এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই এগিয়ে। গবেষণাপত্রের সংখ্যায় ও বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে দেশের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই সবার ওপরে থাকে।
তবে সব ক্ষেত্রে যখন অবনমন, তখন পথ দেখানোর ভূমিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে বলে আমরা মনে করি। দেশের এখন দরকার শিক্ষার মান ও গবেষণায় উন্নতি। সেখানে এগিয়ে যেতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। আমরা মনে করি, উঁচু মানের শিক্ষক-গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন। তবে গবেষণায় জোর দেওয়া জরুরি। শিক্ষার্থীদের পড়ানোর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও বিশ্বকে কী দিচ্ছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
খবরটি শেয়ার করুন